পুলিশ বলছে 'বন্দুকযুদ্ধ', স্বজনদের দাবি 'হত্যা'

প্রতীকী ছবি
প্রতীকী ছবি

যশোরে বাড়ির সামনে থেকে এক যুবককে তুলে নিয়ে গুলি করে হত্যার অভিযোগ উঠেছে পুলিশের বিরুদ্ধে। নিহত যুবকের নাম শিশির ঘোষ (২৮)। তবে পুলিশের দাবি, ‘বন্দুকযুদ্ধে’ শিশির নিহত হয়েছেন। গতকাল মঙ্গলবার রাতে যশোর সদর উপজেলার মাহিদিয়া গ্রামে এ ঘটনা ঘটে।

নিহত শিশির যশোর শহরের ষষ্ঠীতলাপাড়ার নিত্য ঘোষের ছেলে। শিশিরের এক বছরের একটি ছেলেসন্তান রয়েছে। এর আগেও পুলিশ তাঁর পায়ে গুলি করেছিল। শিশিরের ভাই প্রদীপ ঘোষ ২০১২ সালে বোমার আঘাতে নিহত হন। প্রদীপ নিহত হওয়ার ঘটনায়ও সন্দেহের তির পুলিশের দিকে।

আজ বুধবার দুপুরে যশোর জেনারেল হাসপাতাল থেকে ময়নাতদন্ত শেষে শিশিরের লাশ নিয়ে পরিবারের স্বজনেরা প্রেসক্লাবের সামনে অবস্থান নেন। তাঁরা পুলিশের বিরুদ্ধে হত্যার অভিযোগ করেন।


নিহত শিশিরের কাকা সুনীল ঘোষ অভিযোগ করে বলেন, ‘গতকাল রাত সাড়ে আটটার দিকে পুলিশ বাড়ির সামনে থেকে শিশিরকে তুলে নিয়ে যায়। অস্ত্র উদ্ধারের নামে তাকে যশোর সদর উপজেলার মাহিদিয়া গ্রামের একটি ইটভাটার পাশে নিয়ে গুলি করে হত্যা করে লাশ হাসপাতালের মর্গে রেখে গেছে। সকালে আমরা তার লাশ পেয়েছি। আমি পুলিশের বিরুদ্ধে আদালতে হত্যা মামলা করব। তাতে আমার মরণ হলে হবে।’

আজ বুধবার সকালে কাকা সুনীল ঘোষ সামাজিক যোগাযোগমাধ্যম ফেসবুক লাইভে গিয়ে মানবাধিকার সংস্থা ও সরকারের দৃষ্টি আকর্ষণ করে দোষী পুলিশ কর্মকর্তাদের বিরুদ্ধে ব্যবস্থা নেওয়ার দাবি জানান। তিনি পুলিশের বিরুদ্ধে হত্যা মামলা করারও ঘোষণা দেন। প্রথম আলোর কাছে মুঠোফোনে একই অভিযোগ করেন তিনি।

অভিযোগ অস্বীকার করে যশোর কোতোয়ালি থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা (ওসি) মো. মনিরুজ্জামান বলেন, নিহত শিশিরের স্বজনদের অভিযোগ সত্য নয়। প্রকৃত অর্থে শিশির পুলিশের তালিকাভুক্ত সন্ত্রাসী ছিলেন। তাঁর বিরুদ্ধে থানায় ১৮টি মামলা রয়েছে। এর মধ্যে হত্যা মামলা চারটি, অস্ত্র নিয়ন্ত্রণ আইনে পাঁচটি, বিস্ফোরক দ্রব্য নিয়ন্ত্রণ আইনে চারটি, চাঁদাবাজির অভিযোগে একটি ও অন্যান্য আইনে আরও চারটি মামলা রয়েছে।

পুলিশের ভাষ্য, গতকাল রাত সাড়ে ১০টার দিকে পুলিশের গোয়েন্দা শাখা (ডিবি) চারটি ককটেলসহ শিশির ঘোষকে গ্রেপ্তার করে কোতোয়ালি থানায় নিয়ে যায়। এ বিষয়ে বিস্ফোরক দ্রব্য নিয়ন্ত্রণ আইনে একটি মামলা করে পুলিশ। প্রাথমিক জিজ্ঞাসাবাদে শিশির স্বীকার করেন যে তাঁর কাছে আগ্নেয়াস্ত্র রয়েছে। কোতোয়ালি থানার পুলিশ ও ডিবির যৌথ দল তাঁকে নিয়ে সদর উপজেলার মাহিদিয়া গ্রামের একটি ইটভাটায় অস্ত্র উদ্ধার অভিযানে নিয়ে যায়। সেখানে তাঁর সহযোগীরা পুলিশকে লক্ষ্য করে গুলি ছোড়ে। পুলিশও পাল্টা দুটি গুলি ছোড়ে। সন্ত্রাসীরা পালিয়ে যায়। পরে গুলিবিদ্ধ অবস্থায় শিশিরকে উদ্ধার করে যশোর জেনারেল হাসপাতালে নেওয়া হলে জরুরি বিভাগের চিকিৎসকেরা তাঁকে মৃত ঘোষণা করেন। ঘটনাস্থল থেকে একটি ওয়ান শুটারগান ও দুটি গুলি উদ্ধার করা হয়েছে।

শিশিরের বিরুদ্ধে মামলা থাকার কথা স্বীকার করে কাকা সুনীল ঘোষ বলেন, ‘শিশিরের বিরুদ্ধে ১০ থেকে ১২টি মামলা রয়েছে। কিন্তু সেগুলোয় সে জামিনে ছিল। তার বিরুদ্ধে আদালতের কোনো গ্রেপ্তারি পরোয়ানা ছিল না। স্থানীয় রাজনৈতিক প্রতিপক্ষের দ্বন্দ্বের শিকার হয়েছে শিশির। এর আগে ২০১৭ সালের শেষ দিকে পুলিশ তাকে ধরে নিয়ে হাত ও পায়ে গুলি করেছিল। আর এবার একেবারে মাথায় গুলি করেছে।’

সুনীল ঘোষ অভিযোগ করেন, শিশিরের ভাই প্রদীপ ঘোষকেও পুলিশ হত্যা করে বোমা বানাতে গিয়ে নিহত হয়েছেন বলে নাটক সাজিয়েছিল।

প্রদীপ নিহত হওয়ার ঘটনায় পুলিশের বিরুদ্ধে অভিযোগের বিষয়ে জানতে চাইলে ওসি মনিরুজ্জামান বলেন, ‘আমি নতুন এসেছি। বিষয়টি আমার জানা নেই।’