ডেঙ্গুতে এক দিনে সর্বোচ্চ আক্রান্ত, সর্বোচ্চ মৃত্যু

সারা দেশে ডেঙ্গুতে আক্রান্তের সংখ্যা যেমন বাড়ছে, তেমনি মৃত্যুও বেড়েছে। গত রোববার সন্ধ্যা থেকে গতকাল সোমবার সন্ধ্যা পর্যন্ত এক দিনের হিসাবে সর্বোচ্চ ৭ জনের মৃত্যুর খবর পাওয়া গেছে। এর মধ্যে ঢাকায় মারা গেছে ৫ জন ও ঢাকার বাইরে ২ জন। সরকারি হিসাবে গত ২৪ ঘণ্টায় নতুন করে আক্রান্ত হয়ে হাসপাতালে ভর্তি হয়েছে ২ হাজার ৬৫ জন, যা এ বছরের মধ্যে সর্বোচ্চ।

স্বাস্থ্য অধিদপ্তরের হেলথ ইমার্জেন্সি অপারেশনস সেন্টার ও কন্ট্রোল রুমের তথ্য অনুসারে, এক সপ্তাহ ধরে ঢাকার চেয়ে ঢাকার বাইরে ডেঙ্গু জ্বরে আক্রান্তের সংখ্যা বেশি হারে বাড়ছে। ঢাকার বাইরে গত ৩০ জুলাই ভর্তি হয় ৫৩৬ জন আর গতকাল তা ৬৯ শতাংশ বেড়ে দাঁড়িয়েছে ৯০৬ জনে। এক সপ্তাহের ব্যবধানে ঢাকার বাইরে রোগী বেড়েছে ৩৭০ জন। একই সময়ে ঢাকায় রোগী বেড়েছে ১২২ জন। ঢাকায় ১২ শতাংশ বেড়ে ১০৩৭ থেকে নতুন ভর্তি দাঁড়িয়েছে ১১৫৯ জনে।

সরকারি–বেসরকারি হাসপাতালের দায়িত্বশীল কর্মকর্তা ও রোগীর পরিবারের সঙ্গে কথা বলে প্রথম আলো জেনেছে, এ পর্যন্ত ডেঙ্গু জ্বরে আক্রান্ত হয়ে মারা গেছে অন্তত ৯৪ জন। আর সরকারি হিসাবে ১৮ জনের মৃত্যু হয়েছে। গতকাল পর্যন্ত আক্রান্ত হয়ে হাসপাতালে মোট ভর্তির সংখ্যা ২৭ হাজার ৪৩৭ জন। ঈদের ছুটিতে অনেকেই ঢাকা থেকে গ্রামের বাড়িতে ফিরছে। তাই ঢাকার বাইরে আক্রান্তের সংখ্যা আরও বাড়তে পারে বলে ধারণা করা হচ্ছে।

গত রোববার ঢাকা মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে মারা গেছে দুজন। ১৪ বছর বয়সী ভোলার মো. হাসানের মৃত্যু হয় রোববার রাতে। সে ঢাকার খিলগাঁওয়ে থাকত। একই দিন সন্ধ্যায় মারা যান ২৩ বছর বয়সী দীপালি আক্তার। ঢাকা মেডিকেল কলেজ হাসপাতালের সহকারী পরিচালক (প্রশাসন) মো. নাসির উদ্দিন দুজনের ডেঙ্গুতে মৃত্যুর খবর প্রথম আলোকে নিশ্চিত করেছেন।

>এক সপ্তাহ ধরে ঢাকার বাইরে ডেঙ্গু আক্রান্তের সংখ্যা বেশি
এক সপ্তাহের ব্যবধানে ঢাকায় ভর্তি বেড়েছে ১২ %, বাইরে ৬৯%
এ পর্যন্ত ডেঙ্গু জ্বরে আক্রান্ত হয়ে মারা গেছে অন্তত ৯৪ জন
২৪ ঘণ্টায় ডেঙ্গুতে ৭ জনের মৃত্যু, নতুন ভর্তি ২০৬৫ জন


