ঈদের পর 'জয় রাইডে' বের না হওয়ার আহ্বান

র‍্যাবের মহাপরিচালক বেনজীর আহমেদ। ফাইল ছবি
র‍্যাবের মহাপরিচালক বেনজীর আহমেদ। ফাইল ছবি

ঈদ-পরবর্তী সময়ে দুর্ঘটনা বেড়ে যায় জানিয়ে র‍্যাবের মহাপরিচালক বেনজীর আহমেদ বলেছেন, যাঁরা গাড়ি নিয়ে নিজ এলাকায় ঈদ করতে যাবেন, তাঁরা যেন ‘জয় রাইডে’ বের না হন।

ঈদুল আজহা উপলক্ষে র‍্যাবের পক্ষ থেকে এক সংবাদ সম্মেলনে বেনজীর আহমেদ এ কথা বলেন। আজ শুক্রবার সকালে রাজধানীর কারওয়ান বাজারে র‍্যাবের মিডিয়া সেন্টারে এ সংবাদ সম্মেলন হয়।

র‍্যাবের মহাপরিচালক বলেন, ‘সড়কপথে এবার ধীরগতি আছে। ধীরগতি হলে দুর্ঘটনা কমে যায়। কিন্তু আমরা দেখি যে ঈদ-পরবর্তী দিনে দুর্ঘটনা বেড়ে যায়। এতে চালকদের তো বড় ভূমিকা আছেই, যাত্রীদেরও রয়েছে। যারা গ্রামে গাড়ি নিয়ে ঈদ করতে যাবেন, দয়া করে ঈদের দিন বা ঈদের পরদিন জয় রাইডে বের হবে না। জয় রাইডে বের হয়ে প্রাণ হারাবেন না।’

বেনজীর আহমেদ জানান, সারা দেশের ৪২টি স্থান দুর্ঘটনাপ্রবণ। সেসব স্থানে র‍্যাব নিরাপত্তাব্যবস্থা গ্রহণ করেছে। ঈদযাত্রার ব্যবস্থা আগের চেয়ে অনেক উন্নত হয়েছে।

নগরবাসীকে নির্ধারিত স্থানে কোরবানি দেওয়ার আহ্বান জানিয়ে র‍্যাব মহাপরিচালক বলেন, যেখানে-সেখানে কোরবানি দিলে স্বাস্থ্যের ঝুঁকি বাড়ে।

বেনজীর আহমেদ বলেন, অনলাইনে কোরবানির গরু কেনার প্রবণতা দেখা যাচ্ছে। এগুলোকে নিয়মের আওতায় নিয়ে আসতে হবে। এ ব্যাপারে ব্যবস্থা নিতে সংশ্লিষ্ট কর্তৃপক্ষকে অনুরোধ জানান তিনি।

র‍্যাবের মহাপরিচালক বলেন, ঢাকায় পাঁচ লাখের মতো পশু কোরবানি হয়। সেখানে যদি ২০টি প্রতিষ্ঠানকে ঠিক করে দেওয়া হয়, আর তারা যদি তিন দিনব্যাপী কোরবানির ব্যবস্থা করে, তাহলে নির্ধারিত স্থানে ঢাকার বাইরে কোরবানি দেওয়া যেতে পারে। এতে পশুর চামড়া, হাড়—সবই কাজে লাগানো যাবে। এটা করলে সারা শহর অস্বাস্থ্যকর হওয়া থেকে নিস্তার পাবে। সিটি করপোরেশনকে বিষয়টি ভেবে দেখার কথা বলেন তিনি।

চামড়া ব্যবসায়ীদের আগেই মূল্য নির্ধারণ করে সে অনুযায়ী চামড়া কেনার অনুরোধ করেন বেনজীর আহমেদ।

