নবগঙ্গার ভাঙনে বসতবাড়ি, ফসলি জমি বিলীন

নবগঙ্গার ভাঙনের হুমকিতে কালিয়ার শুক্তগ্রাম বাজার।  ছবি: প্রথম আলো
নবগঙ্গার ভাঙনের হুমকিতে কালিয়ার শুক্তগ্রাম বাজার। ছবি: প্রথম আলো

গত বর্ষায় নবগঙ্গা নদী গ্রাস করেছে প্রায় দেড় শ বসতবাড়ি, অন্তত ৭০ একর ফসলি জমি। এতে দুটি জনপদের অস্তিত্ব বিলীন হয়েছে। হুমকির মুখে পড়েছে তিন শ বছরের পুরোনো শুক্তগ্রাম বাজার। যেকোনো মুহূর্তে তা নদীগর্ভে বিলীন হওয়ার আশঙ্কা রয়েছে। 

গত কয়েক দশকে শুক্তগ্রাম গ্রামটির মানুষের ফসলি মাঠ ‘শুক্তগ্রাম বিল’ নদী গ্রাস করেছে। গত বর্ষায় ভাঙনের তীব্রতা ছিল বেশি। চলতি বর্ষায় পানি কমার সময়ে ভাঙনের তীব্রতার আশঙ্কা করছেন এলাকাবাসী।নড়াইলের কালিয়া উপজেলার বাবরাহাচলা ইউনিয়নের গ্রাম শুক্তগ্রাম। সদরের উত্তরে নবগঙ্গা নদী। নদীর অপর পারে গ্রামটির অবস্থান। প্রবীণদের ভাষ্য, গ্রামটি প্রাচীন জনপদ। অন্তত তিন শ বছর আগে শুক্তগ্রাম বাজারটি গড়ে ওঠে। ঐতিহ্যবাহী সেই বাজার নদীগর্ভে বিলীন হওয়ার আশঙ্কা যেকোনো মুহূর্তে। 

সরেজমিন দেখা গেছে, বাজারের সঙ্গে লাগোয়া নবগঙ্গা নদী। বাজার এলাকায় ভাঙনরোধে বালুর বস্তা দেওয়া আছে। জায়গায় জায়গায় পানির তোড়ে ওই বস্তা নদীতে চলে গেছে। সেখানে পানি আছড়ে পড়ছে। ওই বস্তা দেওয়ার বাইরের এলাকায় ভাঙন দেখা দিয়েছে। 

স্থানীয় লোকজন জানান, গত বর্ষার মধ্যের দিকে ওই বালুর বস্তা ফেলে ভাঙনরোধের চেষ্টা করা হয়। এর আগেই বর্ষার শুরুতে শুক্তগ্রাম বাজারকেন্দ্রিক গড়ে ওঠা বারোয়ারিপাড়া ও চরপাড়া জনপদ দুটি নদীতে বিলীন হয়। গত বর্ষায় ওই দুটি পাড়ার অন্তত দেড় শ বসতবাড়ি ও ৭০ একর ফসলি জমি নদীতে গেছে। কয়েক দশকে ওই এলাকার ফসলি মাঠ ‘শুক্তগ্রাম বিল’ নদীতে বিলীন হয়েছে। এতে ওই এলাকার অনেকেই নিঃস্ব হয়ে গেছেন। ভাঙনের শিকার পরিবারগুলো বাজারে, নদীর পাড়ে, রাস্তার পাশে বা আত্মীয়স্বজনের বাড়িতে আশ্রয় নিয়েছেন। 

এদিকে শুক্তগ্রাম বাজারে রয়েছে অন্তত দেড় শ দোকানপাট। কালিয়ার উত্তর এলাকায় এটিই বড় বাজার ও হাট। এখানে রয়েছে ধান-পাটের বড় মোকাম। এ বাজারকেন্দ্রিক মসজিদ, মন্দির, কমিউনিটি ক্লিনিক, সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়, ইউনিয়ন ভূমি অফিসসহ নানা সামাজিক স্থাপনা রয়েছে। নদীভাঙন রোধ করতে না পারলে পুরো জনপদটিই বিলীন হবে। 

স্থানীয় লোকজনের তথ্যমতে, বারোয়ারিপাড়ার অরুণ পাল, বিকাশ পাল, রফি মণ্ডল, মিরাজ মোল্লা, কালিদাস পাল, দিলিপ পাল, কুদ্দুস শেখ, দীপক পাল, বেলায়েত শেখ, বাচ্চু শেখ, কামরুল শেখ, কাঞ্চন সরদার, আকতার মণ্ডল, ইমরুল মোল্লা, আকবর খাঁ, কার্তিক পাল, মান্দার খাসহ অন্তত ৬৫টি পরিবারের বসতবাড়ি গত বর্ষায় নদীতে গেছে। এ ছাড়া চরপাড়ার বেলায়েত মোল্লা, শাহাদত খাঁ, কালু মোল্লা, মিজান খাঁ, মনিরুল মোল্লা, ইয়ার আলী, রব্বান শেখ, আহাদ শেখ, রইস শেখ, আজাদ ফকির, জহির শেখ, রাজু শেখ, আমজেদ সরদার, মশিয়ার সরদারসহ অন্তত ৮৫টি পরিবারের বসতবাড়ি বিলীন হয়েছে। গত বর্ষায় নদীভাঙনের শিকার চরপাড়ার তোবারেক শেখ জানান, তিনবার নদীতে বিলীন হয়েছে বসতবাড়ি। প্রায় ৩৫ একর ফসলি জমি ছিল তাঁদের, সবই এখন নদীতে। সর্বশেষ ২ একর ৫৬ শতাংশ জমিতে ছিল বসতবাড়ি। ওই বসতবাড়ির ফলফলালি বিক্রি করেই সংসার চলে যেত। তা নদীতে ভেঙে এখন ১৫ শতাংশ আছে। ওই জমিতে এক কোণে ঝুপড়ি ঘর তুলে তাঁর পরিবার বসবাস করছে। যেকোনো মুহূর্তে তা নদীতে যেতে পারে। 

চরপাড়ার আহাদ শেখ বলেন, ‘আমাদের ৭৫ শতাংশের ওপর বসতবাড়ি ছিল। তা নদীতে ভেঙে এখন আমরা পথের ফকির।’ বারোয়ারিপাড়ার ষাটোর্ধ্ব কুদ্দুস শেখ বলেন, ‘তিন একর ফসলি জমি ছিল, এ ছাড়া বসতভিটার গাছপালায় চলত সংসার। সব নদীতে গেছে। এখন নদীর পাড়ে ঝুপড়িঘর তুলে আছি। জন বিক্রি করে কোনোমতে সংসার চলছে।’ স্থানীয় ইউপি চেয়ারম্যান মোজাম্মেল হোসেন জানান, গত রোববার ওই ভাঙন এলাকা পরিদর্শনে এসেছিলেন জেলা প্রশাসক আনজুমান আরা। ভাঙনরোধে ব্যবস্থা নিতে তিনি সংশ্লিষ্ট বিভিন্ন দপ্তরে যোগাযোগ করছেন। 

 জেলা প্রশাসক আনজুমান আরা বলেন, ওই ভাঙনরোধে স্থায়ী ব্যবস্থা নিতে পানি উন্নয়ন বোর্ডে (পাউবো) যোগাযোগ করা হচ্ছে। বড় প্রকল্প তৈরি করে সেখানে পাঠানোর প্রক্রিয়া চলছে।