জাপা কোন পথে, বোঝা যাবে রংপুর উপনির্বাচনে

এইচ এম এরশাদের মৃত্যুর পর জাতীয় পার্টিতে (জাপা) এখন দুটি ধারা সক্রিয়। দলের সাংসদ ও নেতাদের একটি অংশ এরশাদের ভাই জি এম কাদেরের সঙ্গে রয়েছে। অন্য পক্ষ এরশাদের স্ত্রী রওশন এরশাদকে ঘিরে সক্রিয়। দলীয় সূত্রগুলো বলছে, শেষ পর্যন্ত জাপার নিয়ন্ত্রণ কার হাতে যাবে, তা পরিষ্কার হবে এরশাদের মৃত্যুতে শূন্য হওয়া রংপুর-৩ (সদর) আসনের উপনির্বাচনে। দলে যাঁর কর্তৃত্ব নিরঙ্কুশ হবে, তাঁর মনোনীত প্রার্থীই সেখানে মনোনয়ন পাবেন।

জাপার উচ্চপর্যায়ের একটি সূত্র জানায়, প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার সঙ্গে শিগগিরই জাপার শীর্ষ নেতৃত্বের কারও কারও সাক্ষাতের সম্ভাবনা রয়েছে। মূলত এরপরই একটা ধারণা পাওয়া যাবে, দলের কার নিয়ন্ত্রণ ও অবস্থান শক্তিশালী হচ্ছে। একই সঙ্গে রংপুরের উপনির্বাচনে দলের সম্ভাব্য প্রার্থী কোন পক্ষ থেকে এবং কে হচ্ছেন তা–ও বোঝা যাবে।

এ বিষয়ে জাপার মহাসচিব মসিউর রহমান প্রথম আলোকে বলেন, ‘আমরা বিরোধী দল। সরকারের সঙ্গে আমাদের সুসম্পর্ক থাকতে পারে। কিন্তু আমাদের দলীয় সিদ্ধান্ত তো আমরাই নেব।’

দলীয় সূত্র জানায়, রংপুরের উপনির্বাচনটি কেমন হবে, সেটি এখনো পরিষ্কার নয় জাপার নীতিনির্ধারকদের কাছে। গত জুনে অনুষ্ঠিত বগুড়ার উপনির্বাচনের মতো হবে, নাকি ৩০ ডিসেম্বরের একাদশ জাতীয় সংসদ নির্বাচনের আদলে হবে, তা নিয়ে দলে আলোচনা আছে। গত ২৪ জুন অনুষ্ঠিত বগুড়া-৬ আসনের নির্বাচনে (বিএনপির মহাসচিব মির্জা ফখরুল শপথ না নেওয়ায় আসনটি শূন্য হয়) সুষ্ঠু ও প্রতিদ্বন্দ্বিতাপূর্ণ। এতে ধানের শীষ প্রতীকের প্রার্থী জয়ী হন।

জাপা সূত্র জানায়, জি এম কাদের ও রওশন দুজনেরই রংপুর উপনির্বাচনে প্রথম পছন্দ পারিবারিক প্রার্থী। জি এম কাদের প্রথমে তাঁর আরেক ভাই যুক্তরাষ্ট্রপ্রবাসী হোসাইন মঞ্জুর মোরশেদকে প্রার্থী করতে চেয়েছিলেন। কিন্তু যুক্তরাষ্ট্রের নাগরিকত্ব ছেড়ে এই বয়সে রাজনীতিতে যুক্ত হতে আগ্রহী নন মঞ্জুর। এ ছাড়া এরশাদের ভাতিজা ও সাবেক সাংসদ আসিফ শাহরিয়ারও সক্রিয় আছেন মনোনয়ন পেতে। কিন্তু তিনি এরশাদের সিদ্ধান্তের বিরুদ্ধে অবস্থান নিয়ে দল থেকে বহিষ্কৃত হন।

এর বাইরে এরশাদ পরিবারের একজন নারী সদস্যকেও প্রার্থী তালিকায় বিবেচনায় রাখা হয়েছে। তিনি সম্প্রতি রংপুর গিয়ে এরশাদের কবর জিয়ারত করে এসেছেন। সরকারি মহলসহ সার্বিক পরিস্থিতি অনুকূলে থাকলে শেষ পর্যন্ত তাঁকেই প্রার্থী করা হতে পারে।

অন্যদিকে রওশনের ছেলে রাহগির আল মাহির (সাদ এরশাদ) নামও আলোচনায় রয়েছে। রওশন চান, ছেলে সাদ রাজনীতিতে যুক্ত হোক। এর আগে দলের সাংসদ তাজুল ইসলাম চৌধুরীর মৃত্যুর পর কুড়িগ্রাম-২ (ফুলবাড়ী-সদর-রাজারহাট) আসনেও সাদকে প্রার্থী করতে চেয়েছিলেন রওশন। কিন্তু এরশাদ তাতে রাজি হননি। এবার রংপুরের উপনির্বাচনে সাদকে প্রার্থী করতে তিনি খুব তৎপর বলে দলের নির্ভরযোগ্য একাধিক সূত্রে জানা গেছে। এতে জ্যেষ্ঠ নেতাদের কারও কারও সায় আছে।

এ বিষয়ে সাদ এরশাদ প্রথম আলোকে বলেন, ‘দেশবাসীর সমর্থন থাকলে রাজনীতিতে যুক্ত হওয়ার আগ্রহ আছে। রংপুরের উপনির্বাচনে প্রার্থী হতে চাই।’

সাদের নাম আলোচনায় আসার পর দলের নেতা-কর্মীদের মধ্যে মিশ্র প্রতিক্রিয়া দেখা দিয়েছে, বিশেষ করে রংপুরে। স্থানীয় নেতাদের অনেকে বলছেন, সাদ কখনো রাজনীতি করেননি, তাঁকে নিয়ে বিতর্ক আছে। রংপুরের সঙ্গে তাঁর কোনো সম্পৃক্ততা নেই। তাঁকে প্রার্থী করা হলে ভোটের মাঠে নেতিবাচক প্রভাব পড়বে।

পবিত্র ঈদুল আজহার পর রংপুর উপনির্বাচনের তফসিল ঘোষণা করতে পারে নির্বাচন কমিশন (ইসি)। তবে এর আগেই জাপার রংপুর মহানগর কমিটির সাধারণ সম্পাদক এস এম ইয়াছির ও জেলার নেতা আবদুর রাজ্জাকও এলাকায় জনসংযোগ শুরু করেছেন।

সার্বিক বিষয়ে জাপার মহাসচিব মসিউর রহমান প্রথম আলোকে বলেন, যে কেউ প্রার্থী হওয়ার আগ্রহ দেখাতে পারেন। ১৭ আগস্ট সভাপতিমণ্ডলীর সদস্যদের সভা হবে। সেখানে মনোনয়নে বোর্ড গঠন করা হবে। এই বোর্ড প্রার্থী ঠিক করবে।