মাগুরায় পুলিশের ধাওয়ায় আ.লীগ নেতার মৃত্যু: এসআই-কনস্টেবল প্রত্যাহার

মাগুরা
মাগুরা

মাগুরার শ্রীপুরে পুলিশের ধাওয়া খেয়ে নদীতে ঝাঁপিয়ে পড়ে আওয়ামী লীগের নেতা আমিরুল ইসলামের মৃত্যুর ঘটনায় দুই পুলিশ সদস্যকে প্রত্যাহার করা হয়েছে। বুধবার দুপুরে তাঁদের প্রত্যাহার করে জেলা পুলিশ কর্তৃপক্ষ। পরে তাঁদের জেলা পুলিশ লাইনে যুক্ত করা হয়েছে।

প্রত্যাহার হওয়া দুই পুলিশ সদস্য হলেন শ্রীপুর পুলিশের গোয়েন্দা শাখার (ডিবি) উপপরিদর্শক (এসআই) ওলিয়ার রহমান ও কনস্টেবল বুলবুল ইসলাম।

কুমার নদে নিখোঁজের ১৫ ঘণ্টা পর বুধবার সকাল সাড়ে নয়টার দিকে আমিরুল ইসলামের লাশ উদ্ধার করে ফায়ার সার্ভিসের একটি ডুবুরি দল। এর আগে মঙ্গলবার বিকেলে পুলিশের ধাওয়া খেয়ে নদীতে ঝাঁপিয়ে পড়ে নিখোঁজ ছিলেন শ্রীপুরের শ্রীকোল ইউনিয়নের ২ নম্বর ওয়ার্ড আওয়ামী লীগের সভাপতি আমিরুল ইসলাম (৪৫)। তাঁর পরিবারের অভিযোগ, পুলিশের নির্যাতনের কারণে মাঝনদীতে আমিরুলের মৃত্যু হয়েছে।

আমিরুল ইসলামের বাড়ি শ্রীপুর উপজেলার শ্রীকোল গ্রামে। তিনি শ্রীকোল সরকারি প্রথমিক বিদ্যালয়ের ম্যানিজিং কমিটিরও সভাপতি ছিলেন।

পরিবার ও স্থানীয় সূত্রে জানা যায়, মঙ্গলবার বিকেল সাড়ে পাঁচটার দিকে মাগুরা ডিবি পুলিশের একটি দল শ্রীপুর উপজেলার হাট শ্রীকোল বাজারে যায়। এ সময় ওই বাজারে একটি চায়ের দোকানে বসেছিলেন মামলার আসামি আমিরুল ইসলাম। বাজারে হঠাৎ পুলিশের উপস্থিতি দেখে তিনি দৌড় দেন। পরে ডিবি পুলিশের এসআই ওলিয়ার রহমান ও কনস্টেবল বুলবুল তাঁকে ধাওয়া করলে কুমার নদে ঝাঁপিয়ে পড়ে পালানোর চেষ্টা করেন আমিরুল।

আমিরুলের বড় ভাই বাহারুল ইসলামের অভিযোগ, তাঁর ভাই নদী সাঁতরে কিছু দূর যাওয়ার পর তাঁকে উদ্ধারের জন্য সাহায্য চান। কিন্তু এসআই ওলিয়ার তাঁকে উদ্ধারের কোনো চেষ্টা করেননি বরং প্রদীপ নামে একজন মাঝি নৌকা নিয়ে তাঁকে উদ্ধারের চেষ্টা করলে এসআই ওলিয়ার তাঁকে ফিরিয়ে দেন। পরে তিনি মাঝির কাছ থেকে নৌকা নিয়ে আমিরুলের মাথায় বইঠা দিয়ে আঘাত করেন। এরপর থেকেই আমিরুল নিখোঁজ ছিলেন। এই ঘটনায় বিক্ষুব্ধ জনতা পুলিশের ওই দুই সদস্যকে মারধর করেন।

এদিকে আমিরুলের লাশ উদ্ধারের পর তাঁর স্বজন ও এলাকাবাসী শ্রীপুর থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা (ওসি) মাহবুবুর রহমান ও ডিবির এসআই ওলিয়ারের বিচার চেয়ে বিক্ষোভ করেন। এ সময় আমিরুলের মৃত্যুর ঘটনাকে পরিকল্পিত হত্যাকাণ্ড বলে দাবি করেন তাঁর বড় ভাই বাহারুল ইসলাম। তিনি বলেন, ‘গত ১০ জুন আধিপত্য বিস্তারের ঘটনা নিয়ে শ্রীকোল গ্রামে দুটি পক্ষের মধ্যে সংঘর্ষ হয়। ওই দিন পুলিশের ওপর হামলার অভিযোগ এনে শ্রীপুর থানার ওসি মাহবুবুর রহমান আমার ভাই আমিরুলসহ ২১৮ জনের নামে মামলা করেন। শেষ পর্যন্ত প্রতিপক্ষ গ্রুপের কাছ থেকে সুবিধা নিয়ে পুলিশ আমিরুলকে ধাওয়া করে নদীর মধ্যে পিটিয়ে মেরে ফেলেছে।’

এই ঘটনার সুরতহাল প্রতিবেদন করা শ্রীপুর থানার উপপরিদর্শক (এসআই) জাহাঙ্গীর হোসেন বলেন, নিহত আমিরুলের মাথায় স্বাভাবিকের চেয়ে ফোলা ছিল, আর নাক দিয়ে রক্ত বের হতে দেখা গেছে।

বুধবার দুপুরে মাগুরা ২৫০ শয্যা হাসপাতালে আমিরুল ইসলামের লাশের ময়নাতদন্ত সম্পন্ন হয়েছে। হাসপাতালের আবাসিক মেডিকেল কর্মকর্তা বিকাশ বিশ্বাস বলেন, তিনিসহ তিন সদস্যের একটি চিকিৎসক দল লাশের ময়নাতদন্ত করেছেন। দুই-এক দিনের মধ্যে প্রতিবেদন প্রকাশ হলে মৃত্যুর কারণ জানা যাবে।

এ বিষয়ে মাগুরার পুলিশ সুপার খান মুহাম্মদ রেজোয়ান সাংবাদিকদের বলেন, ‘প্রাথমিক অভিযোগের পরিপ্রেক্ষিতে এসআই ওলিয়ার হোসেন ও কনস্টেবল বুলবুলকে পুলিশ লাইনে ক্লোজ করা হয়েছে। লাশের ডাক্তারি পরীক্ষার পরই মৃত্যুর প্রকৃত কারণ নিশ্চিত হওয়া যাবে। তদন্ত প্রতিবেদন পাওয়ার পর পরবর্তী ব্যবস্থা নেওয়া হবে।’