রোববার রাত ৯টার দিকে ঢাকার মুগদা মেডিকেল হাসপাতালে চিকিৎসাধীন অবস্থায় মারা যান ইডেন মহিলা কলেজের ছাত্রী ইভা ইক্তার (২৮)। তাঁর বাড়ি মুন্সিগঞ্জের টঙ্গিবাড়ী উপজেলার হাসাইল বানারী ইউনিয়নে। ইভার ফুফাতো ভাই মো. ফাহিম শেখ প্রথম আলোকে বলেন, জ্বর নিয়ে বুধবার ওই হাসপাতালে ভর্তি করা হয় ইভাকে। ডেঙ্গুতে তাঁর মৃত্যু হয়েছে।

৭ বছরের শিশু ইফরিত হোসেন মারা গেছে রোববার রাত আটটার দিকে। জ্বর নিয়ে ২৯ জুলাই শিশুটিকে ভর্তি করা হয় রাজধানীর ইউনিভার্সাল মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে। ডেঙ্গু শকড সিনড্রোমের কারণে তার জটিলতা বাড়তে থাকায় শিশু নিবিড় পরিচর্যা কেন্দ্রে (পিআইসিইউ) রাখা হয়। সেখানে তার মৃত্যু হয় বলে নিশ্চিত করেছেন হাসপাতালের ব্যবস্থাপনা পরিচালক আশীষ কুমার চক্রবর্তী।

অন্তঃসত্ত্বা নারীর মৃত্যু

সোমবার ভোরে ঢাকার শহীদ সোহরাওয়ার্দী মেডিকেলে চিকিৎসাধীন অবস্থায় মারা যান শারমিন আরা। তিনি ৬ মাসের অন্তঃসত্ত্বা ছিলেন। তাঁর বাড়ি জয়পুরহাটে। ঢাকার আবহাওয়াবিদ নাজমুল হোসেনের স্ত্রী শারমিন। 

শারমিনের ভগ্নিপতি আনিছুর রহমান জানান, শারমিন গত শুক্রবার জ্বর নিয়ে জয়পুরহাট জেলা আধুনিক হাসপাতালে ভর্তি হন। পরীক্ষায় তাঁর ডেঙ্গু ধরা পড়ে। রক্তের প্লাটিলেট না বাড়ায় উন্নত চিকিৎসার জন্য শারমিনকে ঢাকায় আনা হয়।

শারমিনের স্বামী নাজমুল হোসেন চাকরির সূত্রে ঢাকায় থাকেন। বর্তমানে তিনি দাপ্তরিক কাজে দক্ষিণ কোরিয়ায় রয়েছেন। তাঁর বাড়ি নওগাঁ জেলার বদলগাছি উপজেলায়।

ঢাকার বাইরে আরও দুজনের মৃত্যু

খুলনায় বেসরকারি সিটি মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে চিকিৎসাধীন অবস্থায় সোমবার সকালে মারা গেছেন খাদিজা বেগম (৪০)। হাসপাতালের ব্যবস্থাপক (প্রশাসন ও মানবসম্পদ) হামিদুল ইসলাম খান প্রথম আলোকে বলেন, খাদিজা ডেঙ্গু শকড সিনড্রোম নিয়ে ভর্তি হয়েছিলেন। গতকাল সকাল পৌনে আটটার দিকে তিনি মারা যান। 

এ ছাড়া মাদারীপুরের শিবচর উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সে রোববার রাত সাড়ে ১২টার দিকে মারা যান রিপন হাওলাদার (৩২)। রিপনের বাবা ববি হাওলাদার বলেন, চিকিৎসকেরা জ্বর ও অন্য উপসর্গ দেখে বলেছেন, রিপন ডেঙ্গুতে আক্রান্ত হতে পারে। 

এর আগে গত শনিবার কুমিল্লা থেকে ঢাকায় নেওয়ার পথে মারা যান কুমিল্লার আদর্শ সদর উপজেলার কাটানিসার গ্রামের আনোয়ার হোসেন (৪৩)। হাসপাতালের চিকিৎসকেরা জানিয়েছেন, ডেঙ্গুতে আক্রান্ত হয়ে আনোয়ার কুমিল্লা মেডিকেল সেন্টারে ভর্তি হয়েছিলেন। সব মিলে গত এক সপ্তাহে ঢাকার বাইরে মারা গেছে অন্তত ১২ জন।