'মা হাজিদের' সেবায় নারী হজকর্মী

প্রথম আলো ফাইল ছবি
প্রথম আলো ফাইল ছবি

আয়েশা কামাল। জন্ম মক্কায়। জেদ্দা অ্যাম্বাসি স্কুল অ্যান্ড কলেজ থেকে এইচএসসি পাস করার পর মা–বাবা বিয়ে দিয়ে দেন। স্বামী, ছেলেমেয়ে নিয়ে তিনি এখন মক্কায় থাকেন। দুই বছর পরপর বাংলাদেশে বেড়াতে যান। এখন সৌদি আরবে বাংলাদেশ হজ অফিসে হজকর্মী হিসেবে কর্মরত। সৌদি আরবে নারী হাজিদের ‘মা হাজি’ বলে সম্মান জানানো হয়। বাংলাদেশের ‘মা হাজিদের’ সেবায় নিজেকে নিয়োজিত করেছেন আয়েশা।

আয়েশা কামালের মতো ৩৫ জন নারী এবং ১৮৯ জন পুরুষ এবার হজকর্মী হিসেবে হজ অফিসে কাজ করছেন। গত বছর অল্প কিছু নারী হজকর্মী নিয়ে শুরু করলেও এবার সংখ্যায় তা বেড়েছে। প্রতিদিন ১০ ঘণ্টা ডিউটি করতে হয়। বলা হচ্ছে, এবার হজযাত্রীদের ৩৭ শতাংশ নারী। মক্কার মসজিদুল হারামের ভেতরে, বাইরে, গেটে, মিসফালাহ ব্রিজের নিচে, হজ অফিসে, মেডিকেল সেন্টারসহ গুরুত্বপূর্ণ স্থানে নারী হজযাত্রীদের সেবা দিয়ে থাকেন এই নারী হজকর্মীরা।

রাজশাহীর বোয়ালিয়ার ইউ কে জাহানারা বেগম বলেন, ‘নারী হজকর্মী থাকায় কথা বলা সহজ হয়েছে আমাদের।’
আয়েশা কামাল বলেন, ‘মক্কায় বড় হয়েছি। এ দেশের পরিবেশ রাস্তাঘাট সবই চেনা। বাংলাদেশি নারী হজযাত্রীদের খেদমত করার সুযোগ পাচ্ছি এটাই বড় কথা। কারণ নারীরা সংকোচে অনেক সমস্যার কথা পুরুষদের বলতে পারেন না। আমরা এগিয়ে যাই। সমস্যা শুনে সমাধান দিই।’

বাংলাদেশি নারী হজ গাইড আয়েশা চৌধুরী। হজ গাইডের কাজটি সাধারণত পুরুষেরাই করেন। অদম্য ইচ্ছাশক্তির কারণে তিনি এখন মক্কায় এমপি ট্রাভেলস লিমিটেডর পক্ষে নারী হজ গাইড হিসেবে কাজ করছেন। হজের শুরু থেকে শেষ পর্যন্ত যেসব কাজ করা হয়, তা পুরুষ কর্মীরাই করে থাকেন। যেখানে নারীর প্রয়োজন সেগুলো আয়েশা করেন।

আয়েশা চৌধুরী বলেন, ‘২০০৫ সালে মায়ের সঙ্গে হজে আসার সুযোগ হয় আমার। অনেক নারী হাজি ভাষাগত কারণে বিভিন্ন সমস্যার সম্মুখীন হন। সেটা দেখে হজযাত্রীদের নিয়ে কাজ করার আগ্রহ হয় আমার। ভাবলাম, যদি নিজেকে তাঁদের সহায়ক হিসেবে কোনো কাজে লাগাতে পারি, তাহলে অনেক সওয়াব পাওয়া যাবে। এরপর দেশে এসে সেই চিন্তা থেকেই কাজে নেমে পড়ি।’

নারী হয়ে হজ গাইড হিসেবে কাজ করতে গেলে কোনো সমস্যা হয় কি না, জানতে চাইলে আয়েশা বলেন, ‘সমস্যার সম্মুখীন তো হতে হয়ই। প্রথমত যাঁরা হজ করতে যান, তাঁরা চিন্তা করেন, এলাকার ইমাম, মুয়াজ্জিন, মাদ্রাসার শিক্ষকের মাধ্যমে হজ করব। গ্রামের মানুষেরা সাধারণত তাঁদের বেশি বিশ্বাস করেন। তাই এ কাজে নারী গাইড থাকতে পারেন, এটা তাঁরা ভাবতেই পারেন না।’

ব্রাহ্মণবাড়িয়া জেলার সদর থানার চিনাইর গ্রামের এস বি চৌধুরীর মেয়ে আয়েশা তিন ভাই এক বোনের মধ্যে তৃতীয়। জগন্নাথ বিশ্ববিদ্যালয় থেকে ব্যবস্থাপনায় মাস্টার্স করে এ পেশায় নিজেকে পুরোপুরিভাবে নিয়োজিত রেখেছেন। আয়েশা জানালেন, হাজিদের বাড়ি ভাড়া করতে সৌদি আরবে আসার জন্য ভিসা পাচ্ছিলেন না। কোনোভাবেই ভিসা দিচ্ছিল না সৌদি দূতাবাস। ব্যক্তিগতভাবে দূতাবাসের কাউন্সেলরের সঙ্গে দেখা করলেন। কাউন্সেলর বলে দিলেন, কোনো নারীকে মোনাজ্জেম ভিসা দেন না।

আয়শা বলেন, ‘মক্কার হোটেল ব্যবসায়ী আবুল কালাম মো. মাসুদ ভাই আমাকে জানালেন, এর আগে ইতালির একজন নারী মোনাজ্জেম ভিসা পেয়েছেন। সেই উদাহরণটাকে সঙ্গী করে শুরু হলো নতুন লড়াই। সেই চিঠি ভাষান্তর করে আবার গেলাম দূতাবাসে। তাঁদের বোঝালাম, হজ এজেন্সির মালিক হিসেবে সৌদিতে হাজিদের বাসা থেকে শুরু করে যাবতীয় কাজ আমাকেই করতে হবে। এখানে অনেক টাকার লেনদেন। আমি ছাড়া সেটা করার মতো বিশ্বস্ত কেউ নেই। তারপর আর পেছনে ফিরে তাকাতে হয়নি।’