এডিস ফগিংয়ে মরে না, প্রজননক্ষেত্র ধ্বংস করতে হবে

এডিস মশার প্রকোপ কমাতে ঢাকায় মশার উৎপত্তিস্থল ধ্বংস করার প্রতি জোর দিতে ঢাকা উত্তর সিটি করপোরেশনের (ডিএনসিসি) মেয়র আতিকুল ইসলামকে পরামর্শ দিয়েছেন কলকাতার ডেপুটি মেয়র অতীন ঘোষ। ছবি: প্রথম আলো
এডিস মশার প্রকোপ কমাতে ঢাকায় মশার উৎপত্তিস্থল ধ্বংস করার প্রতি জোর দিতে ঢাকা উত্তর সিটি করপোরেশনের (ডিএনসিসি) মেয়র আতিকুল ইসলামকে পরামর্শ দিয়েছেন কলকাতার ডেপুটি মেয়র অতীন ঘোষ। ছবি: প্রথম আলো

শীতকালেও ডেঙ্গুবাহী এডিস মশার ডিম থাকে। এই ডিমে বৃষ্টির পানি পড়লেই লার্ভার জন্ম হয়। ফগিংয়ের মাধ্যমে ধোঁয়া দিয়ে এডিস মশা মারা কার্যকর উপায় নয়। এ জন্য ডেঙ্গুর ভাইরাসবাহী মশা মারতে সারা বছর ধরে কাজ করতে হবে। এডিস মশার প্রকোপ কমাতে ঢাকায় মশার উৎপত্তিস্থল ধ্বংস করার প্রতি জোর দিতে ঢাকা উত্তর সিটি করপোরেশনের (ডিএনসিসি) মেয়র আতিকুল ইসলামকে পরামর্শ দিয়েছেন কলকাতার ডেপুটি মেয়র অতীন ঘোষ।

আজ সোমবার দুপুরে গুলশানের নগর ভবনে ডিএনসিসির মেয়র মো. আতিকুল ইসলাম কলকাতা পৌরসভার মেয়র অতীন ঘোষের সঙ্গে ভিডিও কনফারেন্স করেন। এই ভিডিও কনফারেন্সে এসব পরামর্শ দেন অতীন ঘোষ। এই কনফারেন্সে কলকাতা পৌরসভার চিফ ভেক্টর কন্ট্রোল অফিসার দেবাশীষ বিশ্বাস, প্রধান স্বাস্থ্য কর্মকর্তা মনিরুল ইসলাম, উপপ্রধান স্বাস্থ্য কর্মকর্তা সুব্রত রায় চৌধুরী, স্বাস্থ্যবিষয়ক মুখ্য পরামর্শক তপন মুখার্জী উপস্থিত ছিলেন।

ডেঙ্গু নিয়ন্ত্রণে ‘প্রতিরোধ ও প্রতিকার’ এই দুটি ভাগে কাজ করে কলকাতা পৌরসভা। ২০০৯ সাল থেকে ডেঙ্গু নিয়ন্ত্রণে তিন স্তরবিশিষ্ট তদারক কাজ করা হয়। এ জন্য ওয়ার্ড, অঞ্চল ও কেন্দ্রীয় পর্যায়ে ডেঙ্গু নিয়ন্ত্রণে কাজ করে পৌরসভা।

কনফারেন্সে বলা হয়, কলকাতা পৌরসভা মশকনিধনসহ পরিবেশগত উন্নয়নে অবকাঠামোগত উন্নয়নের কাজ করেছে। ডেঙ্গুর বিরুদ্ধে বিজ্ঞানসম্মতভাবে লড়াই চালানোর ফলে ১০ বছরে এডিস মশা নিয়ন্ত্রণে সফলতা পেয়েছেন বলে জানিয়েছেন কলকাতা পৌরসভার চিফ ভেক্টর কন্ট্রোল অফিসার ডা. দেবাশীষ বিশ্বাস।

ভিডিও কনফারেন্সে ডেঙ্গু প্রতিরোধে সামাজিক আন্দোলন গড়ে তোলা এবং রাজনৈতিক সদিচ্ছার ওপর গুরুত্ব দেন কলকাতার ডেপুটি মেয়র। এ ছাড়া কলকাতায় ডেঙ্গু প্রতিরোধে জনগণকে সচেতন করার পাশাপাশি আইন পরিবর্ধন করে শাস্তি বাড়ানোর ফলে মানুষ আগের চেয়ে সচেতন হয়েছেন বলে জানান। এ ছাড়া পৌরসভার কার্যক্রমের মধ্য দিয়ে জনগণকে সচেতন করা এবং জনগণের মধ্যে আস্থা তৈরি করতে হবে।

কনফারেন্সে বলা হয়, স্যাঁতসেঁতে বা উপযুক্ত পরিবেশে ডেঙ্গুবাহী এডিস মশার ডিম তিন বছর পর্যন্ত বেঁচে থাকতে পারে। এই তিন বছরের মধ্যে ডিমের মধ্যে পানি পড়লে তা বেঁচে ওঠে ও লার্ভা জন্ম হয়। এই ডিমের মধ্যেও ডেঙ্গুর ভাইরাস থাকতে পারে, যা পরবর্তীকালে আবার ডেঙ্গুবাহী এডিস মশায় পরিণত হয়। এ কারণে জানুয়ারি থেকে ডিসেম্বর পর্যন্ত এডিস মশার ডিম ধ্বংস করার কাজ করতে হবে। কলকাতায় ‘মশারে করো উৎসে বিনাশ’ স্লোগানে বাসা-বাড়ি কিংবা উন্মুক্ত জলাশয় যেখানেই এডিস মশার প্রজনন আছে, সেখানেই তা ধ্বংস করা হয়।

ভিডিও কনফারেন্সে ডিএনসিসির মেয়র আতিকুল ইসলাম কলকাতার ডেপুটি মেয়রকে ধন্যবাদ জানান। কলকাতার এই অভিজ্ঞতা ডিএনসিসি কাজে লাগাতে পারবে বলে বলেন। ভবিষ্যতেও প্রয়োজনে এ ধরনের মতবিনিময় সভা অব্যাহত থাকবে বলে জানান মেয়র।

ডিএনসিসি ও কলকাতা পৌরসভার এই ভিডিও কনফারেন্সে স্থানীয় সরকার, পল্লী উন্নয়ন ও সমবায় মন্ত্রণালয়ের সচিব হেলালুদ্দীন আহমদ, প্রধানমন্ত্রীর কার্যালয়ের মহাপরিচালক মো. খলিলুর রহমান, ডিএনসিসির প্রধান নির্বাহী কর্মকর্তা মো. আবদুল হাই, প্রধান স্বাস্থ্য কর্মকর্তা ব্রিগেডিয়ার জেনারেল মোমিনুর রহমান, জাহাঙ্গীরনগর বিশ্ববিদ্যালয়ের প্রাণিবিদ্যা বিভাগের অধ্যাপক কবিরুল বাশার, কীটতত্ত্ববিদ মঞ্জুর আহমেদ চৌধুরী উপস্থিত ছিলেন।