বগুড়ায় জোড়াতালির সংস্কার

প্রায় দুই সপ্তাহ আগে ইট বিছিয়ে সংস্কার করা হয়েছে। সেগুলো ভেঙে ঝুঁকিপূর্ণ হয়ে আছে। গতকাল বিকেলে ঢাকা-রংপুর মহাসড়কে বগুড়ার শাজাহানপুর উপজেলার নয়মাইল এলাকায়।  ছবি: সোয়েল রানা
প্রায় দুই সপ্তাহ আগে ইট বিছিয়ে সংস্কার করা হয়েছে। সেগুলো ভেঙে ঝুঁকিপূর্ণ হয়ে আছে। গতকাল বিকেলে ঢাকা-রংপুর মহাসড়কে বগুড়ার শাজাহানপুর উপজেলার নয়মাইল এলাকায়। ছবি: সোয়েল রানা

ঢাকা-রংপুর মহাসড়কের বগুড়ার শেরপুর উপজেলার চান্দাইকোনা থেকে চারমাথা হয়ে শিবগঞ্জের রহবল পর্যন্ত ৬৫ কিলোমিটারের অন্তত ১৭ কিলোমিটার এখনো বেহাল। ঈদযাত্রা সামনে রেখে ১৭ কিলোমিটারের মধ্যে ৫ কিলোমিটার জোড়াতালি দিয়ে কোনো রকমে সংস্কার করা হয়েছে। এর মধ্যে বগুড়ার গোকুল বাজার থেকে মহাস্থানগড় করতোয়া সেতু পর্যন্ত তিন কিলোমিটার অংশে কার্পেটিং তুলে আস্ত ইট বিছানো হয়েছে। ঈদযাত্রায় ভোগান্তির যত শঙ্কা এই অংশে।

আবার মহাস্থান বাজারে মহাসড়কের পাশে সপ্তাহে শনি ও বুধবার বসছে কোরবানির পশুরহাট। এই হাটকে কেন্দ্র করে মহাসড়কে সপ্তাহে দুদিন তৈরি হচ্ছে দীর্ঘ যানজট। এ কারণে বেহাল সড়ক আর কোরবানির পশুরহাট দুই মিলে ঈদযাত্রায় উত্তরবঙ্গগামী মানুষের দুর্ভোগ-ভোগান্তি এখন মহাস্থানগড় অংশের তিন কিলোমিটার মহাসড়ক।

গতকাল সোমবার সকালে সরেজমিনে দেখা গেছে, ঈদ সামনে রেখে ঢাকা-রংপুর মহাসড়কে বাড়তে শুরু করেছে যানবাহনের চাপ। এর মধ্যেই বগুড়ার গোকুল বন্দর থেকে মহাস্থানগড় সেতু পর্যন্ত তিন কিলোমিটার অংশে এক সপ্তাহ ধরে চলছে সংস্কারকাজ। ঠিকাদারি প্রতিষ্ঠান মহাসড়কের এক লেন বন্ধ রেখে অন্য লেনে সংস্কার করছে। এর মধ্যে মহাস্থান বাজারসংলগ্ন এলাকায় প্রায় এক কিলোমিটার অংশে পিচ-খোয়া-পাথর তুলে আস্ত ইট বিছানো হয়েছে। আবার গোকুল বন্দর থেকে মহাস্থান পর্যন্ত বেহাল অংশে কোথাও গর্তে খোয়া ফেলে ভরাট করে ওপরে বিটুমিন ছিটানো হচ্ছে। এভাবে ৫ কিলোমিটার অংশের সংস্কার আজ মঙ্গলবার সমাপ্ত ঘোষণা করা হচ্ছে।

মহাস্থান বাজারসংলগ্ন মহাসড়কের এক কিলোমিটার ইট বিছানো অংশে সংস্কার শেষ হয়েছে সপ্তাহখানেক আগে। একটু বৃষ্টিতেই ইট বিছানানো অংশে পানি জমে কাদা-জলে একাকার হচ্ছে। এতে যানবাহন চলাচলে ভোগান্তি পোহাতে হচ্ছে। মহাস্থান বাজারের ব্যবসায়ী জাহিদুল ইসলাম বলেন, ‘এত দিন জানতাম দিনে দিনে মহাসড়কের উন্নয়ন হয়। ইট বিছানো সড়কে কার্পেটিং হয়। কিন্তু এখানে দেখলাম উল্টো। পিচঢালা মহাসড়ক সংস্কারের নামে ইট-কার্পেটিং তুলে বিছানো হলো আস্ত ইট। এই সড়কে এক বৃষ্টিতে পানি জমছে। কাদাজলে একাকার মহাসড়কে ধীরগতিতে যানবাহন চলাচল করছে। তৈরি হচ্ছে যানজট।’

