বদলে যাওয়া হাসপাতালের জরুরি বিভাগ

আন্তর্জাতিক রেড ক্রস কমিটি (আইসিআরসি) কক্সবাজার জেলা সদর হাসপাতালের জরুরি বিভাগকে নতুনভাবে সংস্কার কাজের অর্থায়ন ও বাস্তবায়ন করেছে। ছবি: সাবরিনা ইয়াসমীন
আন্তর্জাতিক রেড ক্রস কমিটি (আইসিআরসি) কক্সবাজার জেলা সদর হাসপাতালের জরুরি বিভাগকে নতুনভাবে সংস্কার কাজের অর্থায়ন ও বাস্তবায়ন করেছে। ছবি: সাবরিনা ইয়াসমীন

সকাল আটটা। লাইন ধরে রোগীর স্বজনেরা টিকিট কাটছেন। ফটক দিয়ে ঢুকতে গেলে নিরাপত্তারক্ষীর সঙ্গে কিছুটা তর্কবিতর্ক হচ্ছে। কেননা, রোগীর সঙ্গে কোনো ভাবেই একজনের বেশি ঢোকা যাবে না। তারপর ভেতরে ঢুকতেই ঝকঝকে তকতকে বিভিন্ন কক্ষ। চিকিৎসক ও নার্সেরা ব্যস্ত রোগী নিয়ে। রোগীর অবস্থা গুরুতর, না অল্প বা মাঝারি পর্যায়ের গুরুতর তা ভাগ করে পাঠিয়ে দেওয়া হচ্ছে নির্দিষ্ট কক্ষে। এখানে আগে এলেই আগে চিকিৎসা পাওয়া যাবে, বিষয়টা তেমন না। রোগীর অবস্থা খারাপ হলে তার সিরিয়াল অনেক পরে হলেও ওই রোগী অগ্রাধিকারভিত্তিতে সেবা পাচ্ছেন।

এ চিত্র কক্সবাজারের ২৫০ শয্যা জেলা সদর হাসপাতালের জরুরি বিভাগের। গত ১ আগস্ট এ চিত্রই দেখা গেল।

আন্তর্জাতিক রেড ক্রস কমিটি (আইসিআরসি) কক্সবাজার জেলা সদর হাসপাতালের জরুরি বিভাগকে নতুনভাবে সংস্কার কাজের অর্থায়ন ও বাস্তবায়ন করেছে। ছবি: সাবরিনা ইয়াসমীন
আন্তর্জাতিক রেড ক্রস কমিটি (আইসিআরসি) কক্সবাজার জেলা সদর হাসপাতালের জরুরি বিভাগকে নতুনভাবে সংস্কার কাজের অর্থায়ন ও বাস্তবায়ন করেছে। ছবি: সাবরিনা ইয়াসমীন

আন্তর্জাতিক রেড ক্রস কমিটি (আইসিআরসি) কক্সবাজার জেলা সদর হাসপাতালের এ জরুরি বিভাগকে নতুনভাবে সংস্কার কাজের অর্থায়ন ও বাস্তবায়ন করেছে। এতে হাসপাতাল কর্তৃপক্ষ ও স্বাস্থ্য মন্ত্রণালয় সহায়তা করেছে। নতুন আঙ্গিকে জরুরি বিভাগটির উদ্বোধন হয়েছে ২০ জুলাই। ২১ জুলাই থেকে কার্যক্রম শুরু হয়েছে। তবে আইসিআরসির হেলথ ফিল্ড অফিসার এস এম গোলাম সারোয়ার জানালেন, উদ্বোধনের পর মাত্র ১০ দিনের হিসাব বলছে, আগের চেয়ে এখন হাসপাতালে ৬৫ শতাংশ রোগী ভর্তির হার কমেছে। এ তথ্য শুধু জরুরি বিভাগের মাধ্যমে হাসপাতালে ভর্তির হিসাব। অর্থাৎ জরুরি বিভাগে যথাযথ সেবা দিয়েই কম সময়ে অনেক রোগীকে বাসায় পাঠিয়ে দেওয়া সম্ভব হচ্ছে। এ ছাড়া অন্য হাসপাতালে ‘রেফার’ করতে হলেও তা দ্রুত হচ্ছে।

