প্রাক্কলক যখন দুই জেলার নির্বাহী প্রকৌশলীর দায়িত্বে

খাগড়াছড়ি জনস্বাস্থ্য প্রকৌশল অধিদপ্তরের (ডিপিএইচই) প্রাক্কলক (ইস্টিমেটর) সোহরাব হোসেন খাগড়াছড়িতে ১০ বছর ও বান্দরবানে ৮ বছর ধরে অতিরিক্ত দায়িত্বে নির্বাহী প্রকৌশলীর পদে রয়েছেন বলে অভিযোগ উঠেছে। একজন উপসহকারী প্রকৌশলী হয়েও তিনি জেলা পরিষদকে ব্যবহার করে অতিরিক্ত দায়িত্বের পদ ধরে রাখায় দুই জেলায় নির্বাহী প্রকৌশলী পদায়ন করা যাচ্ছে না বলে ঊর্ধ্বতন প্রকৌশলীরা অভিযোগ করেছেন। 

জনস্বাস্থ্য প্রকৌশল অধিদপ্তর পার্বত্য চট্টগ্রাম অঞ্চলের তত্ত্বাবধায়ক প্রকৌশলী জহির উদ্দিন দেওয়ান বলেছেন, গত ২১ মে কামাল হোসেনকে বান্দরবানে নির্বাহী প্রকৌশলী হিসেবে পদায়ন করা হয়। কিন্তু সোহরাব হোসেনকে প্রয়োজন উল্লেখ করে বান্দরবান জেলা পরিষদ তাঁকে যোগদান করতে দেয়নি। পার্বত্য চুক্তি অনুযায়ী জনস্বাস্থ্য প্রকৌশল অধিদপ্তর জেলা পরিষদে ন্যস্ত এবং পদায়িত কর্মকর্তা-কর্মচারীদের পরিষদে যোগদান করার বিধান রয়েছে। অথচ সোহরাব হোসেন খাগড়াছড়ি জনস্বাস্থ্য প্রকৌশল অধিদপ্তরের একজন প্রাক্কলক (উপসহকারী প্রকৌশলী)।

তত্ত্বাবধায়ক প্রকৌশলী জহির উদ্দিন দেওয়ান আরও বলেন, কীভাবে সোহরাবকে ২০০৯ সালে খাগড়াছড়িতে নির্বাহী প্রকৌশলীর অতিরিক্ত দায়িত্ব দেওয়া হয়েছিল তাঁর জানা নেই। তখন থেকে তিনি নির্বাহী প্রকৌশলী পদে বহাল রয়েছেন এবং বান্দরবানেও ২০১১ সাল থেকে অতিরিক্ত দায়িত্ব পালন করছেন।  

বান্দরবানে যোগদান করতে না পারা নির্বাহী প্রকৌশলী কামাল হোসেন বলেছেন, বান্দরবানে যোগদান করতে এলে সোহরাব হোসেন তাঁকে অফিসেও ঢুকতে দেননি। পরে তাঁকে পার্বত্য চট্টগ্রামবিষয়ক মন্ত্রণালয়ের মন্ত্রীর সম্মতিতে স্থানীয় সরকার মন্ত্রণালয় থেকে ১১ জুলাই খাগড়াছড়িতে নির্বাহী প্রকৌশলী হিসেবে পদায়ন করা হয়। ১৬ জুলাই সেখানে যোগদান করতে গিয়েও তাঁকে অফিসে ঢুকতে দেওয়া হয়নি। ২৫ জুলাই খাগড়াছড়ি জেলা পরিষদ চেয়ারম্যান তাঁর যোগদানপত্র গ্রহণ করা হবে না জানিয়ে দেয়। এতে বলা হয়েছে, সোহরাবকে খাগড়াছড়িতে প্রয়োজন।

 কামাল হোসেনের বদলির আদেশে বলা হয়, গত রোববারের মধ্যে খাগড়াছড়িতে পদায়িত কামাল হোসেনকে নির্বাহী প্রকৌশলীর দায়িত্ব হস্তান্তরের জন্য বলা হয়েছে। দায়িত্ব হস্তান্তর না করলেও সোহরাব হোসেন তাৎক্ষণিক অবমুক্ত হিসেবে বিবেচিত হবেন। 

ডিপিএইচই বান্দরবান ও খাগড়াছড়ির কর্মকর্তা-কর্মচারীরা বলেছেন, কাছাকাছি জ্যেষ্ঠ পদ (ইমেডিয়েট সিনিয়র পোস্ট) না হলে পরবর্তী জ্যেষ্ঠ পদে ভারপ্রাপ্ত বা অতিরিক্ত দায়িত্ব দেওয়া হয় না। ডিপিএইচইতে নির্বাহী প্রকৌশলীর কাছাকাছি জ্যেষ্ঠ পদ হচ্ছে উপবিভাগীয় প্রকৌশলী। এর আগের পদ সহকারী প্রকৌশলী ও উপসহকারী প্রকৌশলী। মাঝখানে দুটি জ্যেষ্ঠ পদ ডিঙিয়ে সোহরাব হোসেনকে রহস্যজনকভাবে দুই জেলায় নির্বাহী প্রকৌশলীর অতিরিক্ত দায়িত্ব দেওয়ার ব্যাপারে অধিদপ্তরের কেউ জানেন না। খাগড়াছড়ি থেকেও বান্দরবানের দায়িত্ব দেওয়া যায় না। কারণ রাঙামাটিরসংলগ্ন জেলা বান্দরবান। সরকারি নিয়ম অনুযায়ী রাঙামাটির নির্বাহী প্রকৌশলীই বান্দরবানের অতিরিক্ত দায়িত্ব পালন করবেন।         

দুই জেলায় নির্বাহী প্রকৌশলীর অতিরিক্ত দায়িত্বে থাকা প্রাক্কলক (উপসহকারী প্রকৌশলী) সোহরাব হোসেন বলেছেন, তিনি যেই পদের কর্মকর্তাই হোন—সরকারের দেওয়া নির্বাহী প্রকৌশলীর দায়িত্বই পালন করছেন। জেলা পরিষদ থেকে তাঁকে অবমুক্তিপত্র না দিলে এবং কামাল হোসেনের যোগদানপত্র গ্রহণ না করলে তাঁর করার কিছু নেই।  

জনস্বাস্থ্য প্রকৌশল অধিদপ্তরের প্রধান প্রকৌশলী সাইফুর রহমান বলেছেন, বিষয়টি স্থানীয় সরকার মন্ত্রণালয়কে জানানো হয়েছে। নির্বাহী প্রকৌশলীদের বদলির ব্যবস্থাপনা মন্ত্রণালয় থেকে করা হয়।

স্থানীয় সরকার মন্ত্রণালয়ের জনস্বাস্থ্য প্রকৌশল শাখার কর্মকর্তারা বান্দরবান ও খাগড়াছড়ি নির্বাহী প্রকৌশলী বদলির ব্যাপারে কোনো কিছু বলতে চাননি।

উপসচিব সাইদুর রহমান বলেছেন, বিষয়টি যুগ্ম সচিব খাইরুল ইসলাম জানেন। কিন্তু তিনি বিদেশে রয়েছেন।