শুধু মেয়েকে নিয়ে বাড়ি ফিরলেন তাঁরা

একমাত্র ছেলে ডেঙ্গুতে মারা গেছে। মেয়েও ছিল ডেঙ্গুতে আক্রান্ত। আজ মেয়েকে নিয়ে হাসপাতাল থেকে বাসায় ফিরেছেন বাবা মমিন সরকার। ছবি: ফেসবুক থেকে
একমাত্র ছেলে ডেঙ্গুতে মারা গেছে। মেয়েও ছিল ডেঙ্গুতে আক্রান্ত। আজ মেয়েকে নিয়ে হাসপাতাল থেকে বাসায় ফিরেছেন বাবা মমিন সরকার। ছবি: ফেসবুক থেকে

মমিন সরকার ও জান্নাত আরা জাহান ডেঙ্গুতে আক্রান্ত ছয় বছর বয়সী মেয়ে মালিহা বিনতে সরকারকে নিয়ে হাসপাতাল থেকে আজ সোমবার বাড়ি ফিরেছেন। রাজধানীর একটি বেসরকারি হাসপাতাল থেকে ছাড়া পেলেও এই দম্পতির মুখে হাসি নেই, নেই কোনো উচ্ছ্বাস। গত শুক্রবার দুপুরে ১১ বছর ৭ মাস বয়সী ছেলে মো. রাইয়ান সরকার ডেঙ্গুতে আক্রান্ত হয়ে ওই হাসপাতালে চিকিৎসাধীন অবস্থায় মারা যায়। তখন মেয়ে হাসপাতালে ভর্তি ছিল।

ছেলের মৃত্যুতে এই দম্পতি শোক করার ফুসরত পাননি। একই ভাবে মেয়ের বাড়ি ফেরা নিয়েও উচ্ছ্বাসের পরিবর্তে এক ধরনের আতঙ্ক কাজ করছে। কেননা, মেয়ে এখনো বুঝতে পারছে না তার ভাই মারা গেছে। বারবার ভাইয়ের কাছে যেতে চাইছে। তাই মেয়ের কথা চিন্তা করে এই দম্পতি নিজের বাসায় না গিয়ে মিরপুরে মালিহার মামার বাসায় যাচ্ছেন। পরে আস্তে ধীরে তাকে বুঝিয়ে বলা হবে ভাইয়ের মৃত্যুর কথা। তবে মালিহা খুব দুর্বল হয়ে গেছে, ভাইয়ের খবর শুনে তার প্রতিক্রিয়া কেমন হবে তাই নিয়েই পরিবারের সদস্যরা চিন্তিত। গত ৩ আগস্ট প্রথম আলো অনলাইনে ‘ছেলেকে দাফন করে হাসপাতালে মেয়ের পাশে তাঁরা’ শীর্ষক প্রতিবেদনটি ছাপা হয়।

আজ দুপুরের পরে মমিন সরকার যখন বাসায় ফিরছিলেন তখন কথা হয় তাঁর সঙ্গে। মমিন সরকার সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যম ফেসবুকে মেয়েকে নিয়ে বাড়ি ফেরার কথা জানিয়ে সবাই তাঁর মেয়ের জন্য দোয়া করেছেন বলে কৃতজ্ঞতা জানিয়েছেন, একই সঙ্গে মৃত ছেলের জন্যও সবার কাছে দোয়া চেয়েছেন। রাইয়ান সরকার রাজধানীর সরকারি মোহাম্মদপুর মডেল স্কুল অ্যান্ড কলেজের ষষ্ঠ শ্রেণির শিক্ষার্থী ছিল। আর মালিহা পড়ছে প্রথম শ্রেণিতে।

গত ২৮ জুলাই রাতে জ্বর শুরু হয়েছিল রাইয়ানের। তার আগেই মালিহার ডেঙ্গু ধরা পড়েছিল।

এসিআই কনজ্যুমার ব্র্যান্ডের জোনাল সেলস ম্যানেজার হিসেবে কর্মরত মমিন সরকার জানালেন, ছেলের চিকিৎসায় খরচ হয়েছে ২ লাখ ৩৪ হাজার টাকা আর মেয়ের চিকিৎসায় খরচ হয়েছে ৪০ হাজার টাকার মতো। এই বাবার আক্ষেপ-আত্মীয়-স্বজন, বন্ধু-বান্ধব মিলে টাকার জোগান দিয়েছিলেন, মেয়ে সুস্থ হয়ে বাড়ি ফিরল, ছেলেটাও যদি বাড়ি ফিরত!