আইওরার সদস্য হতে ব্যর্থ মিয়ানমার

রোহিঙ্গা শরণার্থী শিবির। ফাইল ছবি
রোহিঙ্গা শরণার্থী শিবির। ফাইল ছবি

রাখাইনে রোহিঙ্গা নিধনের অভিযোগে ভারত মহাসাগরের উপকূলীয় দেশগুলোর সহযোগিতা সংস্থার (আইওরা) সদস্য হতে ব্যর্থ হয়েছে মিয়ানমার। ২০১৭ সালে ২২ দেশের ওই জোটের সদস্যপদের জন্য আবেদন জানালেও গত বছরের পর এবারও মিয়ানমার সদস্য হতে পারেনি। যদিও একই সময়ে আবেদন করে সদস্য হয়েছে মালদ্বীপ।

গত জুনে দক্ষিণ আফ্রিকার ডারবানে আইওরার জ্যেষ্ঠ কর্মকর্তাদের বৈঠকে মিয়ানমারের সদস্যপদের আবেদন বিবেচিত হয়নি। ওই বৈঠকে বাংলাদেশের প্রতিনিধিত্ব করেন পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ের সচিব (মেরিটাইম অ্যাফেয়ার্স ইউনিট) রিয়াল অ্যাডমিরাল (অব.) মো. মুরশিদ আলো।

দক্ষিণ আফ্রিকার কূটনৈতিক সূত্রগুলো গতকাল মঙ্গলবার প্রথম আলোকে জানিয়েছে, মিয়ানমার এ বছর সদস্যপদের জন্য আবেদন করেনি। তবে ২০১৭ সালের আবেদনের ওপর দেশটির প্রার্থিতার বিষয়টি আলোচনায় আসে। বিশেষ করে আইওরার বর্তমান চেয়ারম্যান দক্ষিণ আফ্রিকাকে অনুরোধ করলে এটি আবার উপস্থাপন করা হয়।

মিয়ানমারের প্রস্তাব গতবার প্রত্যাখ্যানের পর কেন আলোচনায় এসেছে, সেটি বাংলাদেশ জানতে চায়। বিশেষ করে মিয়ানমারের আবেদন ২০১৮ সালে প্রত্যাখ্যান করা হয়েছে মানবাধিকার লঙ্ঘনের অভিযোগে। এ নিয়ে মিয়ানমার কোনো লিখিত জবাব দিয়েছে কি না, সেটি জানতে চাওয়া হয়।

বাংলাদেশের পক্ষ থেকে বলা হয়, রোহিঙ্গা নিপীড়নের ব্যাপারে এক বছর আগে মিয়ানমারের যে অবস্থান ছিল, তার কোনো পরিবর্তন হয়নি। নৃশংসতার অভিযোগে দায়ী ব্যক্তিদের বিরুদ্ধে ব্যবস্থা নেওয়া হয়নি। বাংলাদেশে আশ্রয় নেওয়া রোহিঙ্গাদের রাখাইনে ফিরিয়ে নেওয়ার মতো পরিবেশ তৈরি হয়নি। যেহেতু এ বিষয়গুলোর সুরাহা হয়নি, তাই মিয়ানমারের সদস্যপদের প্রার্থিতা বিবেচনায় নেওয়া ঠিক হবে না।

বাংলাদেশের প্রতিনিধির বক্তব্যের বিরোধিতা করে থাইল্যান্ডের প্রতিনিধি মন্তব্য করেন, আঞ্চলিক বৈঠকে দ্বিপক্ষীয় কোনো বিষয়কে সামনে আনা সমীচীন হবে না। এর জবাবে বাংলাদেশ বলেছে, ২০১৫ সালে সাগরপথে মানব পাচারের বিষয়টি নিয়ে শোরগোল শুরু হলে থাইল্যান্ড, ইন্দোনেশিয়া ও মালয়েশিয়া মিলে পাচারের শিকার হওয়া লোকজনকে বাংলাদেশকে ফেরত নেওয়ার বিষয়ে জোর দেয়। এ নিয়ে বৈঠক হলে বাংলাদেশ তাতে অংশ নিয়ে নিজের নাগরিকদের ফিরিয়ে নিতে সুস্পষ্ট আশ্বাস দিয়ে তা বাস্তবায়ন করেছে। কাজেই মিয়ানমারের সদস্যপদের প্রার্থিতা নিয়ে বাংলাদেশ যা বলছে সেটি দ্বিপক্ষীয় বিষয় কি দ্বিপক্ষীয় নয় তা বিবেচনা না করে, আইওরার সিদ্ধান্ত যে সর্বসম্মতভাবে নিতে হয়, সেটিই অনুসরণ করা উচিত।

আলোচনার একপর্যায়ে সভাপতি মত দেন, আইওরা সর্বসম্মত মতের ভিত্তিতে সিদ্ধান্ত নিয়ে থাকে। এ বিষয়ে সর্বসম্মত সিদ্ধান্ত না হওয়ায় মিয়ানমারকে সদস্য হিসেবে আইওরায় নেওয়া সম্ভব হচ্ছে না।