তিনটি ভবনে ধসের কারণ অবহেলা?

সরকারি হরগঙ্গা কলেজের ধসে পড়া তিনটি ভবন। যেকোনো সময় সম্পূর্ণ ভেঙে যেতে পড়ার আশঙ্কা করছেন শিক্ষার্থীরা।   প্রথম আলো
সরকারি হরগঙ্গা কলেজের ধসে পড়া তিনটি ভবন। যেকোনো সময় সম্পূর্ণ ভেঙে যেতে পড়ার আশঙ্কা করছেন শিক্ষার্থীরা। প্রথম আলো

ভবনের নিচ দিয়ে অতিরিক্ত পানিপ্রবাহ, প্রতিষ্ঠানটির ভেতরে বহুতল ভবনের পাইল এবং পুকুরপারের সুরক্ষা দেয়াল নির্মাণে ধীরগতির কারণে মুন্সিগঞ্জের সরকারি হরগঙ্গা কলেজের তিনটি ভবনের অংশবিশেষ ধসে পড়েছে বলে ধারণা করছেন প্রতিষ্ঠানটির শিক্ষক ও শিক্ষার্থীরা।

গত সোমবার বেলা তিনটার দিকে কলেজের স্কাউট ক্লাব, দ্বাদশ শ্রেণির একটি কক্ষ এবং ১৯৩১ সালে নির্মিত দোতলা মূল ভবনের অংশবিশেষ ধসে যায়।

মুন্সিগঞ্জ ফায়ার স্টেশনের জ্যেষ্ঠ কর্মকর্তা শফিউল ইসলাম প্রথম আলোকে বলেন, ভবনগুলো খুব ঝুঁকিপূর্ণ অবস্থায় আছে। যেকোনো সময় বড় ধরনের দুর্ঘটনা ঘটতে পারে। ভবনের তিন পাশ সিলগালা করে দেওয়া হয়েছে।

গতকাল মঙ্গলবার দুপুরে সরেজমিনে দেখা যায়, কলেজের পুকুরের পশ্চিম পাশে তিনটি ভবনের অংশবিশেষ ভাঙা অবস্থায় রয়েছে। পুকুরটির পশ্চিম ও দক্ষিণ পাশের রাস্তাও ধসে পড়েছে। তিনটি ক্ষতিগ্রস্ত ভবনকে ফিতা দিয়ে সিলগালা করে রেখেছেন ফায়ার সার্ভিসের কর্মীরা।

প্রত্যক্ষদর্শী শিক্ষার্থীরা জানান, এ ঘটনা এক দিনে হয়নি। ১০ তলা একাডেমিক ভবনের পাইলিংয়ের জন্য প্রতিদিন হ্যামার দিয়ে পাইল ড্রাইভ করা হচ্ছে। এতে প্রতিটি ভবনের ক্ষতি হচ্ছে। পুকুরপাড়ে যে সুরক্ষা দেয়াল বানানো হচ্ছে, তার কাজও ধীরগতিতে চলছে। আড়াই মাসে ৫০ ফুটের কাজ শেষ হচ্ছে না। এতে করে অনার্স ভবনে যাওয়ার রাস্তার মাটি নিচ থেকে সরে গেছে। পার্শ্ববর্তী মুন্সিগঞ্জ জেলা স্টেডিয়ামে সংস্কারকাজের জন্য খননযন্ত্রের পাইপের মাধ্যমে বালু ভরাট চলছিল। সেই পানি তীব্র গতিতে পুরোনো ভবন ও স্কাউটদের কক্ষের ভেতর দিয়ে গভীর সুড়ঙ্গ হয়ে কলেজের পুকুরে ঢোকে। এসব কারণে ভবনধসের ঘটনা ঘটেছে।

নাম প্রকাশ না করার শর্তে একাধিক শিক্ষার্থী জানান, স্টেডিয়ামে বালু ভরাটের সঙ্গে জেলা ছাত্রলীগের সভাপতি জড়িত। তাঁর খননযন্ত্রের মাধ্যমেই বালু ভরাটের কাজ চলছিল। তাঁরা পানি সরানোর ব্যবস্থা না করেই বালু ভরাট করছিল। স্টেডিয়ামের দক্ষিণ পাশ দিয়ে নালা বানিয়ে কলেজের পুকুরে পানি ছেড়ে দেওয়ায় এ দুর্ঘটনা ঘটেছে।

এ ব্যাপারে জেলা ছাত্রলীগের সভাপতি ফয়সাল মৃধা বলেন, খননযন্ত্রটি তাঁর, এটা সত্যি। তবে সেটা অন্য একজনকে ভাড়া দিয়েছেন। পানি কোন দিক দিয়ে ছাড়বে, এটা ঠিকাদারি প্রতিষ্ঠানের বিষয়। কলেজের ছাত্র হিসেবে তিনি কলেজের পাশ দিয়ে পানি ছাড়তে নিষেধ করেছিলেন। ঘটনার দিন বালু ভরাট বন্ধ করে দেওয়া হয়।

খননযন্ত্র দিয়ে বালু ভরাট ও কলেজের পাশ দিয়ে পানি ছাড়ার বিষয়ে এম জামান বিল্ডার্সের প্রকল্প পরিচালক আরমান চৌধুরী বলেন, গত কয়েক দিন খুব বৃষ্টি হয়েছে। কলেজের আশপাশের এলাকার পানিও সে পুকুরে গেছে। কলেজটির ভেতরে বহুতল ভবনের কাজ হচ্ছে। এ জন্য প্রতিদিন পাইল ড্রাইভের কাজ হচ্ছে। সাধারণত এমন ড্রাইভ করার আগে আশপাশে নিরাপত্তার ব্যবস্থা করা হয়। না হলে ছোট ভবনের ক্ষতি হয়। পাইল ড্রাইভ ও পুকুরে অতিরিক্ত পানির চাপের কারণে এমনটা হতে পারে।

কলেজটির উপাধ্যক্ষ অধ্যাপক নাছিমা আহম্মেদ বলেন, এ ঘটনায় ১২ সদস্যের একটি তদন্ত কমিটি গঠন করা হয়েছে। সার্বিক বিষয়টি স্থানীয় সাংসদ ও জেলা প্রশাসককে জানানো হয়েছে।

জেলা প্রশাসক মনিরুজ্জামান তালুকদার বলেন, কীভাবে পুরোনো ভবনটি রক্ষা করা যায়, এ বিষয়ে সংশ্লিষ্টদের সঙ্গে আলোচনা করা হবে। তদন্তে কারও গাফিলতি পাওয়া গেলে পরবর্তী সময়ে তাঁদের বিরুদ্ধে ব্যবস্থা নেওয়া হবে।