মশা মারতে নিজেরাই কিনছেন ফগার মেশিন

ফগার মেশিন
ফগার মেশিন

ডেঙ্গু পরিস্থিতিতে উদ্বিগ্ন নগরবাসী। এ অবস্থায় সিটি করপোরেশনের মশকনিধন কার্যক্রমে ‘আস্থাহীন’ মানুষ মশা মারতে নিজেরাই কিনছেন ফগার মেশিন। চাহিদা বেড়ে যাওয়ায় এই যন্ত্রের দামও বাড়িয়ে দিয়েছেন ব্যবসায়ীরা।

উড়ন্ত মশা মারতে দীর্ঘদিন ধরে ফগার যন্ত্র ব্যবহার করে আসছে ঢাকার দুই সিটি করপোরেশন। তারা যে যন্ত্র ব্যবহার করে, সেগুলো পুরান ঢাকার নবাবপুরেও পাওয়া যায়। পাশাপাশি মিনি ফগারও পাওয়া যায় সেখানে। ফগারের পাশাপাশি মশা মারার ওষুধও বিক্রি করছেন নবাবপুরের ব্যবসায়ীরা।

গতকাল নবাবপুরের হক ইলেকট্রনিক মার্কেটের নিচতলার সিটি কর্নার নামের দোকানে মাত্র দুটি মিনি ফগার যন্ত্র দেখা যায়। দোকানের কর্মচারী শাফিন আহমেদ প্রথম আলোকে বলেন, ক্রেতাদের চাহিদা দেখে তাঁরা এবারই প্রথম দোকানে ফগার মেশিন তুলেছেন। তাঁরা এনেছেন ২০টি। এর মধ্যে ১৮টিই বিক্রি হয়ে গেছে। তিনি জানান, এবার মিনি ফগার যন্ত্রের চাহিদা বেশি।

শাফিন আহমেদ জানান, তাঁরা কোরিয়া থেকে মিনি ফগার আমদানি করেছেন। মিনি ফগারের ওষুধের ধারণক্ষমতা দুই লিটার। গত বছর যন্ত্রটির দাম ছিল ২০ হাজার টাকা। এবার বিক্রি করছেন ৩০ হাজার টাকা করে। দাম বেড়ে যাওয়ার কারণ হিসেবে তিনি বলেন, চাহিদা বেড়ে যাওয়ায় সংকট দেখা দিয়েছে। এ কারণে দাম বেড়েছে।

নবাপুরের ব্যবসায়ীরা জানান, রাজধানীর বিভিন্ন এলাকার লোকজন তাঁদের ক্রেতা। এর মধ্যে গুলশান, উত্তরা, বনানীর লোকজন বেশি ফগার কিনছেন।

একই এলাকার হোসেন মার্কেটের জে এম লন মোয়ার হার্ডওয়্যার স্টোরে গিয়ে দেখা গেল, পুরোনো দুটি ফগার যন্ত্র মেরামতের কাজ চলছে। দোকান মালিক মজনু মিয়া প্রথম আলোকে বলেন, এ বছর তিনি ৩০টি ফগার এনেছিলেন। সব কটি বিক্রি হয়ে গেছে। তাঁর কাছে দুটি বিকল যন্ত্র ছিল। সেগুলো বিক্রির জন্য মেরামত করছেন। তিনি জানান, গত বছর তাঁর মাত্র পাঁচটি ফগার বিক্রি হয়েছিল।

>ঢাকায় ফগারের চাহিদা বেড়ে গেছে
দাম বাড়িয়ে দিয়েছেন ব্যবসায়ীরা
কোনো ক্ষেত্রে দ্বিগুণ দামে বিক্রি


মজনু মিয়া জানান, সিটি করপোরেশন যে ধরনের ফগার ব্যবহার করে, তিনি সেই ধরনের যন্ত্র বিক্রি করেন। তাঁরা ৪০ থেকে ৪৫ হাজার টাকায় ফগার কিনেছেন।

নবাবপুরের লাকি এন্টারপ্রাইজ নামের একটি দোকান বিক্রি করেছে ৪০টি দোকান। গত বছর ওই দোকানে বিক্রি হয়েছে ১৫টি।

ফগার যন্ত্রের পাশাপাশি ওষুধেরও চাহিদা বেড়েছে জানিয়ে ব্যবসায়ীরা জানান, ক্রেতাদের কেউ ২০ লিটার চাইলে তাকে ৫ লিটার দিতে হচ্ছে।

ব্যবসায়ীরা জানান, এ জে এন্টারপ্রাইজ ও মরগ্যান ইন্টারন্যাশনালসহ নবাবপুরের কয়েকটি প্রতিষ্ঠান ফগার আমদানি করে। এ বছর প্রতিষ্ঠানগুলো ৩৫০ থেকে ৪০০ ফগার আমদানি করেছে। যার সবই বিক্রি হয়ে গেছে।

মরগ্যান ইন্টারন্যাশনালের কর্মকর্তা তাপস বরণ চক্রবর্তী প্রথম আলোকে জানান, তাঁদের আমদানি করা সব যন্ত্র বিক্রি হয়ে গেছে। খুচরা বিক্রেতাদের কাছে তাঁরা বড় ফগার যন্ত্র ৩৯ থেকে ৪১ হাজার টাকায় বিক্রি করেছেন। খুচরা বিক্রেতারা এখন সেটি ৭০ হাজার টাকা থেকে ১ লাখ টাকায় বিক্রি করছেন।

গতকাল নবাবপুরে কথা হয় ফগার যন্ত্র কিনতে আসা কয়েকজনের সঙ্গে। তাঁদের মধ্যে একজন প্রথম আলোকে বলেন, গুলশান-২ এলাকায় তাঁর পরিচিত একজন মিনি ফগার যন্ত্র কিনেছেন। তা দেখে তিনিও কিনতে এসেছেন।

বিমানবন্দর এলাকার বাসিন্দা খলিলুর রহমান বলেন, সিটি করপোরেশন দীর্ঘদিন ফগিং করেনি। এখন মাঝেমধ্যে ফগিং করা হয়। তবে মশা মরছে না। এ অবস্থায় সিটি করপোরেশনের ওপর তাঁর আস্থা নেই। তিনি জানান, তাঁর ছয়তলা বাড়ির ভাড়াটেদের অনুরোধে ফগার কিনতে নবাবপুরে এসেছেন। তবে যন্ত্রের দাম বেড়ে যাওয়ায় তিনি ক্ষোভ প্রকাশ করে বলেন, ‘একটা পণ্যের চাহিদা বাড়লেই দাম বাড়িয়ে দেওয়ার প্রবণতা খুবই দুঃখজনক।’