মুক্তিযুদ্ধের স্মৃতিবাহী বাড়িসহ ২৫ একর জমি দখলের চেষ্টা

সিলেট নগরের আম্বরখানা বালিকা উচ্চবিদ্যালয় ও কলেজের অবসরপ্রাপ্ত শিক্ষক বখতিয়ার রাজা চৌধুরী। তাঁর ফুফাতো ভাই প্রয়াত শহীদ চৌধুরী ছিলেন মুক্তিযুদ্ধে সুনামগঞ্জের একটি কোম্পানি কমান্ডার। সেই সুবাদে সুনামগঞ্জে বখতিয়ারদের বাড়িটি ছিল মুক্তিবাহিনীর ঘাঁটি। সেই পৈতৃক বাড়িসহ ২৫ একর জমি একটি পক্ষ জবরদখলের জন্য জোর চেষ্টা চালিয়ে যাচ্ছে। এতে সিলেটের আঞ্চলিক সেটেলমেন্ট কার্যালয়ের একটি চক্র সহায়তা করছে। 

গত শনিবার সিলেটের দুটি প্রেসক্লাবে সংবাদ সম্মেলন করে এমন অভিযোগ করেছেন বখতিয়ার রাজা চৌধুরী। মুক্তিযুদ্ধের স্মৃতিবাহী বাড়িসহ ভূসম্পত্তি রক্ষার জন্য দখলচেষ্টার প্রতিকার চেয়েছেন তিনি। বখতিয়ার রাজা চৌধুরী সুনামগঞ্জ সদর উপজেলার হরিণাপাটি গ্রামের মরহুম রাজাওর রহমান চৌধুরীর ছেলে। ওই গ্রামেই বাড়িটির অবস্থান। বর্তমানে সিলেট নগরের পশ্চিম পীরমহল্লায় থাকেন বখতিয়ার।

সংবাদ সম্মেলনে লিখিত বক্তব্যে বলা হয়, হরিণাপাটি মৌজার সেটেলমেন্ট জরিপই কাল হয়ে এসেছে বখতিয়ার রাজা চৌধুরীর পরিবারে। জরিপ চলাকালে কর্মকর্তারা দুর্নীতির আশ্রয় নিয়ে অসংখ্য মানুষকে হয়রানি করেছেন। তাঁরা মৃতকে জীবিত করেছেন টাকার বিনিময়ে। বখতিয়ারের সৎভাই আনোয়ার রাজা চৌধুরী আদালতের একটি রায়কে জালিয়াতি করে জরিপকালে সেটেলমেন্টে উপস্থাপন করেন। এর মধ্য দিয়ে তিনি তাঁর মায়ের পুরো অংশ প্রায় ২৫ একর জমি দখল করেন। রায় জালিয়াতির বিষয়টি আদালতে প্রমাণিত হলে আনোয়ার রাজা চৌধুরীকে জেলে পাঠান আদালত। জেল খাটার পরও তিনি দখলচেষ্টা থেকে সরে যাননি।

দখলচেষ্টার তৎপরতা সম্পর্কে বখতিয়ার রাজা চৌধুরী বলেন, ২০০৭ সালে সেটেলমেন্ট জরিপের সময় তিনি সিলেট শহরে থাকলেও তাঁদের দুই ভাইয়ের নামে মাঠ পরচা সঠিকভাবেই তৈরি হয়েছিল। কিন্তু পরে তসদিক কার্যক্রমের সময় সেটেলমেন্ট কর্মকর্তারা তাঁদের মা-বাবার নামে রেকর্ড করা প্রায় ৩০ একর জমি আনোয়ারসহ কয়েকজনের নামে দিয়ে দেন। তাঁদের নামে ছাপা ও মাঠ পরচা থাকার পরও অবৈধভাবে অন্যের নামে রেকর্ড দেওয়ার কারণ জানতে চাইলে কর্মকর্তারা কোনো সদুত্তর দেননি। তাঁর একমাত্র ছোট ভাই হুসনেক রাজা চৌধুরী ন্যায়বিচারের জন্য সেটেলমেন্ট অফিসে দ্বারে দ্বারে ঘুরে অসুস্থ হয়ে মৃত্যুবরণ করেছেন। বখতিয়ার আরও বলেন, ‘সিলেটের আঞ্চলিক সেটেলমেন্ট কর্মকর্তা জাকির হোসেন সব কাগজপত্র দেখে আশ্বাস প্রদান করেছিলেন। কিন্তু চার বছর গেলেও আমরা কোনো ফলাফল পাইনি। দখলদার ও সহযোগী সেটেলমেন্ট অফিসের কর্মকর্তাদের বিরুদ্ধে দুর্নীতি দমন কমিশনে লিখিত অভিযোগ দায়ের করেছিলাম। তারপর প্রায় তিন বছর পেরিয়ে গেলেও কোনো প্রতিকার পাইনি। বছরে পর বছর মানসিক, আর্থিক ও শারীরিকভাবে ক্ষতিগ্রস্ত হয়ে এখন আমি মুক্তিযুদ্ধের স্মৃতিবাহী বাড়িটি রক্ষায় অনেকটা অনিশ্চয়তার মধ্যে আছি।’

সংবাদ সম্মেলনে আরও বলা হয়, ২০১৮ সালের ৮ জানুয়ারি তেজগাঁও ভূমি রেকর্ড ও জরিপ অধিদপ্তরে বিষয়টি অবহিত করা হয়। তখনকার মহাপরিচালক শেখ আবদুল আহাদ কাগজপত্র দেখে সিলেটের আঞ্চলিক সেটেলমেন্ট কর্মকর্তাকে দ্রুত আইনানুগ ব্যবস্থা নিতে নির্দেশ দিয়েছিলেন। এই অবস্থায় আঞ্চলিক সেটেলমেন্ট কর্মকর্তা তদন্তের নির্দেশনা জারি করলেও অদৃশ্য কারণে তা স্থগিত রয়েছে। 

বখতিয়ার রাজা চৌধুরীর অভিযোগ সম্পর্কে গত রোববার সিলেট আঞ্চলিক সেটেলমেন্ট কার্যালয়ে যোগাযোগ করে প্রথম আলো। তবে বিষয়টি তদন্তাধীন বলে এ ব্যাপারে সংশ্লিষ্ট কর্মকর্তা জাকির হোসেন ও সৈয়দ ফারুক কোনো মন্তব্য করতে রাজি হননি।