স্ত্রীসহ আমীর খসরুর বিরুদ্ধে সম্পদ বিবরণীর নোটিশ

আমীর খসরু মাহমুদ চৌধুরী
আমীর খসরু মাহমুদ চৌধুরী

বিএনপির স্থায়ী কমিটির সদস্য আমীর খসরু মাহমুদ চৌধুরী ও তাঁর স্ত্রী তাহেরা খসরু আলমকে সম্পদ বিবরণী জমা দিতে নোটিশ দিয়েছে দুর্নীতি দমন কমিশন (দুদক)। আজ মঙ্গলবার দুদকের পরিচালক ও অনুসন্ধান কর্মকর্তা কাজী শফিকুল আলম স্বাক্ষরিত দুটি নোটিশ পাঠানো হয়।

দুদক সূত্র প্রথম আলোকে বিষয়টি নিশ্চিত করেছে। চিঠিতে আগামী ২১ কার্যদিবসের মধ্যে তাঁদের সম্পদ বিবরণী দাখিল করতে বলা হয়েছে। দুদক বলছে, প্রাথমিক অনুসন্ধানে তাঁদের বিরুদ্ধে জ্ঞাত আয়বহির্ভূত নামে-বেনামে বিপুল সম্পদের প্রমাণ পাওয়ায় এই নোটিশ দেওয়া হয়েছে।

দুদক বলেছে, ২১ কার্যদিবসের মধ্যে দুজনকেই তাঁদের নিজের, নির্ভরশীল ব্যক্তিবর্গের যাবতীয় স্থাবর-অস্থাবর সম্পত্তি, দায়-দেনা, আয়ের উৎস ও তা অর্জনের বিস্তারিত বিবরণ নির্ধারিত ফরমে অনুসন্ধান কর্মকর্তার কাছে জমা দিতে হবে।

চট্টগ্রাম চেম্বার অব কমার্সের সাবেক সভাপতি ও বিএনপির জ্যেষ্ঠ এ নেতার বিরুদ্ধে গত বছরের আগস্টে অনুসন্ধানের সিদ্ধান্ত নেয় দুদক। অনুসন্ধানের অংশ হিসেবে তাঁকে জিজ্ঞাসাবাদের জন্য দুদকে হাজির হতে চিঠি দেওয়া হয়। গত বছরের ১৬ আগস্ট কাজী শফিকুল আলমের স্বাক্ষরিত ওই চিঠি আমীর খসরুর চট্টগ্রামের মেহেদীবাগের বাসার ঠিকানায় পাঠানো হয়। চিঠিতে তাঁকে ওই বছরের ২৮ আগস্ট দুদকে হাজির হতে বলা হয়।

চিঠিতে বলা হয়, বেনামে পাঁচ তারকা হোটেল ব্যবসা, ব্যাংকে কোটি কোটি টাকার অবৈধ লেনদেনসহ মানিলন্ডারিং করে বিভিন্ন দেশে অর্থ পাচারের অভিযোগ রয়েছে তাঁর বিরুদ্ধে। এ ছাড়া স্ত্রী ও পরিবারের অন্যান্য সদস্যসহ নিজ নামে শেয়ার কেনাসহ জ্ঞাত আয়বহির্ভূত সম্পদ অর্জনের অভিযোগও অনুসন্ধান করা হচ্ছে।

গত বছরের ২৮ আগস্ট দুদকের তলবে হাজির না হয়ে সময়ের আবেদন করেন আমীর খসরু। পরে তাঁকে ১০ সেপ্টেম্বর দুদকে হাজির হতে চিঠি দেওয়া হয়। ওই তলবকে চ্যালেঞ্জ করে ৩ সেপ্টেম্বর উচ্চ আদালতে রিট করেন আমীর খসরু। ১০ সেপ্টেম্বরের তলবের বিষয়ে উচ্চ আদালতে রিট মামলা বিচারাধীন থাকার কারণ দেখিয়ে আমীর খসরু হাজির না হয়ে আইনজীবীর মাধ্যমে সময় চান। চিঠিতে উচ্চ আদালতে করা রিটের নিষ্পত্তি না হওয়া পর্যন্ত কোনো ব্যবস্থা না নিতে অনুরোধ জানান তিনি।

এরপর ৫ সেপ্টেম্বর আমীর খসরু মাহমুদকে দুদকে হাজির হওয়ার নোটিশের বৈধতা চ্যালেঞ্জ করে দায়ের করা রিট কার্য তালিকা থেকে বাদ দেন হাইকোর্টের অপর একটি বেঞ্চ। পরে ১৬ সেপ্টেম্বর ওই রিট সরাসরি খারিজ করে দেন হাইকোর্ট। বিচারপতি মো. নজরুল ইসলাম তালুকদার ও বিচারপতি কে এম হাফিজুল আলমের সমন্বয়ে গঠিত হাইকোর্ট বেঞ্চ ওই আদেশ দেন।

এর একদিন পর গত বছরের ১৮ সেপ্টেম্বর রাজধানীর বনানীতে আমীর খসরুর মালিকানাধীন হোটেল সারিনায় যায় দুদকের দল। ওই দিন বেলা ১১টার দিকে দুদকের পরিচালক কাজী শফিকুল আলমের নেতৃত্বে ওই অভিযান পরিচালিত হয়। দুদক তখন জানিয়েছে, সেখান থেকে বেশ কিছু তথ্য সংগ্রহ করা হয়।

এর আগে গত বছরের সেপ্টেম্বরে আমীর খসরু মাহমুদ চৌধুরীর বিরুদ্ধে তথ্য ও যোগাযোগ প্রযুক্তি আইনের ৫৭(২) ধারায় এবং বিশেষ ক্ষমতা আইনে মামলা করা হয় চট্টগ্রামে। মামলার এজাহারে বলা হয়, আমীর খসরু মাহমুদ চৌধুরী দেশের বিরুদ্ধে ষড়যন্ত্র করছিলেন। ইলেকট্রনিকস ডিভাইস ব্যবহারের মাধ্যমে রাষ্ট্রে নৈরাজ্য সৃষ্টির উদ্দেশে তিনি উসকানিমূলক বক্তব্য দিয়েছেন।

নিরাপদ সড়কের দাবিতে শিক্ষার্থীদের আন্দোলনের সময় সামাজিক যোগাযোগমাধ্যমে একটি অডিও ক্লিপ ভাইরাল হয়। এটি বিএনপির স্থায়ী কমিটির সদস্য আমীর খসরু মাহমুদ চৌধুরীর বলে অভিযোগ ওঠে। সেই ক্লিপে কুমিল্লা থেকে নওমী নামের এক তরুণের সঙ্গে একজনকে কথা বলতে শোনা যায়। নিরাপদ সড়কের দাবিতে শিক্ষার্থীদের আন্দোলনের মধ্যে লোকজনকে নামানোর কথা বলতে শোনা যায় ওই ব্যক্তিকে। অভিযোগ ওঠে নওমীর সঙ্গে কথা বলা ওই ব্যক্তি হলেন আমীর খসরু মাহমুদ চৌধুরী।