সড়ক বিভাজকে থাকা গাছগুলো কাটল কে?

সড়ক বিভাজকে থাকা গাছ কেটে ফেলার পর পড়ে রয়েছে শিকড়। গতকাল দুপুর সিলেট-‍সুনামগঞ্জ সড়কের সুবিদবাজার এলাকায়।  ছবি: প্রথম আলো
সড়ক বিভাজকে থাকা গাছ কেটে ফেলার পর পড়ে রয়েছে শিকড়। গতকাল দুপুর সিলেট-‍সুনামগঞ্জ সড়কের সুবিদবাজার এলাকায়। ছবি: প্রথম আলো

সিলেট নগরের সুবিদবাজার এলাকায় সড়ক বিভাজকে সারিবদ্ধভাবে দাঁড়িয়ে থাকা বড় বড় ২০টি উইপিংগাছ কেটে ফেলা হয়েছে। পাশাপাশি উপড়ে ফেলা হয়েছে একই প্রজাতির আরও ৫টি ছোট গাছের চারাও। কিন্তু এ গাছ কে বা কারা কেটেছে, এটি খোদ সিটি করপোরেশন কর্তৃপক্ষও জানে না বলে দাবি করেছে।
গতকাল দুপুরে সরেজমিনে দেখা গেছে, সিলেট-সুনামগঞ্জ সড়কের সুবিদবাজার অংশের বিভাজকে অন্তত আধা কিলোমিটারব্যাপী দাঁড়িয়ে থাকা উইপিংগাছ কেটে ফেলায় স্থানটি এখন অনেকটাই সৌন্দর্যহীন হয়ে পড়েছে। সদ্য কাটা গাছের গোড়াগুলো এখনো দৃশ্যমান রয়েছে। বিভাজকের মাঝখানে বেশ কতগুলো স্ট্যান্ড বিজ্ঞাপনী বিলবোর্ড দাঁড়িয়ে রয়েছে। সেসব বিলবোর্ডে দুটো মুঠোফোন নম্বর দিয়ে লেখা রয়েছে-‘ফর অ্যাডভারটাইজমেন্ট’।
বিজ্ঞাপনী সংস্থার বিলবোর্ডে থাকা মুঠোফোন নম্বরে যোগাযোগ করে জানা যায়, সিটি করপোরেশনের সঙ্গে চুক্তিবদ্ধ হয়ে তারা বিভাজকে বিলবোর্ড সাঁটিয়েছে বেশ কয়েক বছর আগে। এ প্রতিষ্ঠানটি হচ্ছে ‘আর্ট সাইন’। তারা কোনো গাছ কাটেনি। প্রতিষ্ঠানের ব্যবস্থাপক হাবিবুর রহমান জানান, এ সড়কের বিভাজকে তাঁদের ৪০টি স্ট্যান্ড বিলবোর্ড রয়েছে। এ সড়ক বিভাজকে নতুনভাবে সৌন্দর্যবর্ধনের অংশ হিসেবে কিছুদিন আগে সিটি কর্তৃপক্ষ তাদের বিলবোর্ড অপসারণ করতে বলেছে। এরই মধ্যে তারা অপসারণ কাজও শুরু করেছে।
সিটি করপোরেশন ও আনন্দ নিকেতন নামের একটি শিক্ষাপ্রতিষ্ঠান সূত্রে জানা গেছে, কয়েক দিন আগে সিটি মেয়র আরিফুল হক চৌধুরী আনন্দ নিকেতনে গিয়েছিলেন। তখন তাঁর সঙ্গে সুবিদবাজার এলাকার সড়ক বিভাজকে সৌন্দর্যবর্ধন করা নিয়ে ‘আনন্দ নিকেতন’ কর্তৃপক্ষের মৌখিক আলোচনা হয়। সে আলোচনার সূত্র ধরে ওই বিভাজকে কৃষ্ণচূড়া ও রাধাচূড়াগাছের ১২৫টি চারা রোপণের পাশাপাশি আলোকসজ্জা করারও সিদ্ধান্ত হয়। আগামী বৃহস্পতিবার থেকে এসব চারা রোপণের কাজ শুরু হবে এবং এটি করা হবে শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানের অর্থায়নে। এরপরই এসব গাছ কাটা হয়। তবে কারা এ গাছ কেটেছে, এ নিয়ে পরস্পরবিরোধী বক্তব্য পাওয়া গেছে।
সিটি করপোরেশনের কর আদায়কারী কর্মকর্তা গৌতম রায় জানান, আনন্দ নিকেতন এখানে নতুন করে গাছের চারা রোপণ করে সৌন্দর্যবর্ধন কাজ করবে। সম্ভবত তারাই এসব গাছ কেটেছে। আর আনন্দ নিকেতনের প্রশাসনিক কর্মকর্তা হাবিবুর রহমান বলেন, ‘গাছ কাটার কোনো অধিকার আমাদের নেই। আমাদের প্রতিষ্ঠানের শিক্ষার্থীরা নিজেদের টাকায় বরং নানা সময়ে নগরের বিভিন্ন সড়ক বিভাজকে গাছ লাগিয়ে আসছে। বিভাজকের গাছগুলো সিটি করপোরেশন কর্তৃপক্ষ কেটেছে।’
পরিবেশবাদী সংগঠন ভূমিসন্তান বাংলাদেশের সমন্বয়ক আশরাফুল কবীর প্রথম আলোকে বলেন, ‘উইপিংগাছগুলো রেখেও সৌন্দর্যবর্ধন করা যেতে পারত। এসব গাছের ফাঁকে ফাঁকে কৃষ্ণচূড়া, রাধাচূড়া কিংবা অন্য গাছের চারা রোপণ করা যেত। অথবা যদি একান্তই সরানোর প্রয়োজন হতো, তাহলে এসব গাছ গোড়াসহ অন্যত্র সরিয়ে প্রতিস্থাপন করেও রোপণ করা যেত। এভাবে গাছ কাটার কোনো মানে হয় না।’
সিটি করপোরেশনের একটি সূত্র নিশ্চিত করেছে, গাছগুলো আসলে সিটি করপোরেশনের পরিচ্ছন্নতা শাখার কর্মীরাই কেটেছে। এখন জানাজানি হওয়ায় বিষয়টি আড়ালের চেষ্টা চলছে।
এ ব্যাপারে সিটি করপোরেশনের মেয়র আরিফুল হক চৌধুরী প্রথম আলোকে বলেন, ‘সড়ক বিভাজকে সেই অর্থে কোনো গাছ ছিল না। এটি বিবেচনায় নিয়েই আনন্দ নিকেতন কর্তৃপক্ষ সেখানে নতুনভাবে ফুল গাছের পাশাপাশি নিমসহ পরিবেশবান্ধব বেশ কিছু গাছের চারা রোপণের উদ্যোগ নিয়েছে। এটি পরিবেশের ভারসাম্য রক্ষার ক্ষেত্রে খুবই ইতিবাচক বিষয়। শুনেছি, বিভাজক থেকে কিছু বিনষ্ট হয়ে যাওয়া গাছ অপসারণ করা হয়েছে। বিষয়টি বিস্তারিত খোঁজ নিয়ে দেখা হবে।’