সড়ক ও জনপথ বিভাগ (সওজ) সূত্রে জানা গেছে, ঢাকা-রংপুর মহাসড়ক চার লেনে উন্নীত করার জন্য একটি প্রকল্প চলমান রয়েছে। এই প্রকল্প থেকে জমি অধিগ্রহণ ইতিমধ্যেই শুরু হয়েছে। চার লেনে উন্নীতকরণ প্রকল্প বাস্তবায়নের আগে মহাসড়কে যান চলাচল স্বাভাবিক রাখতে চলতি অর্থবছরে প্রায় ১৭ কিলোমিটার অংশ সংস্কারের জন্য ১৮ কোটি টাকার দরপত্র আহ্বান করা হয়। কার্যাদেশ অনুযায়ী গত ৮ জুলাইয়ের মধ্যে কাজ শেষ হওয়ার কথা। কিন্ত কার্যাদেশের মেয়াদ শেষ হলেও কাজের অগ্রগতি মাত্র ৫ কিলোমিটার।

জানতে চাইলে ঠিকাদারি প্রতিষ্ঠান নাভানা কনস্ট্রাকশনের ব্যবস্থাপনা পরিচালক আকবর আলী প্রথম আলোকে বলেন, নির্মাণ উপকরণ বিদেশ থেকে আমদানি জটিলতাসহ নানা কারণে কার্যাদেশ অনুযায়ী এই মহাসড়কের সংস্কারকাজ যথাসময়ে শেষ করা সম্ভব হয়নি। 

সওজ বগুড়ার নির্বাহী প্রকৌশলী মো. আশরাফুজ্জামান প্রথম আলোকে বলেন, ঢাকা-রংপুর মহাসড়কের বগুড়ার ১৭ কিলোমিটার সংস্কারের জন্য দরপত্র আহ্বান করা হয়েছিল। কিন্ত ঠিকাদারি প্রতিষ্ঠানের গাফিলাতির কারণে যথাসময়ে কাজ শেষ হয়নি। এখন ঈদযাত্রা সামনে রেখে অগ্রাধিকার ভিত্তিতে বেশি খারাপ ৫ কিলোমিটার অংশের সংস্কারকাজ আজ শেষ হবে। এর মধ্যে বগুড়ার গোকুল বাজার থেকে মহাস্থান বাজার পর্যন্ত তিন কিলোমিটার খারাপ অংশ যান চলাচলের উপযোগী করা হয়েছে। মহাস্থান বাজারে মহাসড়কে দুপাশে নালা না থাকায় বর্ষাকালে বাজারের পানি মহাসড়কে উপচে পড়ে। এ কারণে কার্পেটিং করে কোনো ফল মিলে না। বাধ্য হয়ে কার্পেটিং তুলে ইট বিছানো হয়েছে। এতে ভোগান্তি হওয়ার কথা নয়।

সওজ জানিয়েছে, ২০১৩-১৪ অর্থবছরে এই মহাসড়কের ৪৩ কিলোমিটার অংশ মেরামতে প্রায় ৩০ কোটি টাকা ব্যয় করা হয়েছে। পরের অর্থবছরে ৫ কিলোমিটার অংশ সংস্কারে ব্যয় করা হয়েছে ৫ কোটি টাকা। ২০১৬-১৭ অর্থবছরে মহাসড়কের দুই অংশে ২১ কোটি ৪২ লাখ টাকার সংস্কারকাজ হয়েছে। গত অর্থবছরে ২১ কোটি টাকার সংস্কারকাজ হয়েছে। এর বাইরে সওজের নিজস্ব জনবল দিয়ে প্রতি অর্থবছরে ২ কোটি টাকার ছোট সংস্কারকাজ হয়েছে। 

 কোরবানির পশুরহাটকে কেন্দ্র করে যানজট প্রসঙ্গে জানতে চাইলে বগুড়ার অতিরিক্ত পুলিশ সুপার সনাতন চক্রবর্তী প্রথম আলোকে বলেন, মহাস্থান পশুরহাটকে কেন্দ্র করে ঢাকা-রংপুর মহাসড়কে যানজট যাতে তৈরি হয় এবং এর জন্য কোনোভাবেই যাতে ঈদে ঘরে ফেরা মানুষের ভোগান্তি দুর্ভোগ না হয়, এ জন্য সেখানে ট্রাফিক পুলিশ মোতায়েনসহ বাড়তি সতর্কতামূলক ব্যবস্থা গ্রহণ করা হয়েছে।