মৃত্যু বদলে দিল যে গ্রামের জীবন

কেরোসিনের কুপিতেই কাজ চলত একসময়। এখন সেখানে জ্বলে সৌরবিদ্যুতের আলো। দুর্গম পাহাড়ি ঝরনা থেকে আনতে হতো খাবার পানি। আর এখন ঘরের কাছেই টিউবওয়েল। প্রাকৃতিক শৌচাগারের বদলে ঘরে ঘরে স্যানিটারি শৌচাগার। তৈরি হচ্ছে নতুন শিক্ষাপ্রতিষ্ঠান। গাড়ি আর মানুষ চলাচলের যোগ্য হয়ে উঠেছে রাস্তাঘাট। বদলে যাওয়ার এই স্বপ্নময় চিত্রটি হাটহাজারী উপজেলার ফরহাদাবাদ ইউনিয়নের মনাই ত্রিপুরাপাড়ার।

একসময় যেখানে নাগরিক সুযোগ-সুবিধা বলতে কিছুই ছিল না, এখন সেখানে আছে সব ধরনের নাগরিক সুবিধা। ২০১৮ সালের ২৬ আগস্ট এই গ্রামে অজ্ঞাত রোগে একই পরিবারের তিনজনসহ মারা যায় চার শিশু। এরপর থেকেই এখানে সুনজর পড়ে প্রশাসনের। বদলাতে শুরু করে এলাকার চিত্র।

প্রায় ৩ লাখ ৭০ টাকা ব্যয়ে প্রধান সড়ক থেকে প্রায় দুই কিলোমিটারের আলপথকে উন্নীত করা হয়েছে ১৫ ফুট প্রস্থের কাঁচা সড়কে। তৈরি হয়েছে আটটি কালভার্ট ও আটটি সেমিপাকা শৌচাগার। তা ছাড়া প্রধানমন্ত্রীর কার্যালয়ের ৯ লাখ ৬০ হাজার টাকা অর্থায়নে স্থাপন করা হয়েছে তিনটি গভীর নলকূপ, মন্দিরভিত্তিক স্কুল শিক্ষা কার্যক্রম চালু করতে করা হয়েছে টিনশেড ঘর, ব্যবস্থা করা হয়েছে সৌরবিদ্যুতের। এসব উন্নয়নের নেপথ্যে যাঁর পরিশ্রম, তিনি হলেন হাটহাজারী উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা (ইউএনও) মুহাম্মাদ রুহুল আমীন।

মুহাম্মাদ রুহুল আমীন বলেন, চট্টগ্রাম-খাগড়াছড়ি মহাসড়কের হাটহাজারীর উপজেলার ফরহাদাবাদ ইউনিয়নের ৩ নম্বর ওয়ার্ডে কাটিরহাট থেকে পশ্চিমে প্রায় ১১ কিলোমিটার দূরে মনাই ত্রিপুরাপাড়ার অবস্থান। এই পাহাড়ি গ্রামে আধুনিক নাগরিক জীবন বলতে কিছু ছিল না। কিন্তু এখন সেটি বদলে গেছে। প্রধানমন্ত্রীর কার্যালয় এবং চট্টগ্রাম জেলা প্রশাসকের আন্তরিকতা ও স্থানীয় সহযোগিতায় অনেক পরিবর্তন হয়েছে।

ইউএনও বলেন, ‘উন্নয়নের পূর্বশর্ত উন্নত যোগাযোগ। যোগাযোগব্যবস্থা ভালো না থাকলে সেখানে কোনো কাজ সহজে হয় না। তাই প্রথমেই তাদের যাতায়াতের আইলটি সড়কে উন্নীত করা হয়। তা ছাড়া শিক্ষাসহ অবকাঠামোগত নানা উন্নয়ন করা হয়।’

ত্রিপুরাপল্লির বাসিন্দা শচীন ত্রিপুরা বলেন, ‘এত দিন আমরা নাগরিক জীবনের সুবিধার বাইরে ছিলাম। এখন আমরা বিদ্যুৎ, সড়ক, নলকূপ, শিশুদের শিক্ষাসহ অনেক কিছু পেয়েছি। স্বপ্নের ঘোরের মধ্যে পাল্টে গেল আমাদের পাড়া।’

২০১৮ সালের অজ্ঞাত রোগে চার শিশুর মৃত্যুর পর জানা যায়, ত্রিপুরাপাড়ায় নাগরিক জীবন বলতে কিছু নেই। পাহাড়ি এই গ্রামে ৫৫টি পরিবারে বাস করে ৩৭৫ জন মানুষ। সেখানে ছিল না বিদ্যুৎ। মোবাইলে চার্জ দেওয়ার জন্য এখানকার মানুষদের আগে প্রতি ঘণ্টায় পাঁচ টাকা করে দিতে হতো। তবে উপজেলা প্রশাসনের উদ্যোগে এখন ত্রিপুরাপল্লিতে স্থাপন করা হয়েছে তিনটি বাতি এবং একটি মোবাইলে চার্জ দেওয়ার পয়েন্ট। পুরো পল্লিতে মাত্র একটি চায়ের দোকান আছে, সেখানেও এখন জ্বলছে সৌরবিদ্যুতের আলো।