খুলতে পারে পর্যটনের নতুন দুয়ার
বোয়ালখালীর কালাচান ঠাকুরবাড়ি সনাতন ধর্মাবলম্বীদের জন্য একটি পবিত্র স্থান। প্রতিদিন দূরদূরান্ত থেকে এই মন্দিরে ভিড় করেন ভক্তরা। গত সোমবার দুপুরে কালুরঘাট সেতুতে মন্দিরমুখী অন্তত তিনটি বাস আটকে যায়। সেতুর মাঝখানে একটি ট্রাক বিকল হওয়ার কারণে তাঁরা আটকা পড়েন।
চারটি বাসের গন্তব্যই ওই মন্দিরে। এ ছাড়া আরও কয়েকটি সিএনজিচালিত অটোরিকশাও মন্দিরের ভক্তদের নিয়ে আটকা পড়ে। বাস থেকে নেমে সেতুর রেলিংয়ে দাঁড়িয়ে বিরক্তি প্রকাশ করছিলেন রাহুল চৌধুরী নামের এক যুবক। তিনি বলেন, ‘ভাতিজার অন্নপ্রাশন হবে কালাচান ঠাকুরবাড়িতে। তাই শহর থেকে বাস রিজার্ভ করে যাচ্ছি। কিন্তু সেতুতে আটকে গেলাম।’
এই ঠাকুরবাড়ির মতো হিন্দু–মুসলিম এবং বৌদ্ধদের কয়েকটি ঐতিহাসিক এবং তীর্থস্থান স্থান রয়েছে বোয়ালখালীতে। বোয়ালখালীর করলডেঙ্গা পাহাড়ে রয়েছে মেধসমুনীর আশ্রম। এই আশ্রমটি দুর্গাপূজার উৎপত্তি স্থান হিসেবে পরিচিত। প্রাকৃতিক সৌন্দর্যমণ্ডিত এই আশ্রমে ভক্ত এবং পর্যটকদের আনাগোনা প্রায় সময়ই থাকে। কিন্তু সেতুর কারণে ইচ্ছা থাকলেও মানুষ ওখানে যেতে পারছে না বলে মনে করেন স্থানীয় সাংসদ।
বোয়ালখালীর স্থানীয় সাংসদ মঈন উদ্দিন খান বাদল প্রথম আলোকে বলেন, কালুরঘাট সেতুর কারণে পর্যটন সম্ভাবনা নষ্ট হচ্ছে। বোয়ালখালীতে সব ধর্মের তীর্থস্থান রয়েছে। রয়েছে প্রাকৃতিক সৌন্দর্যমণ্ডিত স্থান। কিন্তু সেতুতে ঘণ্টার পর ঘণ্টা আটকে থাকতে হয়। নতুন সেতু হলে বোয়ালখালী সম্ভাবনাময় হবে। এর ফলে কলকারখানাও বাড়বে।
আউলিয়া হযরত বু-আলী কলন্দর শাহর (র.) আস্তানা শরীফ ও বৌদ্ধদের আর্য কুঠির ভাবনাকেন্দ্রও বোয়ালখালীতে। বিভিন্ন এলাকার মানুষের কাছে বহুল পরিচিতি লাভ করেছে এসব স্থান।
নদী তীরের গ্রাম কধুরখীলের নাজিরখালের কাছে ‘রিভার ভিউ’ নামে একটি স্থাপনা হয়েছে কয়েক বছর আগে। প্রতিদিন সেখানে শত শত মানুষ নদীর সৌন্দর্য দেখতে ভিড় করেন।
বোয়ালখালী-কালুরঘাট সেতু বাস্তবায়ন পরিষদের আহ্বায়ক মো. আবদুল মোমিন বলেন, নতুন সেতু হলে কেবল স্থানীয়দের দুর্ভোগ কমবে না। এর ফলে পর্যটন সম্ভাবনাও বাড়বে। তিন ধর্মের লোকজন বিভিন্ন স্থান থেকে বোয়ালখালীতে যায়। কিন্তু কালুরঘাটের নড়বড়ে সেতু তাদের উৎসাহে ভাটা ফেলে।
তিনি আরও বলেন, যারা একবার সেতুর ভোগান্তিতে পড়েছে তারা আর এই মুখো হতে চায় না। এ জন্য পর্যটক কিংবা তীর্থযাত্রীদের মধ্যে চরম অনীহা। অনেকে করলডেঙ্গা পাহাড়ে পিকনিক করতেও আসত। এখন আর সেভাবে আসে না।
উল্লেখ্য, ১৯৩০ সালে নির্মিত কালুরঘাট সেতুটি বোয়ালখালী এবং পূর্ব পটিয়ার মানুষের প্রধান নির্ভরতা। এই সেতু পার হয়ে শহরের অতি কাছের উপজেলায় যেতে হয়। কিন্তু মেয়াদোত্তীর্ণ সেতুটি এখন খুব নড়বড়ে। যেকোনো মুহূর্তে বড় ধরনের দুর্ঘটনার আশঙ্কা করছেন সংশ্লিষ্টরা। এ ছাড়া একমুখী এই সেতুর দুপাড়ে ঘণ্টার পর ঘণ্টা পার হওয়ার জন্য অপেক্ষা করতে হয়। সেতু থেকে বোয়ালখালী সদরের দূরত্ব মাত্র তিন কিলোমিটার। কিন্তু ওই পথ যেতে ব্যয় হয় এক থেকে দেড় ঘণ্টা।