খুলনায় গবাদিপশুর ঘাটতি ৩৩ হাজার

খুলনায় চাহিদার তুলনায় গবাদিপশু আছে কম। ফলে কোরবানির জন্য পশুর চাহিদা মেটাতে অন্য জেলাগুলোর ওপর নির্ভর করতে হচ্ছে। এমন পরিস্থিতিতে তুলনামূলক বেশি দামে কোরবানির পশু কিনতে হবে বলে আশঙ্কা করছেন অনেকে।

পশুর এমন সংকট নিয়েই এবার খুলনা জেলায় বসেছে ২৮টি কোরবানির পশুহাট। গতকাল মঙ্গলবার থেকে খুলনা মহানগরের পাশাপাশি ৯ উপজেলায় এসব হাটের কার্যক্রম শুরু হয়েছে।

জেলা প্রাণিসম্পদ কার্যালয় সূত্রে জানা গেছে, এ বছর খুলনায় কোরবানিযোগ্য গবাদিপশু পালন করা হয়েছে ৫১ হাজার ২৯৪টি। কিন্তু জেলায় কোরবানির পশুর চাহিদা রয়েছে ৮৪ হাজার ৭২৫টি। সে হিসাবে, জেলায় গবাদিপশুর ঘাটতি রয়েছে ৩৩ হাজার ৪৩১টি। গত বছর জেলায় কোরবানি করা হয়েছিল ৮৪ হাজার পশু।

জেলা প্রাণিসম্পদ কর্মকর্তারা বলছেন, প্রতিবছরই এমন ঘাটতি থাকে। আর ওই ঘাটতি পূরণ হয় যশোর, কুষ্টিয়া, মেহেরপুরসহ আশপাশের বিভিন্ন জেলা থেকে নিয়ে আসা গবাদিপশু দিয়ে। ফলে কোনো বছরই জেলায় কোরবানির সময় গবাদিপশুর ঘাটতি হয় না।

তবে গতবার শেষ মুহূর্তে খুলনা নগরে পশুহাটে গরুর সংকট দেখা দিয়েছিল। ঈদের আগের দিন রাতে অনেক বেশি দাম দিয়ে ছোট ছোট গরু কিনে কোরবানি করতে হয়েছিল অনেকেরই। এমনই একজন খুলনার গল্লামারী এলাকার সিরাজুল ইসলাম। তিনি বলেন, কোরবানির জন্য প্রতিবছর সাধারণত তিনি শেষ দিনে গরু কেনেন। তবে গতবার শেষ দিন বিকেলে গিয়ে দেখতে পারেন, হাটে ক্রেতার তুলনায় গরু কম। রাতে আরও গরু আসবে বলে বিক্রেতারা জানিয়েছিলেন। কিন্তু রাত সাড়ে ১০টা পর্যন্ত অপেক্ষা করেও হাটে নতুন করে আর গরু আসেনি। ফলে অপেক্ষাকৃত বেশি দাম দিয়ে ছোট গরু কিনে তাঁকে বাড়ি ফিরতে হয়েছিল। গত বছর ঈদের দিন ভোর পর্যন্ত অপেক্ষা করে অনেকে গরু কিনেছিলেন বলে জানান তিনি।

এদিকে গত বছর জেলায় যে পরিমাণে গবাদিপশু পালন করা হয়েছিল, এ বছর তার চেয়ে অনেক বেশি পরিমাণ উৎপাদন হয়েছে। ধীরে ধীরে উৎপাদনের সংখ্যা বাড়ছে। অন্যদিকে, প্রতিবছর খুলনায় কোরবানির পশুর চাহিদা বাড়ছে ৫ থেকে ৭ শতাংশ হারে।

প্রাণিসম্পদ কার্যালয়ের তথ্যানুযায়ী, এ বছর খুলনায় কোরবানিতে গরুর চাহিদা রয়েছে ৪৫ হাজার ৭০০টি। এর বিপরীতে জেলায় পালন করা হয়েছে ৩৪ হাজার ৯৪১টি গরু। আর জেলায় ২৫টি মহিষের চাহিদা রয়েছে। তার বিপরীতে কোরবানিযোগ্য কোনো মহিষ পালন করা হয়নি। ৩৮ হাজার ছাগলের চাহিদার বিপরীতে মজুত আছে ১৫ হাজার ১০৮টি। তবে এক হাজার ভেড়ার চাহিদার বিপরীতে উদ্বৃত্ত আছে ২৪৫টি।

জানতে চাইলে খুলনা জেলা প্রাণিসম্পদ কর্মকর্তা মো. আব্দুল হান্নান বলেন, জেলার উপকূলীয় কয়রা, পাইকগাছা ও দাকোপ তিনটি উপজেলায় পশুর উৎপাদন অত্যন্ত কম। কারণ, লবণাক্ততার কারণে সেখানে ঘাসসহ অন্য কোনো গোখাদ্য উৎপাদিত হয় না। তা ছাড়া সব জমিতে মাছের ঘের করায় চারণভূমিও নেই। এসব কারণে ওই এলাকার মানুষ পশু উৎপাদনে তুলনামূলক কম আগ্রহী। তিনি বলেন, মেহেরপুর, কুষ্টিয়া, যশোরসহ অন্যান্য জেলায় পশু পালন হয় চাহিদার তুলনায় বেশি। এ কারণে কোরবানির সময় এসব স্থান থেকে পশু এনে খুলনার হাটগুলোতে বিক্রি করেন ব্যবসায়ীরা। ফলে হাটে পশুর সংকট হবে না বলে আশা করছেন তিনি।

কোরবানির পশুর হাট

কোরবানির ঈদ উপলক্ষে খুলনা মহানগরসহ জেলার বিভিন্ন এলাকায় এবার পশুর হাট বসছে ২৮টি। এর মধ্যে জেলার ৯টি উপজেলায় ২৭টি ও মহানগরে বসবে একটি কোরবানির পশুর হাট।

খুলনা সিটি করপোরেশনের আয়োজনে নগরের জোড়াগেট এলাকায় কোরবানির পশুর হাট বসেছে গতকাল মঙ্গলবার থেকে। এটি খুলনা বিভাগের সবচেয়ে বড় ও মহানগরের একমাত্র কোরবানির পশুর হাট। এ হাট চলবে ঈদের দিন সকাল ৬টা পর্যন্ত। অনেক জায়গায় কয়েক দিন আগ থেকেই শুরু হয়েছে পশু কেনাবেচা।

খুলনা জেলা প্রশাসন কার্যালয় ও প্রাণিসম্পদ কার্যালয় সূত্রে জানা গেছে, এ বছর ফুলতলা উপজেলায় বসবে দুটি পশুহাট। এর মধ্যে একটি স্থায়ী ও অন্যটি অস্থায়ী। দিঘলিয়া উপজেলায় বসছে চারটি পশুর হাট। আর তেরখাদা, রূপসা ও দাকোপ উপজেলায় হাট বসছে দুটি করে। কয়রা ও ডুমুরিয়ায় তিনটি করে। এ ছাড়া পাইকগাছায় পাঁচটি ও বটিয়াঘাটায় চারটি পশুর হাট বসবে।