বাসে মশার ওষুধ ছিটানো শুধু ঘোষণাতেই

বাস ছাড়ার আগে তো মশা মারার ওষুধ ছিটানোর কথা, পুরো বাক্য শেষ না হতেই জবাব এল। ঢাকা থেকে রংপুরগামী হানিফ পরিবহনের একটি বাসের চালকের সহকারী মো. হেলালের দাবি, দিনের বেলায় তো বাসের ভেতর মশা থাকে না। স্প্রে করে কী হবে।

গতকাল মঙ্গলবার বেলা সাড়ে ১১টায় গাবতলীতে হানিফ পরিবহনের বাস কাউন্টারে কথা হচ্ছিল হেলালের সঙ্গে। যাত্রী নিয়ে ঢাকা ছাড়ার আগে বাসটিতে মশা মারার ওষুধ অ্যারোসল স্প্রে (ছিটানো) হয়নি। হানিফ কাউন্টারেই কথা হয় যাত্রী রেজওয়ান মাহমুদের সঙ্গে, যাবেন দিনাজপুরে। তিনি বলেন, ‘দুই ঘণ্টা ধরে এই কাউন্টারে আছি। কোনো বাসে মশার ওষুধ স্প্রে করতে দেখিনি।’

পরে হানিফ পরিবহনের ব্যবস্থাপক মো. মোশাররফ হোসেন প্রথম আলোকে বলেন, ‘আমাদের কোম্পানির এসি বাসগুলোতে যাত্রার আগে মশার ওষুধ স্প্রে করা হয়। কিন্তু নন-এসিগুলো করা হয়নি। আজ (গতকাল) বিকেল বা সন্ধ্যার ট্রিপের বাসে মশার ওষুধ স্প্রে করা হবে।’

অথচ ডেঙ্গুর জীবাণুবাহী এডিস মশা দিনের বেলায়ই মানুষকে কামড়ায়। গতকাল সকাল ১০টা থেকে বেলা ১১টা পর্যন্ত গাবতলী থেকে সোহাগ পরিবহনের দুটি, ঈগল পরিবহনের একটি, সাকুরা পরিবহনের দুটি, শ্যামলী পরিবহনের চারটি বাস ছেড়ে যায়। এগুলোর একটিতেও যাত্রা শুরুর আগে মশা মারার ওষুধ স্প্রে করতে দেখা যায়নি।

গাবতলীর মতোই একই চিত্র দেখা গেছে সায়েদাবাদ বাস টার্মিনালে। বাস ছাড়ার আগে মশা মারার ওষুধ ছিটানোর কথা জানেনই না বেশির ভাগ চালক ও সহকারীরা। বেলা সাড়ে ১১টা থেকে বেলা ১টা পর্যন্ত সায়েদাবাদ বাস টার্মিনাল থেকে বিভিন্ন গন্তব্যে প্রায় ২৪টি গাড়ি ছেড়ে যায়। এর মধ্যে ১৫ জন গাড়ির চালক ও সহকারীর সঙ্গে কথা বলে প্রথম আলো। তাঁদের ১৩ জনই বলেন, বাস ছাড়ার আগে অ্যারোসল স্প্রে করার কথা কেউ তাঁদের বলেনি। আর দুটি গাড়ির চালক জানান, তাঁদের জানানো হয়েছে ওষুধ কিনে স্প্রে করতে হবে। তবে তাঁরা স্প্রে কেনেননি।

ঢাকা সড়ক পরিবহন মালিক সমিতির সিদ্ধান্ত অনুযায়ী গতকাল মঙ্গলবার থেকে দূরপাল্লার বাস ছাড়ার আগে অ্যারোসল স্প্রে করার কথা। এ বিষয়ে সমিতির সাধারণ সম্পাদক এনায়েত উল্যাহ প্রথম আলোকে বলেন, ‘সমিতির পক্ষ থেকে শুধু টার্মিনালে ওষুধ দেওয়া হচ্ছে। বাসের ভেতরে ওষুধ দিতে মালিকদের অনুরোধ করেছি। এটা তাঁদের দায়িত্ব।’

