ঢাকা মেডিকেলে বেড না পেলেও চিকিৎসকদের আন্তরিকতায় সন্তুষ্টি

ঢাকা মেডিকেল কলেজ হাসপাতালের মেডিসিন বিভাগে এখন ডেঙ্গু আক্রান্তদের ভিড়। প্রতিদিন এই ভিড় বাড়ছেই। বিভাগটির দুটি ওয়ার্ডের বেড সংখ্যার চেয়ে ভিড় অনেক বেশি হওয়ায় অনেক রোগীর স্থান হয়েছে মেঝেতে। তবে চিকিৎসকদের তৎপরতায় রোগীরা সন্তুষ্ট। রাতেও যেকোনো সময় ডাকতেই ছুটে আসছেন ডাক্তার ও নার্সরা।

গত বুধবার রাত সাড়ে দশটা থেকে রাত ১২টা পর্যন্ত ঢাকা মেডিকেলের মেডিসিন বিভাগে রোগী ও তাদের স্বজনদের সঙ্গে কথা বলে এমনই প্রতিক্রিয়া পাওয়া গেছে। মশা না থাকলেও আতঙ্কে অনেককে মশারির ভেতরেই অবস্থান করতে দেখা যায়। অনেকে আক্রান্ত স্বজনের পাশে বসে আছেন, অনেককে কাঁদতেও দেখা গেল। বেড না পাওয়া নিয়ে অসন্তোষ থাকলেও ডাক্তার ও নার্সদের আন্তরিকতা নিয়ে সবারই এক কথা— ‘তাঁরা যথেষ্ট করছেন।’

মেডিসিন বিভাগের ৬০১ ও ৬০২ নম্বর ওয়ার্ডে বেডে জায়গা পাননি কিংবা সদ্যই পেয়েছেন, এমন ১১ জন রোগী ও তাঁদের স্বজনদের সঙ্গে কথা হয়। তাঁদের অনেকেই অভিযোগ করেন, মশা নিধনের দায়িত্বে থাকা সরকারের বিভিন্ন বিভাগের অবহেলার কারণেই এবার ডেঙ্গুর এমন প্রকোপ।

৬০২ নম্বর ওয়ার্ডের সামনে সিঁড়ির পাশে মেঝেতে অবস্থান নিয়েছেন আনসারুল ইসলাম নামে ডেঙ্গু আক্রান্ত এক ব্যক্তি। তাঁর গ্রামের বাড়ি সাতক্ষীরা সদরে। সঙ্গে আছেন তাঁর স্ত্রী ও এক সন্তান। এলাকায় কৃষিকাজ করতেন। রোজগার ভালো হচ্ছিল না বলে সম্প্রতি ভাগ্যোন্নয়নে সপরিবারে ঢাকায় এসেছেন তিনি। থাকছেন নয়াপল্টনের একটি ভাড়া বাসায়। ভাগ্যোন্নয়নের বদলে ঢাকা প্রথমেই তাঁকে ‘উপহার’ দিয়েছে ডেঙ্গু।

আনসারুলের স্ত্রী জানালেন, পাঁচ দিন ধরে তাঁরা মেঝেতেই কাটাচ্ছেন। রোগীর চাপ বেশি হওয়ায় বেডে জায়গা পাচ্ছেন না তাঁর স্বামী। তবে ডাক্তারদের আন্তরিকতার প্রশংসা করলেন এই নারী। মশা নিধনে সিটি করপোরেশনের প্রতি ক্ষোভও ঝাড়লেন তিনি।

চার দিন মেঝেতে থাকার পর বুধবার বেডে জায়গা পেয়েছেন সুরঞ্জন ভৌমিক নামের এক শিক্ষার্থী। গত শনিবার রাজধানীর একটি বেসরকারি বিশ্ববিদ্যালয়ের দ্বিতীয় বর্ষের এই শিক্ষার্থীর জ্বর হয়। সরকারি কর্মকর্তা বাবা তাঁকে বেসরকারি হাসপাতালে নেন। অবস্থার অবনতি হলে সেখান থেকে তাঁকে ঢাকা মেডিকেলে নেওয়ার পরামর্শ দেওয়া হয়। ঢাকা মেডিকেলে নেওয়ার পরই জ্বর ছেড়ে দিলে তাঁকে নিয়ে গ্রামের বাড়ি নোয়াখালীর দিকে রওনা হয় পরিবার। কিন্তু মাঝপথে খিঁচুনি উঠলে আবারও ঢাকা মেডিকেলে ফিরিয়ে আনা হয় তাঁকে।

চার দিন মেঝেতে থাকার পর গতকাল বেডে জায়গা পেয়েছেন বলে জানালেন সুরঞ্জনের মা। তিনি বললেন, ‘এখানে অনেক সমস্যা থাকলেও ডাক্তাররা আন্তরিক। ডাক্তার ও নার্সরা ডাকলেই ছুটে আসেন।’

হাসপাতালের সহকারী পরিচালক (প্রশাসন) নাছির উদ্দীন জানান, শুক্র বা শনিবার ডেঙ্গু রোগীদের জন্য বার্ন ইউনিটে আলাদা একটি ইউনিট করা হবে। প্রথম আলোকে তিনি বলেন, এটি হয়ে গেলে মেঝেতে থাকা অনেকেই বেডে জায়গা পাবেন। দিন-রাত ২৪ ঘণ্টাই ডেঙ্গুর চিকিৎসা দেওয়া হচ্ছে। ডেঙ্গু মোকাবিলায় ঢাকা মেডিকেলের সক্ষমতা নিয়ে তাঁরা ‘মোটামুটি আত্মবিশ্বাসী’ বলে জানালেন নাছির উদ্দীন।