ব্রাহ্মণবাড়িয়ায় দপ্তরিকে মারধর, ইয়াবা দিয়ে ফাঁসানোর চেষ্টা

মো. উবায়দুল্লাহ
মো. উবায়দুল্লাহ

ব্রাহ্মণবাড়িয়া সদর থানার উপপরিদর্শক (এসআই) জামিরুল ইসলামের বিরুদ্ধে সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়ের এক দপ্তরি কাম নৈশপ্রহরীর পকেটে ইয়াবা বড়ি ঢুকিয়ে ফাঁসানোর চেষ্টার অভিযোগ পাওয়া গেছে। তা ছাড়া হাতকড়া পরিয়ে পিটিয়ে তাঁর এক কানের পর্দা ফাটিয়ে দেওয়ারও অভিযোগ পাওয়া গেছে।  এ ঘটনায় গতকাল সোমবার পুলিশ সুপারের কাছে লিখিত অভিযোগ দিয়েছেন মো. উবায়দুল্লাহ নামের ওই নৈশপ্রহরী। তাঁর বাড়ি সদর উপজেলার সাদেকপুর ইউনিয়নের খাকচাইল গ্রামে। তিনি খাকচাইল সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়ের দপ্তরি কাম নৈশপ্রহরী।

লিখিত অভিযোগ ও স্থানীয় সূত্রে জানা গেছে, গত শনিবার রাত ১০টার দিকে এসআই জামিরুলসহ সদর থানার ছয়জন পুলিশ সদস্য খাকচাইল সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়ে যান। সেখানে তাঁরা উবায়দুল্লাহর কক্ষের দরজায় গিয়ে তাঁকে ডাক দেন। দরজা খোলার পর বশির নামের কেউ এখানে আছেন কি না, উবায়দুল্লাহর কাছে জানতে চান। এখানে এই নামের কেউ নেই বলার পর পুলিশ উবায়দুল্লাহর পকেটে হাত দেয়। কিছু না পেয়ে আবার বাচ্চু নামের কেউ আছেন কি না, জানতে চায় পুলিশ। এরপর উবায়দুল্লাহকে সব শ্রেণিকক্ষের দরজা খুলতে বলা হয়। একপর্যায়ে এসআই জামিরুলসহ অন্য পুলিশ সদস্যরা উবায়দুল্লাহকে নিয়ে তাঁর থাকার কক্ষে যান। সেখানে গিয়ে তাঁর পকেট তল্লাশি করার নামে কয়েকটি ইয়াবা বড়ি ঢুকিয়ে দেন। এরপর এসআই জামিরুল তাঁকে বেদম পেটাতে থাকেন। এ সময় উবায়দুল্লাহর দুই কানে এবং মাথায় এলোপাতাড়ি কিল–ঘুষি মারেন পুলিশের অন্য সদস্যরা। খবর পেয়ে স্থানীয় ইউনিয়ন পরিষদের (ইউপি) সদস্য আবু তালেব ও উবায়দুল্লাহর বাবা নুরুল ইসলাম ঘটনাস্থলে যান। নুরুল ইসলামকে আটক করে সাদা কাগজে জোর করে স্বাক্ষর নেন এসআই জামিরুল। পরে ২ হাজার ৫০০ টাকা নিয়ে উবায়দুল্লাহকে ছেড়ে দেন। এ ঘটনা সম্পর্কে কাউকে জানালে মাদক মামলায় ফাঁসানোরও হুমকি দিয়ে আসেন এসআই জামিরুল। ঘটনার পরদিন রোববার উবায়দুল্লাহ প্রথমে জেলা সদর হাসপাতাল ও পরে একটি বেসরকারি হাসপাতালে চিকিৎসা নেন। 

সদর হাসপাতালের নাক, কান ও গলা বিভাগের বিশেষজ্ঞ চিকিৎসক এ বি এম মুছা প্রথম আলোকে বলেন, তাঁর (উবায়দুল্লাহ) কানের আঘাত গুরুতর। কানের পর্দা ফেটে গেছে। 

জানতে চাইলে উবায়দুল্লাহ বলেন, ‘রাতে দরজা খোলার পর পুলিশ তল্লাশি চালায়। কিছু না পেয়ে স্কুলের অন্য কক্ষ খুলতে বলেন এসআই জামিরুল। কিন্তু সেখানেও কিছু না পেয়ে পকেট চেক করতে গিয়ে কয়েকটি ইয়াবা বড়ি আমার পকেটে ঢুকিয়ে দেন। পরে এসআই জামিরুল বলেন, তুই ইয়াবা বিক্রি করস। এরপর হাতকড়া পরাইয়া আমারে মারধর শুরু করেন। পরে ইউপি সদস্যকে ডাকতে বলেন তিনি। খবর পেয়ে আমার বাবাও ঘটনাস্থলে আসেন। পরে আড়াই হাজার টাকা দিলে আমাকে ছেড়ে দেন। আমি এখন বাম কানে কিছুই শুনি না। আর ডান কানে একটু একটু শুনি।’ 

বিদ্যালয়ের প্রধান শিক্ষক শাহীনা আখতার বলেন, উবায়দুল্লাহ ছেলে হিসেবে অনেক ভালো। দরিদ্র পরিবারের ছেলে। বিষয়টি উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা (ইউএনও) ও উপজেলা প্রাথমিক শিক্ষা কর্মকর্তাকে জানানো হয়েছে। পরে পুলিশ সুপার বরাবর অভিযোগ জমা দেওয়া হয়েছে। 

উপজেলা প্রাথমিক শিক্ষা কর্মকর্তা আবদুস সামাদ আকন্দ বলেন, ‘যে কাউকে পুলিশ গ্রেপ্তার করতে পারে। কিন্তু কাউকে এভাবে অপরাধী বানানোটা খুবই দুঃখজনক। আমার জানামতে ছেলেটা (উবায়দুল্লাহ) অনেক ভালো।’ 

একাধিকবার যোগাযোগের চেষ্টা করলেও সদর থানার এসআই জামিরুল ইসলাম মুঠোফোন ধরেননি। তবে তিনি গণমাধ্যমকর্মীদের বলেন, এসব অভিযোগ মিথ্যা। 

অতিরিক্ত পুলিশ সুপার (প্রশাসন ও অপরাধ) আলমগীর হোসেন বলেন, অতিরিক্ত পুলিশ সুপার (সদর সার্কেল) রেজাউল কবীর বিষয়টি তদন্ত করছেন। তিনি কয়েকজনের সাক্ষ্যও নিয়েছেন। তদন্ত করে ঘটনার সত্যতা পাওয়া গেলে ওই পুলিশ কর্মকর্তার বিরুদ্ধে প্রয়োজনীয় ব্যবস্থা নেওয়া হবে।