যে স্ত্রীকে খুনের অপবাদে স্বামীর আত্মহত্যা, ফিরে এলেন তিনি

প্রতীকী ছবি
প্রতীকী ছবি

কুমিল্লার ব্রা‏হ্মণপাড়ার সীমা আক্তারকে কেউ খুন করে লাশ গুম করেননি। গত মঙ্গলবার রাতে তাঁকে উদ্ধার করেছে পুলিশ। অথচ তাঁকে খুন করে লাশ গুমের অভিযোগে স্বামী সাইফুল ইসলামের বিরুদ্ধে মামলা হয়েছিল। সালিসে মীমাংসার চেষ্টা চলে। তাঁকে দুই লাখ টাকা জরিমানা করা হয়। এই প্রেক্ষাপটে গলায় ফাঁস দিয়ে আত্মহত্যা করেন সাইফুল।

থানা–পুলিশ ও স্থানীয় সূত্রে জানা গেছে, ব্রা‏হ্মণপাড়া উপজেলার দুলালপুর ইউনিয়নের নাল্লা গ্রামের মোরশেদ মিয়ার মেয়ে সীমা আক্তারের (২৮) সঙ্গে চার বছর আগে একই উপজেলার ব্রা‏হ্মণপাড়া সদরের আটকিল্লাপাড়ার সহিদুল ইসলামের ছেলে সাইফুল ইসলামের (৩০) বিয়ে হয়। বিয়ের পর থেকে তাঁদের মধ্যে মনোমালিন্য চলে আসছিল। এর জেরে গত ১৮ মে সীমা নিখোঁজ হন। এ ঘটনায় তাঁর স্বামী সাইফুলকে দোষারোপ করছিলেন সীমা আক্তারের পরিবারের লোকজন। ২৩ মে কুমিল্লা নারী ও শিশু নির্যাতন ট্রাইব্যুনালে সীমার মা হেলেনা বেগম বাদী হয়ে তাঁর মেয়েকে যৌতুকের জন্য নির্যাতন চালিয়ে খুন করে লাশ গুমের অভিযোগে মামলা করেন। এরপর থেকে পালিয়ে বেড়াচ্ছিলেন সাইফুল। ঘটনাটি মীমাংসার জন্য সাইফুল ও সীমার পরিবারের লোকজন একাধিক বৈঠক করেছিলেন। একটি বৈঠকে সাইফুলকে দুই লাখ টাকা জরিমানা করা হয়। কিন্তু সেই টাকা দিতে পারেননি সাইফুল। একদিকে তাঁর স্ত্রী উধাও, অন্যদিকে হত্যা ও গুমের মামলা। আবার টাকা দিতে হবে দুই লাখ। এই পরিপ্রেক্ষিতে ২১ জুলাই সাইফুল গলায় ফাঁস দিয়ে আত্মহত্যা করেন। এ ঘটনায় সাইফুলের বাবা বাদী হয়ে থানায় মামলা করেন।

এদিকে পুলিশ বিশেষ অভিযান চালিয়ে সীমা আক্তারকে মঙ্গলবার রাতে ব্রা‏হ্মণপাড়া এলাকা থেকে উদ্ধার করে। তিনি গতকাল বুধবার কুমিল্লা নারী ও শিশু নির্যাতন ট্রাইব্যুনালে ২২ ধারায় জবানবন্দি দেন। সীমা আদালতকে বলেন, তাঁর স্বামী তাঁকে নির্যাতন করতেন। এ কারণে তিনি কাউকে কোনো কিছু না বলেই বাড়ি থেকে পালিয়ে যান। গাজীপুরে গিয়ে গার্মেন্টসে চাকরি নেন। বাড়ি এলে পুলিশ তাঁকে আটক করে থানায় নিয়ে আসে।

এদিকে সাইফুলের ভাই রাজীব মিয়া ও শ্যামল মিয়া বলেন, তাঁদের বড় ভাই সাইফুলের স্ত্রীর সঙ্গে মনোমালিন্য চলছিল, এটি সত্যি। কিন্তু ভাই তো তাঁর স্ত্রীকে খুন করেননি। অথচ খুনের মামলায় তাঁকে আসামি করা হয়। গ্রেপ্তার এড়াতে তাঁদের ভাই পালিয়ে বেড়াচ্ছিলেন। খুন না করেও তাঁকে অপবাদ সইতে হয়। তার ওপর তাঁকে দুই লাখ টাকা জরিমানা করা হয়। তাঁদের ভাই এটি আর সহ্য করতে পারছিলেন না। এ কারণে তিনি আত্মহত্যা করেন। এখন ভাইয়ের স্ত্রী ফিরে এসেছেন। এখন সবাই জেনেছেন তাঁর ভাই খুনি ছিলেন না। অথচ তাঁকে গলায় ফাঁস দিয়ে মরতে হয়েছে। এখন শত কেঁদেও আর তাঁদের ভাইকে ফিরে পাবেন না।

মামলার তদন্তকারী কর্মকর্তা ব্রা‏হ্মণপাড়া থানার উপপরিদর্শক (এসআই) মো. সফিকুল ইসলাম বলেন, সীমা আক্তারকে খুন করে লাশ গুমের অভিযোগ এনে তাঁর মা হেলেনা আক্তার বাদী হয়ে আদালতে মামলা করেছিলেন। পরে দুই পরিবারের মধ্যে মামলাটি মীমাংসার জন্য বৈঠক হয়। সেখানে সাইফুল দুই লাখ টাকা দিলে মামলা আপস করার সিদ্ধান্ত হয়। কিন্তু সাইফুল সেই টাকাও দিতে পারেননি। পরে তিনি গলায় ফাঁস দিয়ে আত্মহত্যা করেন।