দিনাজপুরে হাটভর্তি দেশি গরু

দিনাজপুরের সীমান্তবর্তী বিরামপুর পশুর হাট জমে উঠেছে। হাটে দেশি গরুর আমদানি অনেক। গত মঙ্গলবার বিরামপুর গোহাটে।  ছবি: প্রথম আলো
দিনাজপুরের সীমান্তবর্তী বিরামপুর পশুর হাট জমে উঠেছে। হাটে দেশি গরুর আমদানি অনেক। গত মঙ্গলবার বিরামপুর গোহাটে। ছবি: প্রথম আলো

এবার ঈদুল আজহার আগে এখন পর্যন্ত সীমান্ত দিয়ে ভারতীয় গরু ঢুকতে পারেনি। এ কারণে সীমান্তবর্তী হাটগুলোয় উঠেছে শুধু দেশীয় গরু। গরুর দামও সহনীয় পর্যায়ে রয়েছে। এতে ক্রেতা ও বিক্রেতা উভয়ই খুশি।

উত্তরাঞ্চলের অন্যতম বড় দিনাজপুরের বিরামপুরের গোহাট। শত বছরের ঐতিহ্যবাহী এ হাট বসে সপ্তাহে শনি ও মঙ্গলবার। গত দুটি হাট ঘুরে ওই চিত্র দেখা গেছে।

সরেজমিনে দেখা যায়, হাট দেশি গরুতে ভর্তি। অন্যান্য বছরের তুলনায় মাঝারি আকারের গরু বেশি। ক্রেতা-বিক্রেতাদের হাঁকডাকে জমে উঠেছে হাট। কেউ ঘুরে ঘুরে গরু দেখছেন। কেউ বা দরদাম করছেন। পছন্দ হলে কিনে নিচ্ছেন কেউ।

হাটে এসেছেন বিরামপুরের কেশবপুর গ্রামের খামারি নূর মোহাম্মদ। তিনি বলেন, বাজারে এবার ১০০ থেকে ১৫০ কেজি মাংস পাওয়া যাবে এমন ওজনের গরুর চাহিদা বেশি। তিনি ১০টি গরু বিক্রির জন্য তৈরি করেছেন। এর মধ্যে ২টি বিক্রি হয়েছে। ৮টি আগামী শনিবার হাটে বিক্রি হবে বলে আশা করছেন। ভারতীয় গরু না আসায় এবার খামারিরা লাভের মুখ দেখছেন।

জোতবানী গ্রামের খামারি ফারুক হোসেন জানান, ভারতীয় গরু না থাকায় এবার খামারিরা অনেকটা ভালো দাম পাবেন বলে আশা ছিল। কিন্তু দেশের বিভিন্ন স্থানে বন্যা ও কৃষকেরা ধানের দাম না পাওয়ায় পশুর বাজারে পাইকারি ক্রেতার উপস্থিতি কম। কৃষকেরা আমনের ক্ষতি পুষিয়ে উঠতে এখন আউশ চাষে ব্যয় করছেন। তাই এককভাবে কোরবানি না করে যৌথভাবে কোরবানিতে ঝুঁকেছেন। এ কারণে স্থানীয়ভাবে কোরবানির পশুর বিক্রি কমে গেছে।

জোতবানী সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়ের প্রধান শিক্ষক মনোয়ার হোসেন বলেন, এবারের পশুর হাটে গবাদিপশুর দাম অত্যন্ত সহনশীল। বেশির ভাগ গবাদিপশু স্থানীয়ভাবে মোটাতাজা করা। অন্যান্য বছরের তুলনায় এবার ওষুধ খাইয়ে মোটাতাজা করা গবাদিপশু কম। তিনি ৪৩ হাজার টাকা দিয়ে একটি গরু কিনেছেন। আশা করছেন, ৭০ কেজির বেশি মাংস পাবেন।

নবাবগঞ্জের পুটিমারা থেকে গরু কিনতে এসেছেন নজরুল ইসলাম ও মনসুর আলী। তাঁরা বলেন, এর আগে তাঁরা প্রত্যেকেই এককভাবে গরু কোরবানি দিয়েছিলেন। কিন্তু এবারের ধানে ব্যাপক লোকসান দিয়েছেন। তাই যৌথভাবে একটি গরু কোরবানি দেবেন।

বগুড়ার গাবতলী থেকে আসা গরুর পাইকার মো. নুরুন্নবী মিয়া বলেন, তিনি ১৫ বছর থেকে বিরামপুর ও পাঁচবিবির হাট থেকে গরু কিনে ঢাকাসহ দেশের বিভিন্ন স্থানে বিক্রি করেন। স্থানীয়ভাবে গরুর উৎপাদন বাড়ায় এবার হাটে দেশি গরু বেশি। মানুষেরও দেশি গরুর প্রতি ঝোঁক বেড়েছে। এতে খামারিরা লাভবান হচ্ছেন।

বিরামপুর হাটের ইজারাদার মো. আনিসুর রহমান বলেন, এবারের হাটে ভারতীয় গরুর আমদানি নেই। বন্যা এলাকার লোকজন ক্ষতি পুষিয়ে নিতে কম দামে গবাদিপশু বিক্রি করছেন। ঢাকা ও চট্টগ্রাম অঞ্চলের পাইকারি গরু ব্যবসায়ীরা মিয়ানমার থেকে বড় গরু আমদানি করছেন। তাই এদিকে হাটে পাইকারদের উপস্থিতিও কম। তবে দেশি গরু প্রচুর। ভারতীয় গরু না থাকায় স্থানীয় খামারিরা অন্যান্য বছরের তুলনায় অনেকটা লাভবান হবেন। কিন্তু ধানের দাম না থাকাসহ বিভিন্ন কারণে গরুর ক্রেতা কম। ঈদের আগে আগামী শনিবার বিরামপুরের শেষ হাট।

জানতে চাইলে বর্ডার গার্ড বাংলাদেশের (বিজিবি) ২৯ ব্যাটালিয়নের অধিনায়ক লেফটেন্যান্ট কর্নেল মোহাম্মদ শরীফ উল্লাহ আবেদ বলেন, যাঁরা গবাদিপশু লালন-পালন করেন, তাঁরা ঈদের বিক্রি করে লাভের আশায় থাকেন। ভারতীয় গরু এসে দেশের গবাদিপশু লালন-পালনকারী ব্যক্তিরা যাতে ক্ষতিগ্রস্ত না হন, সে বিষয়ে ঊর্ধ্বতন কর্তৃপক্ষের নির্দেশনায় সীমান্তে কড়া পাহারা রয়েছে।