কুড়িগ্রাম ও গাইবান্ধায় কোরবানির পশুর হাটে বন্যার ধাক্কা

পড়াশোনার ফাঁকে বাড়িতে গরু পালনে সহযোগিতা করেছে এই শিশু। বিক্রির জন্য স্কুলের পোশাক পরেই বাবার সঙ্গে হাটে এসেছে সে। কিন্তু দাম এখনো তেমন ওঠেনি। তাই ক্রেতার আশায় অপেক্ষা। গতকাল গাইবান্ধা সদরের দারিয়াপুর হাটে।  ছবি: প্রথম আলো
পড়াশোনার ফাঁকে বাড়িতে গরু পালনে সহযোগিতা করেছে এই শিশু। বিক্রির জন্য স্কুলের পোশাক পরেই বাবার সঙ্গে হাটে এসেছে সে। কিন্তু দাম এখনো তেমন ওঠেনি। তাই ক্রেতার আশায় অপেক্ষা। গতকাল গাইবান্ধা সদরের দারিয়াপুর হাটে। ছবি: প্রথম আলো

কুড়িগ্রাম ও গাইবান্ধায় কোরবানির পশুর হাটে বন্যার নেতিবাচক প্রভাব পড়েছে। এ দুটি জেলার বন্যাকবলিত এলাকায় হাট তেমন জমেনি। হাটে কোরবানির পশু উঠলেও ক্রেতা তেমন নেই। পশুর দামও কম। এরপরও হাত খালি থাকায় বন্যার্ত লোকজন অন্যের সঙ্গে ভাগাভাগি করেও কোরবানি দিতে পারছেন না।

কুড়িগ্রাম সদর উপজেলার বন্যায় ক্ষতিগ্রস্ত এলাকার সবচেয়ে বড় হাট যাত্রাপুর। গাইবান্ধা সদর উপজেলার অন্যতম বড় পশুর হাট দারিয়াপুর। গতকাল মঙ্গলবার এ দুই স্থানেই হাটবার ছিল।

দুপুরে যাত্রাপুর হাটে গিয়ে দেখা যায়, অসংখ্য গরু উঠেছে, কিন্তু ক্রেতা তেমন নেই।

এ হাটের গরু বিক্রেতা আবদুল গফুর বলেন, ‘সকাল থাইকা বইসা আছি। কেউ দাম কয় না। গরু বিক্রি করতে না পারলে কী যে হইবো। বানে সব খাইয়া গেছে। গরুরে খাওয়ামু হেই পোয়াল নাই। মনে করছিলাম গরু বেইচা পোয়াল, বীজ, কালাই কিনমু। চরের মানষের এবার ঈদের আনন্দ নাই।’

হাটে আসা আইরমারীর চরের কৃষক সহিদুল ইসলাম বলেন, ‘বানের আগে ধানের দাম পাই নাই। ধান তুলতে তুলতে বান আইলো। এখন শুরু হইছে নদীভাঙন। আমরা কেমনে বাঁচি। একটা গরু নইয়া আছিলাম। হাটে কম দাম কয়। ফিরায় নইয়া যাইতাসি।’

গতকাল যাত্রাপুর ইউনিয়নের রলাকাটার চরে গিয়ে দেখা যায়, বন্যায় বিভিন্ন স্থানে ঘর ভেঙে পড়ে আছে।

এ চরের অফিদুল ইসলাম বলেন, ২০ দিন পানিতে থাকতে থাকতে ঘরের গোড়া পচে পড়ে যায়। এ গ্রামে এ রকম ৬০টি পরিবার রয়েছে। এদের ঈদের আনন্দ নেই বললেই চলে। তিনি বলেন, ‘ঘর তোলারই ট্যাকা নাই। ঈদ করি কেমনে। গরু ব্যাচে ঘর তুলমো।’

ঘুরে আরও দেখা যায়, চরে কোনো ফসল নেই। সব বন্যায় নষ্ট হয়ে গেছে।

কৃষক খইমুদ্দিন বলেন, ‘কালাইয়ের বীজ থুছিলাম। এমন পানি হইছে, বীজ ভাসি গেইছে। এ্যালা বীজ কিনমো কী দিয়া। ঈদ করমো কেমন করি।’

একই দিন গাইবান্ধা সদর উপজেলার দারিয়াপুর হাট ঘুরে দেখা যায়, হাটে পশুর আমদানি অনেক। একদিকে সারিবদ্ধভাবে গরু, অন্যদিকে ছাগল বেঁধে রাখা হয়েছে। পাশে বিক্রেতারা দাঁড়িয়ে আছেন। ক্রেতারা ঘোরাফেরা করছেন। কেউ পশুর দাম হাঁকছেন, কেউ দাম যাচাই-বাছাই করছেন।

হাটে আসা খোলাহাটি গ্রামের ময়নুল কবির বলেন, ‘হাটে দুটি গরু বিক্রি করতে এসেছিলাম। কিন্তু ক্রেতার চেয়ে বিক্রেতা বেশি। বন্যায় ক্ষতিগ্রস্ত হয়ে মানুষের হাত খালি। গরু-ছাগলই একমাত্র ভরসা। আমদানি বেশি হওয়ায় পশুর দাম কম। গরুর কম দাম করায় বিক্রি করতে পারিনি।’

আবুল হোসেন বলেন, ‘একটি গরু বিক্রি করতে এসেছিলাম। ক্রেতারা দেখে, কিন্তু দাম করে না।’

দারিয়াপুর গ্রামের খামারমালিক তপন চন্দ্র বলেন, ‘বন্যায় এসব এলাকার কৃষকেরা অনেক ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছেন। তাই ক্ষতি সামলে নিতে অনেক কৃষক গরুর ওপর নির্ভরশীল হয়ে পড়েছেন। ফলে এবার হাটে গরুর আমদানি বেশি। এ কারণে খামারমালিকদের এবার লোকসান গুনতে হবে।’

দারিয়াপুর হাটের ইজাদার কালাম মিয়া বলেন, হাটে পর্যাপ্ত গরু-ছাগল উঠছে। তবে বন্যার কারণে মানুষের হাতে টাকাপয়সা নেই। তাই বিক্রি কম হচ্ছে। ঈদের আরও কয়েক দিন রয়েছে। পরের হাটগুলো থেকে আরও বিক্রি বাড়তে পারে।

গতকাল কুন্দেরপাড়া গ্রামে গিয়ে দেখা যায়, অনেকে বাড়ির উঠোনে ত্রাণের জন্য অপেক্ষা করছেন। কোনো নৌকা দেখলেই এগিয়ে আসছেন—ঈদের আগে যদি কিছু পাওয়া যায় সে আশায়।