টোল ৫ টাকা, আদায় হচ্ছে ৫০

বিআইডব্লিউটিএর পন্টুন ব্যবহার করায় যাত্রীদের অতিরিক্ত পাঁচ টাকা করে দিতে হয়। সম্প্রতি মঠবাড়িয়ার বড়মাছুয়া ঘাটে। ছবি: প্রথম আলো
বিআইডব্লিউটিএর পন্টুন ব্যবহার করায় যাত্রীদের অতিরিক্ত পাঁচ টাকা করে দিতে হয়। সম্প্রতি মঠবাড়িয়ার বড়মাছুয়া ঘাটে। ছবি: প্রথম আলো

পিরোজপুরের মঠবাড়িয়ার বলেশ্বর নদের বড় মাছুয়া আন্তবিভাগীয় খেয়াঘাটে নির্ধারিত টোলের চেয়ে অতিরিক্ত টাকা আদায়ের অভিযোগ পাওয়া গেছে। ইজারাদারের কাছ থেকে ইজারা (সাবলিজ) নিয়ে কয়েকজন ৫ টাকার ভাড়া ৫০ টাকা পর্যন্ত আদায় করছেন।

মঠবাড়িয়ার বড় মাছুয়া ও বাগেরহাটের শরণখোলা উপজেলার রায়েন্দা বাজার সীমানায় বলেশ্বর নদ ট্রলারে পারাপার হতে হয়। এ খেয়াঘাট থেকে প্রতিদিন খুলনা, বাগেরহাট, মোংলা, মোড়েলগঞ্জ, শরণখোলা, মঠবাড়িয়া, বরগুনা, পাথরঘাটা, বামনাসহ দক্ষিণাঞ্চলের বিভিন্ন এলাকার সহস্রাধিক মানুষ যাতায়াত করে। খেয়া পারাপারে সরকার–নির্ধারিত টোল জনপ্রতি ৫ টাকা এবং মোটরসাইকেল চালকসহ ১০ টাকা।

খোঁজ নিয়ে জানা যায়, ইজারাদার জনপ্রতি ৫০ টাকা এবং মোটরসাইকেল চালকসহ ১০০ থেকে ১১০ টাকা করে আদায় করছেন। বলেশ্বর নদের দুই তীর বড় মাছুয়া ও রায়েন্দা খেয়াঘাট–সংলগ্ন টোল চার্ট বোর্ড টাঙিয়ে নির্ধারিত টোল আদায়ের নিয়ম থাকলেও তা মানা হচ্ছে না। এ ছাড়া যাত্রীদের ওঠা-নামার জন্য ইজারাদারের ঘাট নির্মাণের নিয়ম থাকলেও তাঁরা ঘাট নির্মাণ না করে বড় মাছুয়া ও রায়েন্দার বিআইডব্লিউটিএর সরকারি পন্টুন ব্যবহার করছেন। এতে খেয়ার প্রত্যেক যাত্রীকে অতিরিক্ত ৫ টাকা গুনতে হচ্ছে।

খুলনা বিভাগীয় কমিশনারের কার্যালয় থেকে বাংলা ১৪২৬ সনের জন্য বড় মাছুয়া আন্তবিভাগীয় খেয়াঘাটটি ২৪ লাখ ৫৫ হাজার ৯৪৮ টাকায় সর্বোচ্চ দরদাতা হিসেবে উপজেলার বড় মাছুয়া ইউনিয়ন পরিষদের ৪ নম্বর ওয়ার্ডের সদস্য কাইয়ুম হাওলাদার ইজারা পান।

স্থানীয় কয়েকজন অভিযোগ করেন, নিয়ম না থাকলেও ঘাটটি সাবলিজ দেওয়া হয়েছে। ঘাটের লোকজন অতিরিক্ত টাকা আদায় করছেন। উপজেলার উদয়তারা বুড়িরচর গ্রামের মোজাম্মেল হক (৭০) বলেন, ‘আমি প্রায়ই এই খেয়া পার হয়ে শরণখোলা আত্মীয়ের বাড়িতে যাওয়া-আসা করি। পন্টুন ভাড়া ৫ টাকা ও খেয়া ভাড়া ৫০ টাকা দিতে হয়। কখনো ভাড়া কম দিতে চাইলে খেয়াঘাটের লোকজন খারাপ আচরণ করেন।’

মঠবাড়িয়া পৌরসভার বাসিন্দা আয়শা খানম বলেন, কয়েক বছর ধরে ইজারাদার অধিক মুনাফা পেয়ে খেয়াঘাটটি সাবলিজ দেওয়ায় যাত্রীদের অতিরিক্ত টোল দিতে হচ্ছে। এ ছাড়া যাত্রীদের সঙ্গে দুই থেকে তিন কেজি ওজনের মালামাল থাকলে আরও অতিরিক্ত ৩০-৪০ টাকা দিতে হয়।

উপজেলার খেজুরবাড়িয়া গ্রামের আল আমিন তালুকদার জানান, যাত্রীদের প্রতি ২০ কেজি মালামালের জন্য ৮০ থেকে ১০০ টাকা, মোটরসাইকেলের জন্য ১০০ থেকে ১২০ টাকা এবং একটি ছাগল পারাপারের জন্য ১৫০ থেকে ২০০ টাকা ও একটি গরুর জন্য ৩০০ থেকে ৪০০ টাকা গুনতে হয়।

সাবলিজ দেওয়ার কথা স্বীকার করে খেয়াঘাটের ইজারাদার কাইয়ুম হাওলাদার বলেন, শিগগিরই দুই পাড়ে যাত্রী ও পণ্য পারাপারের তালিকা টাঙানো হবে। সরকার–নির্ধারিত টোল নিলে লোকসান গুনতে হয়। তাই নির্ধারিত টোলের চেয়ে বেশি টাকা নিতে হচ্ছে।

খেয়াঘাটের ইজারাদারদের বিরুদ্ধে সরকার–নির্ধারিত টোলের চেয়ে অতিরিক্ত টাকা আদায়ের অভিযোগ রয়েছে বলে জানান উপজেলা পরিষদের চেয়ারম্যান রিয়াজ উদ্দিন আহমেদ। তিনি বলেন, ‘ইতিমধ্যে সংশ্লিষ্ট কর্তৃপক্ষের সঙ্গে কথা বলেছি। দ্রুততম সময়ের মধ্যে সরকার–নির্ধারিত টোলের তালিকা টাঙানো হবে, যাতে যাত্রীদের অতিরিক্ত টাকা দিতে না হয়।’

খুলনার অতিরিক্ত বিভাগীয় কমিশনার (রাজস্ব) ও আন্তবিভাগীয় খেয়াঘাট ইজারা কমিটির আহ্বায়ক সুবাস চন্দ্র সাহা বলেন, সরকার অনুমোদিত টোলের তালিকা না টাঙিয়ে অতিরিক্ত টাকা আদায় দণ্ডনীয় অপরাধ। এ বিষয়ে তদন্ত করে ব্যবস্থা নেওয়া হবে।