বালু তোলায় ঝুঁকিতে সেতু-বসতি

দুর্গাপুরে সোমেশ্বরী নদীর সেতুর কাছ থেকে অবৈধভাবে বালু উত্তোলন চলছে। এতে ঝুঁকিতে রয়েছে সেতুটি।  ছবি: প্রথম আলো
দুর্গাপুরে সোমেশ্বরী নদীর সেতুর কাছ থেকে অবৈধভাবে বালু উত্তোলন চলছে। এতে ঝুঁকিতে রয়েছে সেতুটি। ছবি: প্রথম আলো

দুর্গাপুরে সোমেশ্বরী নদীর সেতুর কাছ থেকে অবৈধভাবে বালু উত্তোলন করায় ২১০ মিটারের মতো সেতুর জায়গা ঝুঁকিতে রয়েছে। এ ছাড়া সেতুর উত্তর পাশে বসতবাড়ির কাছ থেকে বালু তোলায় ভাঙনের হুমকির মুখে রয়েছে সহস্রাধিক বসতবাড়ি ও স্থাপনা।

অভিযোগ, সরকারিভাবে বালুঘাট ইজারা নেওয়া প্রভাবশালী ব্যবসায়ীদের সঙ্গে পৌরসভার মেয়র মো. আব্দুছ ছালাম যুক্ত থাকায় বালু উত্তোলনে বাধা দিলেও কাজ হচ্ছে না। প্রশাসনও নীরব ভূমিকা পালন করছে। আব্দুছ ছালাম দুর্গাপুর পৌর আওয়ামী লীগের সভাপতি।

বালুমহাল ও মাটি ব্যবস্থাপনা আইনের ৪-এর খ ধারায় উল্লেখ আছে—সেতু, কালভার্ট, ড্যাম, ব্যারাজ, বাঁধ, সড়ক, মহাসড়ক, বন, রেললাইন এবং অন্যান্য গুরুত্বপূর্ণ সরকারি ও বেসরকারি স্থাপনার ১ কিলোমিটারের মধ্য থেকে বালু তোলা যাবে না।

স্থানীয় বাসিন্দা ও প্রশাসন সূত্রে জানা গেছে, চলতি বছর সোমেশ্বরী নদীর পাঁচটি বালুমহাল ১৩ কোটি টাকার ওপরে ইজারা দেওয়া হয়েছে। ১ নম্বর ঘাট বিজয়পুর-ভবানীপুর ৫ কোটি ২০ লাখ টাকার অনুমোদন পান অঞ্জন সরকার নামের একজন ঠিকাদার। ২ নম্বর ঘাট পৌর শহরের তেরিবাজার থেকে শিবগঞ্জ ৪ কোটি ৬ লাখ টাকার অনুমোদন পান আলাল সর্দার। ঠিকাদারি প্রতিষ্ঠানের প্রায় সবাই ক্ষমতাসীন দলের রাজনীতির সঙ্গে যুক্ত। তাঁদের সঙ্গে পৌরসভার মেয়র আব্দুছ ছালামসহ কয়েকজন প্রভাবশালী নেতা-কর্মীও রয়েছেন। ইজারাদাররা প্রভাবশালী হওয়ায় কোনো রকম নিয়ম-নীতি না মেনে নিয়মবহির্ভূতভাবে বালু উত্তোলন করেছেন। তাঁরা স্থানীয়দের সুবিধা-অসুবিধা গুরুত্ব দেন না।

গত শনিবার দুপুরে দেখা যায়, সোমেশ্বরী নদীর ওপর সেতুটির প্রায় ১২০ গজ দূর থেকে খননযন্ত্রের সাহায্যে বড় বড় চারটি নৌকায় বালু তোলা হচ্ছে। এ ছাড়া সেতুর উত্তর পাশে প্রায় ৩০০ গজ এবং বসতবাড়ি থেকে মাত্র ৪০ গজ দূরে চর মোক্তারপাড়া এলাকায় অন্তত ১৫টি খননযন্ত্র বসিয়ে বালু উত্তোলন করা হচ্ছে। এতে এলাকার সহস্রাধিক বাড়িঘর হুমকির মুখে পড়ছে।

চর মোক্তারপাড়া এলাকার বাসিন্দা ও উপজেলা যুবলীগের সহসভাপতি রায়হান মিয়া বলেন, চার দিন ধরে সেতুটির কাছে ও তাদের বাড়ির পেছনে নদীর তীর থেকে ড্রেজার মেশিন দিয়ে বালু উত্তোলন করা হচ্ছে। এতে শত শত লোক বাধা দিলেও কাজ হচ্ছে না। মেয়র, উপজেলা চেয়ারম্যান, ইউএনও, থানা-পুলিশ সবাইকে জানানো হয়েছে। কিন্তু বালু উত্তোলন বন্ধ হচ্ছে না। অঞ্জন সরকার ও আলাল সর্দারের সঙ্গে পৌরসভার মেয়র আব্দুছ ছালাম এই ব্যবসা নিয়ন্ত্রণ করছেন বলে তাঁর অভিযোগ।

এ বিষয়ে কথা বলতে ঠিকাদার অঞ্জন সরকারের মুঠোফোনে কল করলে সেটি বন্ধ পাওয়া যায়। আর আলাল সর্দার ফোন ধরেননি। তবে মেয়র আব্দুছ ছালাম বলেন, কিছু ড্রেজার বসিয়ে বালু তোলা হয়েছিল। মানুষ বাধা দিলে তা বন্ধ করে দেওয়া হয়েছে। এখন আর তোলা হয় না। দু-একটি থাকলে তা বন্ধ করে দেওয়া হবে। এক প্রশ্নের জবাবে তিনি দাবি করেন, এতে সেতু ও বসতির কোনো ক্ষতি হবে না। আর বালু উত্তোলনে ১ কিলোমিটার দূরসহ অন্যান্য নীতিমালা মানলে তো বালুই তোলা যাবে না। জেলা প্রশাসক মঈনউল ইসলাম বলেন, ‘বিষয়টি আমি খোঁজ নিয়ে দেখছি। অবৈধভাবে বালু উত্তোলন করে থাকলে জড়িতদের বিরুদ্ধে প্রয়োজনীয় ব্যবস্থা নেওয়া হবে।’