ডেঙ্গু নিয়ে আতঙ্কিত হওয়ার কিছু নেই বলে জানান র‍্যাবের মহাপরিচালক। তিনি বলেন, ‘আমরা জানি যে ইকোনমিক বুমের কারণে প্রচুর ডেভেলপমেন্ট কাজ হচ্ছে। রাস্তাঘাট হচ্ছে, ব্রিজ হচ্ছে, নতুন নতুন বিল্ডিং হচ্ছে। এসব নির্মাণাধীন জায়গায় যাতে পানি জমে না থাকে। যারা ঠিকাদার, তাদের আহ্বান জানাব, এদিকে যেন খেয়াল রাখে। নিজের কাজটা দায়িত্ব নিয়ে পালন করলেই এ সমস্যা থেকে মুক্ত হওয়া যাবে।’

বেনজীর আহমেদ জানান, কিছু কিছু জায়গায় র‍্যাব থেকে বিনা মূল্যে মশা–প্রতিরোধী ওষুধ দেওয়া হচ্ছে। যারা বাড়ি যাচ্ছে, তারা যেন ডেঙ্গু আক্রান্ত না হয়, সে ব্যাপারে সতর্ক থাকার আহ্বান জানান তিনি।

র‍্যাব থেকে ‘ডেঙ্গু প্রিভেনশন অফিসার’ নিয়োগ করা হয়েছে বলে জানান বেনজীর আহমেদ। তিনি প্রতিটি শিক্ষাপ্রতিষ্ঠান, সরকারি-বেসরকারি অফিসসহ বিভিন্ন প্রতিষ্ঠানে এ রকম একজনকে নিয়োগ দেওয়ার আহ্বান জানান।

কাশ্মীর ইস্যুতে বাংলাদেশের কেউ চরম মনোভাবাপন্ন হয়ে ভিন্ন পথে পা বাড়াতে পারে কি না—এমন প্রশ্নে র‍্যাব মহাপরিচালক বলেন, কাশ্মীর ভারতের নিজস্ব বিষয়। এ নিয়ে তাঁদের কোনো মন্তব্য নেই। তিনি বলেন, বাংলাদেশে চরম মনোভাবাপন্ন মানুষের সংখ্যা বেশি নয়। যারা রয়েছে, তাদের কড়া নজরদারিতে রাখা হয়েছে।

সামনে ঈদ, জাতীয় শোক দিবস ও জন্মাষ্টমী রয়েছে। র‍্যাব নিরাপত্তা বিষয়ে বিভিন্ন গোয়েন্দা সংস্থার সঙ্গে সমন্বয় করে যাচ্ছে বলে জানান সংস্থাটির মহাপরিচালক। তিনি বলেন, ঈদ কেন্দ্র করে গরুর হাট, টার্মিনাল, বাসস্ট্যান্ড, স্টেশনসহ বিভিন্ন স্থানে নিরাপত্তাব্যবস্থা নিয়েছেন তাঁরা। এ ছাড়া অজ্ঞান পার্টি, মলম পার্টি, জাল টাকাসহ বিভিন্ন অপকর্ম যেন না ঘটে, সে বিষয়ে নজরদারি রয়েছে র‍্যাবের। ঈদ জামাত ঘিরেও দেশের বিভিন্ন গুরুত্বপূর্ণ স্থানে র‍্যাব নিরাপত্তার ব্যবস্থা নিয়েছে।

র‍্যাবের এক কর্মকর্তা এক বছর ধরে নিখোঁজ এবং তাঁর বিষয়ে র‍্যাবের কোনো উদ্যোগ আছে কি না এবং খুঁজে না পাওয়াটা ব্যর্থতা কি না জানতে চাইলে বেনজীর আহমেদ বলেন, অনেক মানুষকে খুঁজে পাওয়া যাওয়া না। খুঁজে না পাওয়াটা শুধু এ দেশের সমস্যা না। অনেক দেশেই লোক খুঁজে পাওয়া যায় না। একজন লোক খুঁজে না পাওয়ার অনেকগুলো কারণ থাকতে পারে। আর খুঁজে না পেলেই কারও ব্যর্থতা হয় না। তবে তাঁরা বিষয়টি নিয়ে কাজ করছেন বলে জানান।