বাঁধ নির্মাণ বন্ধের দাবিতে মানববন্ধন

নবাবগঞ্জে আশুরার বিলে আড়াআড়ি বাঁধ নির্মাণ বন্ধের দাবিতে ১৮টি গ্রামের মানুষ মানববন্ধন করে। গত রোববার বিলের ভেতর।  ছবি: প্রথম আলো
নবাবগঞ্জে আশুরার বিলে আড়াআড়ি বাঁধ নির্মাণ বন্ধের দাবিতে ১৮টি গ্রামের মানুষ মানববন্ধন করে। গত রোববার বিলের ভেতর। ছবি: প্রথম আলো

দিনাজপুরের নবাবগঞ্জ উপজেলায় আশুরার বিলের মধ্য দিয়ে আড়াআড়ি বাঁধ নির্মাণ বন্ধের দাবিতে ১৮টি গ্রামের মানুষ মানববন্ধন করেছেন। গত রোববার বিলের রাস্তায় এ কর্মসূচি পালন করেন তাঁরা। পরে একই দাবিতে জেলা প্রশাসকের বরাবর লিখিত আবেদনপত্র দেন।
মাসখানেক আগে গোলাপগঞ্জ ইউনিয়নের হরিপুর এলাকায় বিলের মাঝ দিয়ে ওই বাঁধের নির্মাণকাজ শুরু হয়েছে। তখনো বিলপাড়ের মানুষ এ কাজ বন্ধের দাবিতে জেলা প্রশাসকের বরাবরে লিখিত আবেদন করেন। এ বিষয়ে ব্যবস্থা নেওয়ার নির্দেশনা দিয়ে জেলা প্রশাসকের কার্যালয় থেকে উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তার (ইউএনও) বরাবার চিঠিও দেওয়া হয়। কিন্তু এরপরও কাজ বন্ধ হয়নি।
জানতে চাইলে নবাবগঞ্জের ইউএনও মো. মশিউর রহমান বলেন, আশুরার বিলে সরকারি জমিতে ক্রস ড্যাম (আড়াআড়ি বাঁধ) নির্মাণ করে মাছ চাষ ও পর্যটনকেন্দ্র গড়ে তোলা হচ্ছে। এ বিষয়ে জেলা প্রশাসকের চিঠি পাওয়া গেছে। তবে এখনো এ বিষয়ে কোনো পদক্ষেপ নেওয়া হয়নি।
মানববন্ধনে বক্তারা বলেন, প্রায় ৫০ বছরেরও বেশি সময় ধরে এই এলাকায় বসবাস করছেন তাঁরা। তাঁদের প্রায় ৯০ শতাংশ কুড়িগ্রাম, গাইবান্ধা, জামালপুর, টাঙ্গাইলসহ বিভিন্ন জেলার ভাঙনকবলিত এলাকা থেকে এসেছেন। বিলের প্রায় ছয় শ একর জমিতে ধান চাষ করে জীবিকা নির্বাহ করেন তাঁরা। এখানে আড়াআড়ি বাঁধ নির্মাণ করা হলে বিলের ভেতর সারা বছরই ৮ থেকে ১০ ফুট পানি জমে থাকবে। এতে ধান চাষ ব্যাহত হবে এবং অনাহারে মরতে হবে বিলপাড়ের প্রায় ১৫ থেকে ২০ হাজার মানুষকে।
গোলাপগঞ্জ ইউনিয়ন পরিষদের (ইউপি) সদস্য মো. রফিকুল ইসলাম বলেন, ‘এই বিলের ওপরেই আমাদের জীবিকা নির্ভরশীল। এখানকার কোনো মানুষকে এক কেজি চাল কিনে ভাত খেতে হয় না। সেই বিলের মধ্যে ক্রস ড্যাম (আড়াআড়ি বাঁধ) করে সরকার মাছ চাষ করার পরিকল্পনা নিয়েছে। আমরা যেকোনো মূল্যে এই ড্যাম নির্মাণের কাজ বন্ধ করার অনুরোধ জানাই।’
প্রায় ১৯ লাখ টাকা ব্যয়ে বৃহত্তর বগুড়া ও দিনাজপুর জেলা ক্ষুদ্র সেচ উন্নয়ন প্রকল্পের অধীনে বাংলাদেশ কৃষি উন্নয়ন করপোরেশন (বিএডিসি) ওই প্রকল্প বাস্তবায়নের কাজ শুরু করেছে। গত ১২ জুন বাঁধের নির্মাণকাজ উদ্বোধন করেন দিনাজপুর-৬ আসনের সাংসদ শিবলী সাদিক।
জানতে চাইলে পানি উন্নয়ন বোর্ডের (পাউবো) দিনাজপুর কার্যালয়ের নির্বাহী প্রকৌশলী মো. ফইজুর রহমান বলেন, জলাশয়ে ক্রস ড্যাম নির্মাণের নিয়ম নেই। যদি এ ধরনের প্রকল্প গ্রহণ করতেই হয়, সে ক্ষেত্রে সংশ্লিষ্ট এলাকার পরিবেশ-প্রতিবেশ বিবেচনা করে সম্ভাব্যতা যাচাই করতে হবে। আশুরার বিলে ক্রস ড্যামের কাজ শুরুর বিষয়ে তিনি কিছু জানেন না।
বিএডিসির বগুড়া অঞ্চলের প্রকল্প পরিচালক এ এস এম শহীদুল আলম মুঠোফোনে বলেন, ১৮ লাখ ৬৪ হাজার টাকা ব্যয়ে স্থানীয় সাংসদ ও ইউএনওর অনুরোধে তাঁরা ক্রস ড্যাম নির্মাণের কাজটি হাতে নিয়েছেন। তবে এ ক্ষেত্রে পাউবোর সঙ্গে যোগাযোগ করা হয়নি। সম্ভাব্যতা যাচাইয়ের কাজও তাঁরা করেননি।