জেলার স্থানীয় জনগণ ও কক্সবাজারের উখিয়া ও টেকনাফে আশ্রিত রোহিঙ্গাদের উন্নত চিকিৎসার প্রধান ভরসাস্থল ২৫০ শয্যার জেলা সদর হাসপাতালটি । হাসপাতালের তত্ত্বাবধায়ক ডা. মো. মহিউদ্দিন দাবি করলেন, বাংলাদেশের মধ্যে আন্তর্জাতিক মানের জরুরি বিভাগ বা মডেল জরুরি বিভাগের দিক থেকে এটিই প্রথম। হাসপাতালটিতে গড়ে রোগী ভর্তি থাকে ৭০০ জনের মতো। জরুরি বিভাগ সংস্কারের পর জরুরি বিভাগে আসা রোগীদের গ্রিন, ইয়েলো ও রেড জোনে ভাগ করে খুব দ্রুত সময়ে সেবা দেওয়া সম্ভব হচ্ছে। যখন যে রোগীর জন্য যে যন্ত্রপাতি লাগছে তা হাতের কাছে থাকায় ব্যবহার করা সম্ভব হচ্ছে। অনেক রোগীকে হাসপাতালেই পর্যবেক্ষণে রেখে বাড়ি পাঠিয়ে দেওয়া সম্ভব হচ্ছে। ফলে অপ্রয়োজনীয় রোগী ভর্তির চাপ কমানো সম্ভব হচ্ছে। রোগীর সঙ্গে বাড়তি মানুষ ঢুকতে পারে না বলে চিকিৎসক এবং নার্সেরা তাদের কার্যক্রম সুষ্ঠুভাবে পরিচালনা করতে পারছেন।

আন্তর্জাতিক রেড ক্রস কমিটি (আইসিআরসি) কক্সবাজার জেলা সদর হাসপাতালের জরুরি বিভাগকে নতুনভাবে সংস্কার কাজের অর্থায়ন ও বাস্তবায়ন করেছে। ছবি: সাবরিনা ইয়াসমীন
আন্তর্জাতিক রেড ক্রস কমিটি (আইসিআরসি) কক্সবাজার জেলা সদর হাসপাতালের জরুরি বিভাগকে নতুনভাবে সংস্কার কাজের অর্থায়ন ও বাস্তবায়ন করেছে। ছবি: সাবরিনা ইয়াসমীন

সংশ্লিষ্টরা জানালেন, ৩ বছর ব্যাপী প্রকল্পের আওতায় আইসিআরসি জরুরি বিভাগের অবকাঠামো সংস্কার, আসবাবপত্রসহ বিভিন্ন চিকিৎসা সরঞ্জাম কেনার ক্ষেত্রে সহায়তা করছে। পাশাপাশি জরুরি বিভাগের চিকিৎসক ও নার্সদের বিশেষজ্ঞ প্রশিক্ষকেরা প্রশিক্ষণ দিচ্ছেন যাতে রোগীরা সর্বোচ্চ সেবা পায়। যে কোনো মানব সৃষ্ট বা প্রাকৃতিক দুর্যোগে ব্যাপকভাবে হতাহতের ঘটনা ঘটলে ‘রেফারেল সিস্টেম’ ব্যবস্থাপনার জন্যও হাসপাতাল কর্তৃপক্ষের সঙ্গে কাজ শুরু করেছে আইসিআরসি।

হাসপাতালের তত্ত্বাবধায়ক জরুরি বিভাগের নতুন ব্যবস্থাপনাকে কাজে লাগাতে রোগী ও স্বজনদের সচেতনতার বিষয়টিতে গুরুত্ব দিলেন। আইসিআরসির হেলথ ফিল্ড অফিসার এস এম গোলাম সারোয়ার জানালেন, এখন পর্যন্ত রোগীর সঙ্গে এক জনের বেশি স্বজনকে ঢুকতে না দেওয়ার বিষয়টিই বড় চ্যালেঞ্জ হিসেবে দেখা দিয়েছে। অনেকেই বিষয়টি মানতে চান না। ফলে নিরাপত্তারক্ষী, চিকিৎসক, নার্সদের সঙ্গে অনেক সময়ই এ নিয়ে কথা কাটাকাটি হচ্ছে। রোগীর স্বজনদের বুঝতে হবে, এটি রোগীর সর্বোচ্চ স্বার্থের দিক চিন্তা করেই করা হচ্ছে।