নদীতে বাঁশের বেড়া দিয়ে মাছ চাষ

বগুড়ার ধুনট উপজেলার চিকাশি ইউনিয়নের সোনারগাঁ গ্রামের চার ব্যক্তির বিরুদ্ধে মানাস নদীর বুকে আড়াআড়ি বাঁশের বেড়া দিয়ে অবৈধভাবে মাছ চাষ করার অভিযোগ উঠেছে। এতে জেলেরা ওই নদীতে মাছ ধরতে পারছেন না এবং মাছের বংশবিস্তার ব্যাহত হচ্ছে।

স্থানীয় সূত্রে জানা গেছে, উপজেলার চিকাশি ও গোসাইবাড়ী দুটি ইউনিয়নের মধ্য দিয়ে বয়ে গেছে মানাস নদী। নদীটি মাছের জন্য উন্মুক্ত জলাশয় হিসেবে প্রশাসনিকভাবে ঘোষণা করা হয়েছে। এ অবস্থায় চিকাশি ইউনিয়নের সোনারগাঁ গ্রামে সেতুর উত্তর পাশে নদীর বুকে আড়াআড়িভাবে পৃথক পাঁচটি স্থানে বাঁশের বেড়া দেওয়া হয়েছে। সেই বাঁশের বেড়ার ওপরের অংশে অবৈধ কারেন্ট জাল দেওয়া হয়েছে। সোনারগাঁ গ্রামের নজরুল ইসলাম, রুবেল হোসেন, রমজান আলী ও বিনয় চন্দ্র শীল দুই বছর ধরে এভাবে বাঁশের বেড়া দিয়ে মাছ চাষ করছেন।

সরেজমিন দেখা যায়, চিকাশি ইউনিয়ন পরিষদ থেকে মানাস নদীর দূরত্ব প্রায় ১ কিলোমিটার। ওই নদী পারাপারের জন্য সোনারগাঁ গ্রামের কাছে একটি সেতু আছে। সেই সেতুর উত্তর পাশে প্রায় ৭০০ মিটার এলাকায় আড়াআড়িভাবে পরপর বাঁশের পাঁচটি বেড়া দেওয়া হয়েছে। এই বেড়ার মধ্যে তাঁরা অবৈধভাবে মাছ চাষ করছেন।

এলাকাবাসীর অভিযোগ, নদীর পাশ দিয়ে প্রায় ১০০ জেলে পরিবার বসবাস করে। তাঁরা মানাস নদীসহ স্থানীয় খাল ও বিলে মাছ ধরে বাজারে বিক্রি করে সংসার চালান। কিন্তু বর্তমানে নদীতে বেড়া দিয়ে মাছ চাষ করায় তাঁদের রোজগার বন্ধ হয়ে গেছে।

নদীর তীর দিয়ে যাওয়ার সময় ১০-১২ জনের সঙ্গে কথা বলে জানা যায়, এখন বর্ষাকাল। দেশিও প্রজাতির মাছ বংশবিস্তার করে। এ সময় বাঁশের বাঁধ দিয়ে বাধাগ্রস্ত করায় মাছ উন্মুক্তভাবে বিস্তার লাভ করতে পারছে না। তাঁরা অভিযোগ করে বলেন, বাঁশের বেড়া দিয়ে দখল করে নেওয়া নদীর স্থানে স্থানীয় বাসিন্দাদের নদীর পানিতে গোসল কিংবা কাপড় পরিষ্কার করতে দেওয়া হয় না। তাঁদের স্বাভাবিক কাজকর্ম ব্যাহত হচ্ছে। তাই তাঁরা ওই নদী দখলমুক্ত করতে উপজেলা প্রশাসনের হস্তক্ষেপ কামনা করছেন।

মাছচাষি নজরুল ইসলামের দাবি, নদীর মধ্যে তাঁদের জমি আছে। সেই জমিতে শুষ্ক মৌসুমে তাঁরা ধান চাষ করেন। বর্ষার সময় বাঁশের বাঁধ দিয়ে মাছ চাষ করা হয়। এতে কারও কোনো অসুবিধা হয় না। এই মাছ চাষ করতে তাঁদের অনেক পরিশ্রম ও অর্থ ব্যয় হয়েছে। এ মুহূর্তে কারও অভিযোগে বাঁশে বেড়া সরানোর কোনো সুযোগ নেই।

এই বিষয়ে আরেক মাছচাষি বিনয় চন্দ্র শীল বলেন, ‘প্রায় দুই মাস আগে নদীর বুকে আড়াআড়িভাবে বাঁশের তৈরি বেড়া দিয়ে মাছ চাষের ব্যবস্থা করেছি। এর আগে অনেকেই এভাবে নদীতে মাছ চাষ করেছেন। উন্মুক্ত জলাশয়ে বেড়া দিয়ে মাছ চাষ বিষয়ে আইন আমার জানা নেই। বিষয়টি অনিয়ম হলেও জীবিকার তাগিদে এ কাজ করেছি।’

ধুনট উপজেলা মৎস্য কর্মকর্তা মীর্জা ওমর ফারুক বলেন, উন্মুক্ত জলাশয়ে প্রতিবন্ধকতা সৃষ্টি করে মাছ চাষের কোনো অনুমতি নেই।