ডেঙ্গু জ্বর প্রতিরোধে ঈদযাত্রায় প্রতিটি বাস ছাড়ার আগে মশা নাশক অ্যারোসল স্প্রে করার জন্য মন্ত্রণালয় থেকে বাসমালিকদের চিঠি দেওয়ার কথা গত সোমবার সাংবাদিকদের জানান সড়ক পরিবহন ও সেতুমন্ত্রী ওবায়দুল কাদের।

ট্রেনের শুধু শীততাপনিয়ন্ত্রিত বগিতে ‘স্প্রে’

৫ আগস্ট ট্রেনে মশকনিধন কর্মসূচির উদ্বোধন করে রেলওয়ে কর্তৃপক্ষ। তবে যাত্রীরা বলছেন, ট্রেনে শুধু শীতাতপনিয়ন্ত্রণ বগিতে স্প্রে করছে রেলওয়ে কর্তৃপক্ষ।

গতকাল বেলা দুইটা থেকে বিকেল চারটা পর্যন্ত এই প্রতিবেদক ছিলেন কমলাপুর স্টেশনে। এর মধ্যে তিনটি ট্রেন ঢাকা ছেড়ে যায়। স্টেশনের ৫ নম্বর প্ল্যাটফর্মে কথা হয় রাজশাহীগামী সিল্ক সিটি এক্সপ্রেসের যাত্রী মাহির আবদুল্লাহর সঙ্গে। তিনি বলেন, মশার ওষুধ দিতেও বৈষম্য করছে রেল কর্তৃপক্ষ। শুধু এসি (শীততাপনিয়ন্ত্রিত) বগিতে ওষুধ দিচ্ছে। অথচ বেশিসংখ্যক যাত্রী যাতায়াত করেন সাধারণ বগিতে।

দেওয়ানগঞ্জগামী জামালপুর কমিউটারে কোনো এসি বগি নেই, যে কারণে ট্রেনটিতে অ্যারোসল স্প্রে করা হয়নি। সিলেটগামী কালনী এক্সপ্রেস ট্রেনের শুধু এসি বগিতে স্প্রে করতে দেখা গেছে।

তবে রেলওয়ের স্টেশন ব্যবস্থাপক আমিনুল হকের দাবি, কমলাপুর থেকে গতকাল সন্ধ্যা পর্যন্ত ছেড়ে যাওয়া ৩৮টি ট্রেনেই মশার ওষুধ ছিটানো হয়েছে। যাত্রীরা ট্রেনে ওঠার আগে বগির বাইরে ফগার মেশিন দিয়ে আর ভেতরে ছোট ফগার মেশিন দিয়ে ওষুধ ছিটানো হয়। নন-এসি বগিতে স্প্রে কেন করা হচ্ছে না, জানতে চাইলে তিনি দাবি করেন, ট্রেন প্ল্যাটফর্মে আনার আগে বগিগুলো অন্য জায়গায় পরিষ্কার করা হয়। তখন নন-এসি বগিতে ওষুধ ছিটানো হয়।

লঞ্চে ‘স্প্রে’ করতে দেখা গেছে

এডিস মশা নিধনে গতকাল সদরঘাট টার্মিনালে লঞ্চে মশার ওষুধ ছিটাতে দেখা গেছে। গতকাল বেলা দুইটা থেকে বিকেল চারটা পর্যন্ত টার্মিনালে নোঙর করে রাখা ১৩টি লঞ্চে মশা মারার ওষুধ স্প্রে করতে দেখা গেছে। বরিশাল, বরগুনা ও চাঁদপুরগামী লঞ্চের কেবিন ও ডেকে লঞ্চের কর্মচারীদের ওষুধ ছিটাতে দেখা গেছে। সুন্দরবন লঞ্চের পরিচালক মো. ঝন্টু মিয়া বলেছেন, নদীপথ হওয়ায় লঞ্চে প্রতিদিনই ওষুধ ছিটানো হচ্ছে। যাত্রীদেরও ময়লা-আবর্জনা নির্দিষ্ট স্থানে ফেলার অনুরোধ করা হচ্ছে।