পুলিশের ওপর হামলা করতে চেয়েছিল 'উলফ প্যাক'

পুলিশের ওপর হামলা করতে চেয়েছিল ‘উলফ প্যাকের’ ৫ সদস্য। ছবি: প্রথম আলো
পুলিশের ওপর হামলা করতে চেয়েছিল ‘উলফ প্যাকের’ ৫ সদস্য। ছবি: প্রথম আলো

গোপন সংবাদের ভিত্তিতে নব্য জেএমবির ‘উলফ প্যাক’–এর পাঁচ জঙ্গিকে গ্রেপ্তার করা হয়েছে বলে জানিয়েছে ঢাকা মেট্রোপলিটন পুলিশের কাউন্টার টেররিজম অ্যান্ড ট্রান্স ন্যাশনাল ক্রাইম ইউনিট (সিটিটিসি)।

আজ শুক্রবার সংবাদ সম্মেলন করে তারা বলেছে, বৃহস্পতিবার (৮ আগস্ট) দুপুরে রাজধানীর বসুন্ধরা আবাসিক এলাকা থেকে তাঁদের গ্রেপ্তার করা হয়েছে। সিটিটিসির দাবি, এই পাঁচজন পুলিশের ওপর হামলার পরিকল্পনা করছিলেন।

গ্রেপ্তার ব্যক্তিরা হলেন—মোহাম্মদ শিবলী শাহাজাদ ওরফে সাদী, শাহ এম আসাদুল্লাহ মর্তুজা কবীর ওরফে আবাবীল, মাশরিক আহমেদ, মো. আশরাফুল আল আমীন ওরফে তারেক ও এসএম তাসনিম রিফাত। এর মধ্যে শিবলী শাহাজাদ ও মর্তুজা কবীর নর্থ সাউথ বিশ্ববিদ্যালয়ের বিবিএর শিক্ষার্থী। মাশরিক যশোর এম এম কলেজ থেকে বিবিএ শেষ করেছেন। তাসনিম রিফাত যশোরের উপশহর ডিগ্রি কলেজে স্নাতকে পড়ছেন। আর আশরাফুল আল আমিন শহীদ রমিজ উদ্দিন ক্যান্টনমেন্ট কলেজ থেকে উচ্চ মাধ্যমিক শেষ করেছেন।

এঁদের মধ্যে আসাদুল্লাহ মর্তুজাকে গত ২৯ জুলাই বিশ্ববিদ্যালয় থেকে ফেরার পথে গ্রিন রোড থেকে তুলে নিয়ে যাওয়া হয় বলে জানিয়েছে তাঁর পরিবার। আর মাশরিককে যশোর থেকে তুলে নিয়ে আসা হয় গত ৩১ জুলাই। বাকি তিনজনের পরিবারের সঙ্গে প্রথম আলোর পক্ষ থেকে যোগাযোগ করা সম্ভব হয়নি। রিমান্ডে এনে জিজ্ঞাসাবাদের জন্য গ্রেপ্তার এই পাঁচজনকে আজ আদালতে পাঠিয়ে ১০ দিনের রিমান্ড চায় সিটিটিসি। আদালত পাঁচ দিনের রিমান্ড মঞ্জুর করেছেন।

ঢাকা মেট্রোপলিটন পুলিশের মিডিয়া সেন্টারে দুপুরে সংবাদ সম্মেলন করে সিটিটিসির প্রধান মনিরুল ইসলাম বলেন, জঙ্গিবাদে কেউ একাকী উদ্বুদ্ধ হলে তাকে ‘লোন উলফ’ বলে। আর এই সংখ্যাটি যখন এক থেকে পাঁচজন বা তারও অধিক হয়, তখন তাকে উলফ প্যাক বা প্যাক অব উলফ বলা হয়। গ্রেপ্তার ব্যক্তিরা পুলিশের ওপর হামলার পরিকল্পনা করেছিলেন।

