বাজারটি না সরলে সবই পণ্ড

টাঙ্গাইল শহরের স্ট্যান্ড রোডটি সাড়ে ১০ কোটি টাকা ব্যয়ে পুনর্নির্মাণ করা হচ্ছে। কাজ শেষ পর্যায়ে। কিন্তু এ সড়কের আকুরটাকুর বটতলায় বাজারটি স্থানান্তরের উদ্যোগ নেয়নি পৌর কর্তৃপক্ষ।  ছবি: প্রথম আলো
টাঙ্গাইল শহরের স্ট্যান্ড রোডটি সাড়ে ১০ কোটি টাকা ব্যয়ে পুনর্নির্মাণ করা হচ্ছে। কাজ শেষ পর্যায়ে। কিন্তু এ সড়কের আকুরটাকুর বটতলায় বাজারটি স্থানান্তরের উদ্যোগ নেয়নি পৌর কর্তৃপক্ষ। ছবি: প্রথম আলো

সাড়ে ১০ কোটি টাকা ব্যয়ে টাঙ্গাইল শহরের স্ট্যান্ড সড়কের উন্নয়নের কাজ শেষ পর্যায়ে। কিন্তু এ রাস্তার ওপর থেকে বাজার স্থানান্তরের এখনো উদ্যোগ নেয়নি পৌর কর্তৃপক্ষ। ফলে বিপুল অর্থ ব্যয়ে নিয়মিত রাস্তাটির সুফল থেকে বঞ্চিত হওয়ার আশঙ্কা করছেন শহরবাসী।

বেবিস্ট্যান্ড থেকে কলেজপাড়া, আকুরটাকুর পাড়া বটতলা হয়ে সাবালিয়া ময়মনসিংহ সড়কে সিঅ্যান্ডবি মোড় পর্যন্ত ৩ দশমিক ৪ কিলোমিটার সড়কটি ব্রিটিশ আমলে শহরের উত্তর অংশের সঙ্গে দক্ষিণ অংশের যোগাযোগ স্থাপনের জন্য গড়ে ওঠে। সত্তরের দশকের মাঝামাঝিতে আকুরটাকুর বটতলা এলাকায় এ সড়কের ওপর একটি কাঁচাবাজার গড়ে ওঠে। গত চার দশকে রাস্তার ওপর গড়ে ওঠা বাজারটি যেমন সম্প্রসারিত হয়েছে, তেমনি রাস্তাটির গুরুত্বও বেড়েছে। শহরের মেইন রোড ও জেলা সদর রোডে অতিরিক্ত যানবাহনের চাপে প্রায়ই জট লেগে থাকে। গুরুত্বপূর্ণ এ সড়ক দুটির ওপর চাপ কমানোর জন্য স্ট্যান্ড রোডটির উন্নয়নের উদ্যোগ নেয় পৌর কর্তৃপক্ষ।

পৌরসভার প্রকৌশল বিভাগ সূত্র জানায়, ১০ কোটি ৪০ লাখ টাকা ব্যয়ে স্ট্যান্ড রোডটির উন্নয়নের কাজ শুরু করা হয় ২০১৭ সালের ১ সেপ্টেম্বর। রাস্তার দুই পাশে সম্প্রসারণসহ নালা, ফুটপাত নির্মাণও করা হয়েছে। এখন শুধু কার্পেটিংয়ের কাজ বাকি। রাস্তার নির্মাণকাজ শেষ হলেও রাস্তার ওপর বাজার থাকায় এর সুফল পাওয়া যাবে না বলে মনে করছেন পৌরবাসী। কারণ এ রাস্তার আকুরটাকুর তালতলা মোড় থেকে বটতলা মোড় পর্যন্ত প্রায় ৩০০ মিটার এলাকাজুড়ে বাজার বসে। এ জন্য সকাল থেকে দুপুর পর্যন্ত ওই এলাকা দিয়ে যানবাহন চলাচল বন্ধ থাকে। 

গত রোববার বেলা ১১টার দিকে বাজারে গিয়ে দেখা যায়, রাস্তার ওপর শাকসবজি, মাছ, মুরগিসহ বিভিন্ন পণ্য নিয়ে ব্যবসায়ীরা বেচাকেনা করছেন। মাথার ওপর অনেক ব্যবসায়ী শামিয়ানা টানিয়েও নিয়েছেন। দেখে বোঝার উপায় নেই এটি রাস্তা। বটতলা বাজার ব্যবসায়ী সমিতি সূত্র জানায়, রাস্তার ওপর এ বাজার পৌরসভা প্রতিবছর ইজারা দেয়। ইজারাদার নিয়মিত খাজনা আদায় করেন।

এলাকার অধিবাসী আমিনুল ইসলাম জানান, বাজারটি এ এলাকার মানুষের গলার কাঁটা হয়ে দাঁড়িয়েছে। এত টাকা ব্যয়ে রাস্তার উন্নয়ন করা হলো, বাজার না সরালে এ উন্নয়ন কোনো কাজেই আসবে না।

একই এলাকার মাহবুবুর রহমান জানান, রাস্তাটি সুন্দরভাবে উন্নয়ন করা হলো ঠিকই, কিন্তু বাজার স্থানান্তর না করলে এ উন্নয়নের কোনো সুফল মানুষ ভোগ করতে পারবে না।

পৌরসভা সূত্র জানায়, ২০০৮ সালে জেলা সদর লেক পাড়ে (লৌহজং নদের কাছে) বাজারটি স্থানান্তরের উদ্যোগ নেওয়া হয়েছিল। তৎকালীন জেলা প্রশাসক সেখানে ভিত্তিফলকও স্থাপন করেন। কিন্তু অজ্ঞাত কারণে পরবর্তী সময়ে আর স্থানান্তর হয়নি। টাঙ্গাইলের ট্রাফিক পরিদর্শক (টিআই) রফিকুল ইসলাম সরকার জানান, এই রাস্তা থেকে বাজার স্থানান্তর করা হলে মেইন রোড ও জেলা সদর রোডের ওপর চাপ অনেক কমবে। এতে শহরের যানজট অনেক কমে যাবে।

বাংলাদেশ পরিবেশ আইনবিদ সমিতির (বেলা) টাঙ্গাইল অঞ্চলের গবেষণা কর্মকর্তা সোমনাথ লাহিড়ী জানান, একটি রাস্তার ওপর কখনো বাজার থাকতে পারে না। এতে মানুষের মুক্তভাবে চলাচলের অধিকার হনন হচ্ছে। তাই বাজারটি দ্রুত স্থানান্তরের উদ্যোগ নেওয়া প্রয়োজন। 

টাঙ্গাইল পৌরসভার মেয়র জামিলুর রহমান জানান, বাজারটি স্থানান্তরের পরিকল্পনা তাঁদের রয়েছে। লেকের পাড়ে যেখানে স্থানান্তরের প্রস্তাব রয়েছে, সেখানে একটি বস্তি রয়েছে। বাজার স্থানান্তর করতে বস্তিবাসীকে অন্য কোনো জায়গায় পুনর্বাসনের ব্যবস্থা নিতে হবে।