দলের কর্মী খুনের মামলায় আ.লীগ নেতার রিমান্ড মঞ্জুর

নিজ দলের কর্মী খুনের মামলায় চট্টগ্রামের আওয়ামী লীগ নেতা দিদারুল আলম মাসুমকে জিজ্ঞাসাবাদ করতে দুই দিনের রিমান্ড মঞ্জুর করেছেন আদালত। পুলিশ ব্যুরো অব ইনভেস্টিগেশনের (পিবিআই) আবেদনের পরিপ্রেক্ষিতে আজ সোমবার দুপুরে চট্টগ্রাম মহানগর হাকিম আবু সালেম মোহাম্মদ নোমান শুনানি শেষে এ আদেশ দেন।

গতকাল রোববার রাতে ঢাকার বনানী থেকে দিদারুলকে গ্রেপ্তার করে পিবিআই। তিনি নগরের লালখান বাজার ওয়ার্ড আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদক। তিনি চট্টগ্রামের মেয়র ও নগর আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদক আ জ ম নাছির উদ্দীনের অনুসারী হিসেবে পরিচিত।

আদালত সূত্র জানায়, নগর ছাত্রলীগের সহসম্পাদক সুদীপ্ত বিশ্বাস হত্যা মামলায় দিদারুলকে গ্রেপ্তার দেখানোর জন্য আবেদন করেন মামলার তদন্ত কর্মকর্তা ও পিবিআই চট্টগ্রামের পরিদর্শক সন্তোষ কুমার চাকমা। পাশাপাশি ওই মামলায় তাঁকে জিজ্ঞাসাবাদের জন্য ১০ দিনের রিমান্ড আবেদন করেন।
আবেদনে বলা হয়, সুদীপ্ত হত্যা মামলায় তিন আসামির জবানবন্দিতে বড় ভাই নির্দেশদাতা হিসেবে দিদারুলের নাম এসেছে। একজন আসামির জবানবন্দিতে সরাসরি নির্দেশদাতা হিসেবে দিদারুলের নাম এসেছে। ঘটনার দিন ফাঁকা গুলি ছোড়া হয়। খুনের নেপথ্য কারণ, ব্যবহৃত অস্ত্রের উৎস বের করার জন্য আসামি দিদারুলকে জিজ্ঞাসাবাদ করা প্রয়োজন।
সুদীপ্ত বিশ্বাসকে খুনের নির্দেশদাতা ও পরিকল্পনাকারী ‘বড় ভাই’ হিসেবে দিদারুলের নাম উঠে আসে মিজানুর রহমান নামের এক ছাত্রলীগ কর্মীর স্বীকারোক্তিমূলক জবানবন্দিতে। তিনি ১২ জুলাই চট্টগ্রাম মহানগর হাকিম সারোয়ার জাহানের আদালতে এই জবানবন্দি দেন। ২০১৭ সালের ৬ অক্টোবর নগরের সদরঘাট থানার দক্ষিণ নালাপাড়ার বাসা থেকে ডেকে নিয়ে সুদীপ্তকে পিটিয়ে হত্যা করা হয়। তিনি আওয়ামী লীগের প্রয়াত নেতা এ বি এম মহিউদ্দিন চৌধুরীর অনুসারী হিসেবে পরিচিত ছিলেন।

স্বরাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ের জননিরাপত্তা বিভাগের রাজনৈতিক অধিশাখা-৪-এর উপসচিব আবদুল জলিলের গত ৩১ জুলাই সই করা চিঠি চট্টগ্রামে এসে পৌঁছার পর পুলিশ দিদারুলের ব্যবহার করা দুটি অস্ত্র জব্দ করে গত শনিবার। এর আগে এলাকায় চাঁদাবাজি, ভয় দেখানোসহ বৈধ অস্ত্রের অবৈধ ব্যবহার করার অভিযোগে স্থানীয় এক আওয়ামী লীগ নেতার আবেদনের পরিপ্রেক্ষিতে এ নির্দেশনা দেওয়া হয়।

চট্টগ্রাম নগর পুলিশের সহকারী কমিশনার (প্রসিকিউশন) কাজী শাহাবুদ্দিন আহমেদ শুনানিতে অংশ নিয়ে বলেন, সুদীপ্ত হত্যার নেপথ্য কারণ ও অস্ত্রের উৎস বের করার জন্য আসামি দিদারুলকে এ মামলায় গ্রেপ্তার দেখানো হোক। পাশাপাশি তাঁর রিমান্ড মঞ্জুর হোক।
ওই সময় শুনানিতে দিদারুলের পক্ষে প্রায় ২০ জন আইনজীবী অংশ নেন। তাঁরা দাবি করেন, রাজনৈতিকভাবে হয়রানি করতে এ মামলায় ফাঁসানো হয়েছে। যে আসামি দিদারুলের বিরুদ্ধে জবানবন্দি দিয়েছেন, সেই আসামি তাঁর অফিস ভাঙচুর করেছেন। মামলার এজাহারে নাম ছিল না। দেড় বছর পর হঠাৎ করে তাঁর নাম আসা ষড়যন্ত্র। রিমান্ড বাতিল ও গ্রেপ্তার না দেখানো হোক। আওয়ামী লীগ করার কারণে ষড়যন্ত্রের অংশ হিসেবে এসব করা হচ্ছে।

উভয় পক্ষের শুনানি শেষে আদালত দিদারুলকে জিজ্ঞাসাবাদ করতে দুই দিনের রিমান্ড মঞ্জুর করেন।

গতকাল দুপুরে দিদারুলকে ঢাকা থেকে পিবিআইর একটি দল চট্টগ্রাম আদালতে নিয়ে আসে। এর আগে আদালত পাড়ায় নিরাপত্তা জোরদার করা হয়। শুনানি শেষে দিদারুলকে এজলাস থেকে বের করা হলে তাঁর সমর্থকেরা বারান্দায় স্লোগান দিতে থাকেন। কড়া নিরাপত্তার মধ্য দিয়ে পুলিশ দিদারুলকে কারাগারে নিয়ে যায়।

মামলার তদন্ত কর্মকর্তা পিবিআই চট্টগ্রামের পরিদর্শক সন্তোষ কুমার চাকমা বলেন, আদালতের আদেশ পাওয়ার পর দিদারুলকে জিজ্ঞাসাবাদের জন্য কারাগার থেকে পিবিআইতে আনা হবে।