১৫ লাখে মরুর জাহাজ

কোরবানির পশুর হাটের উট দেখতে ইতিমধ্যে আনাগোনা শুরু হয়ে গেছে দর্শনার্থীদের। গতকাল রাজধানীর গাবতলী পশুর হাটে।  ছবি: প্রথম আলো
কোরবানির পশুর হাটের উট দেখতে ইতিমধ্যে আনাগোনা শুরু হয়ে গেছে দর্শনার্থীদের। গতকাল রাজধানীর গাবতলী পশুর হাটে। ছবি: প্রথম আলো

কুঁজওয়ালা চারপেয়ে প্রাণীটিকে দেখতে হলে ঘাড় উঁচু করতে হয়। এরা বেশ শান্তশিষ্ট স্বভাবের, তবে হাঁক দিলে অপরিচিত ডাকে গা কিছুটা কাঁটা দিয়ে ওঠে। মরুভূমির জাহাজখ্যাত এই উট দেখা গেল রাজধানীর গাবতলীর পশুর হাটে। দীর্ঘ গ্রীবার এ প্রাণীর দাম হাঁকা হচ্ছে ১৫ লাখ টাকা।

প্রতিবছর কোরবানির ঈদ এলেই গাবতলীর পশুর হাটে ওঠে উট আর দুম্বা। কোরবানির পশু হিসেবে কেউ কেউ উট-দুম্বা বেছে নেন। তবে সংখ্যায় তা খুবই অল্প। হাটের ব্যাপারীরা জানান, ভারতের রাজস্থান, গুজরাটের মরুভূমি এলাকা এবং হরিয়ানা থেকে উট ও দুম্বা আমদানি করা হয়। কখনো উট আসে পাকিস্তান থেকেও। সীমান্তবর্তী জেলা যশোর, কুড়িগ্রাম, চাঁপাইনবাবগঞ্জের স্থলবন্দর হয়ে উটগুলো বাংলাদেশে আসে। প্রতিবছর হাটে গরু, খাসি, মহিষের পাশাপাশি উট ও দুম্বারও ক্রেতা থাকে।

গতকাল মঙ্গলবার গাবতলীর পশুর হাটে দেখা যায়, চারটি উট উঠেছে। এর একটি বিক্রি হয়েছে ৮ লাখ টাকায়। উটগুলো কখনো বসে, কখনোবা ঠায় দাঁড়িয়ে থাকে। উটগুলো থেকে একটু দূরেই বাঁধা আছে সাতটি দুম্বা। এরাও শান্তশিষ্ট। তবে হাত দিয়ে ছুঁতে গেলেই এরা প্যাঁচানো শিং নিয়ে এগিয়ে আসে। একেকটির দাম হাঁকা হচ্ছে আড়াই থেকে তিন লাখ টাকা।

গাবতলীর পশুর হাটে এবার ওঠা উট ও দুম্বার মালিক হচ্ছেন ব্যাপারী মো. আমজাদ হোসেন। তিনি প্রথম আলোকে বলেন, কোরবানি উপলক্ষে এই বছর গাবতলীতে পশু আসা শুরু হলেও বিকিকিনি তেমনটা শুরু হয়নি। তাঁর খামারের তিনটি উট পাকিস্তান থেকে আনা। একেকটির দাম পড়বে ১২ থেকে ১৫ লাখ টাকা।

উট-দুম্বা নিয়ে উচ্ছ্বাস দেখা গেল হাট ঘুরতে আসা দর্শনার্থীদের মধ্যে। গতকালও সকালে এই প্রাণী দুটির আশপাশে ছিল মানুষের জটলা। কেউ মুঠোফোনে সেলফি তুলছেন, কেউ ছুঁয়ে দেখছেন প্রাণী দুটিকে। তেমনই একজন মিরপুর বাঙলা কলেজের শিক্ষার্থী মো. আনিস মাহমুদ। ফেসবুক লাইভে গিয়ে তিনি বন্ধুদের উটের কথা জানাচ্ছিলেন। বললেন, ‘উট তো মরুভূমির প্রাণী। এটা সচরাচর দেখাও যায় না। আমি জীবনে এই প্রথম উট দেখলাম। তাই ফেসবুকের বন্ধুদেরও শেয়ার করলাম।’

>কোরবানির ঈদ এলেই গাবতলীর হাটে ওঠে উট আর দুম্বা
কোরবানির পশু হিসেবে কেউ কেউ উট-দুম্বা বেছে নেন
গাবতলীর হাটে এবারও উঠেছে উট ও দুম্বা
হাটে আসা দর্শনার্থীদের মধ্যে উট-দুম্বা নিয়ে উচ্ছ্বাস

গাবতলী হাটের ইজারাদার মো. লুৎফর রহমান প্রথম আলোকে বলেন, প্রতিবছরই হাটে উট-দুম্বা তোলা হয়। এবারও অল্প কিছু উট-দুম্বা এসেছে। পুরোদমে বেচাবিক্রি শুরু হলে উট-দুম্বা হাটে আরও আসবে।

১৯টি উটের জন্ম এ দেশে
ঢাকার মতিঝিলে বাংলাদেশ ব্যাংকের পেছনেই বাবে মদিনা দেওয়ানবাগীর উটের খামার। এখানে ২৭টি উট আছে। এর মধ্যে ৮টি উট রাজস্থান থেকে আনা হয়েছে। বাকিগুলো এই খামারেই জন্ম ও বড় হওয়া। এরা উচ্চতায় সাড়ে ৭ থেকে ৮ ফুট। সবচেয়ে ছোটটির বয়স ২ বছর, সবচেয়ে বড়টির বয়স ১০ বছর। ছোট-বড় মিলিয়ে ১০টা পুরুষ উট এবং বাকি ১৭টি মাদি উট। মরুভূমির পশু হলেও বাংলাদেশের আবহাওয়াতে ঘাস, ভুসি ও খড় খেয়ে উট বড় হচ্ছে।

খামারের তত্ত্বাবধায়ক মো. শাহার আলী ২০০৫ সাল থেকে এখানে কাজ করছেন। তিনি জানান, ২০০৪ সালে এই খামারে উট-দুম্বা পালন শুরু হয়। নবী ও রাসুলেরা উট পালতেন বলে স্মৃতি হিসেবে দেওয়ানবাগী পীরের ইচ্ছায় এখানে উট-দুম্বা পালা শুরু হয়।

শাহার আলী আরও বলেন, প্রতিবার দু-একটা বিক্রি হয়। এবারের বেচাকেনা এখনো শুরু হয়নি। খামারে আছে ৩২টি দুম্বা, একটি হরিণসহ ১১০টি প্রাণী। এগুলোরও লালনপালন এখানেই করা হয়।

খামারটিতে উটগুলো দেখাশোনা করতে আটজন কাজ করেন। তাঁরা জানান, সেপ্টেম্বর থেকে মার্চ মাস পর্যন্ত এদের প্রজননকাল। এ সময় উটগুলো একটু খ্যাপাটে থাকে। মরুভূমির প্রাণী হওয়ায় উটগুলো বৃষ্টির সময় একটু ভয় পায়।