মনিরুল ইসলাম বলেন, গ্রেপ্তার এই পাঁচজনই বয়সে তরুণ। এর মধ্যে শিবলী শাহাজাদ ইস্তিহাদি (আত্মঘাতী) হামলার পরিকল্পনা করছিলেন। এ লক্ষ্যে তিনি আইইডি (হাতে তৈরি বোমা) তৈরির কিছু সরঞ্জাম জোগাড় করেছিলেন। সম্প্রতি (২৩ জুলাই) খামারবাড়ি ও পল্টন এলাকা থেকে উদ্ধার হওয়া আইইডিতে গ্যাসের এক ধরনের ক্যান ব্যবহৃত হয়েছিল। সে ধরনের চারটি কনটেইনার শিবলী শাহাজাদ সংগ্রহ করেছিলেন। ওই ঘটনার সঙ্গেও এই পাঁচজনের সম্পৃক্ততা রয়েছে বলে তাঁরা ধারণা করছেন।

মনিরুল ইসলাম বলেন, গুলশানের হোলি আর্টিজানে হামলা পর থেকে পুলিশের বিভিন্ন অভিযানে অনেক জঙ্গি গ্রেপ্তার বা অভিযানে নিহত হয়েছে। সে জন্য তারা পুলিশকে টার্গেট করছে। হামলার জন্য এই গ্রুপটি সুনির্দিষ্ট যে জায়গাটি নির্ধারণ করেছিল, তা কৌশলগত কারণে তারা প্রকাশ করছেন না। শিবলী শাহাজাদের হামলাটি পরিচালনা করার কথা ছিল। আর এ কাজে তাঁকে সহায়তা করার কথা ছিল মর্তুজার। মর্তুজা একদিকে আধ্যাত্মিক নেতা, আরেক দিকে সে ক্রিপ্টোকারেন্সির মাধ্যমে টেররিস্ট ফাইনান্স সংগ্রহের কাজে সে নিয়োজিত ছিল। এই হামলা পরিচালনার জন্য যে অর্থের প্রয়োজন হয়, সেটা তিনি ডার্ক ওয়েবে সংগ্রহের চেষ্টা করছিলেন। কিছু অর্থ সংগ্রহের সুনির্দিষ্ট তথ্য–প্রমাণও তাঁদের কাছে রয়েছে।

মনিরুল ইসলাম বলেন, মাশরিক আহমেদের কার্যক্রম ছিল যশোরকেন্দ্রিক। সীমান্ত অঞ্চল দিয়ে যেহেতু বিভিন্ন ক্রিমিনাল গ্রুপ অস্ত্র সংগ্রহ করে, সেদিক দিয়ে অস্ত্র সংগ্রহ করে এই গ্রুপটাকে দেওয়ার চেষ্টা করছিলেন মাশরিক। আর আশরাফুল ও তাসনিম সদস্য সংগ্রহের চেষ্টা করে আসছিলেন। এই পাঁচজনের সঙ্গে আরও কয়েকজনের নাম জিজ্ঞাসাবাদে পাওয়া গেছে। তাঁদের বিষয়েও অনুসন্ধান চলছে।

সিটিটিসির কর্মকর্তাদের সঙ্গে কথা বলে জানা যায়, এই গ্রুপের পাঁচ সদস্যের মধ্যে শিবলী শাহাজাদ ২০১৪ সাল থেকে জঙ্গিবাদে উদ্বুদ্ধ। কলাবাগান এলাকার আলামীন মসজিদে সে সময়ে জড়ো হতো এমন কিছু জঙ্গির মাধ্যমে তিনি উদ্বুদ্ধ হন। জিজ্ঞাসাবাদে শিবলী জানিয়েছেন, মর্তুজা কবিরের সঙ্গে প্রায় আড়াই মাস আগে বসুন্ধরা ডি ব্লকের একটি মসজিদে পরিচয় হয়। মাশরিক আর মর্তুজা কবির দীর্ঘদিনের বন্ধু। আর তাসনিম রিফাতকে এক সময় পড়াতেন মাশরিক।

গ্রেপ্তার মর্তুজা কবীরের মা হোসনে আরা প্রথম আলোকে বলেন, গত ২৯ জুলাই তাঁর ছেলে বিশ্ববিদ্যালয়ে ক্লাস শেষে যশোরে তাঁদের বাড়িতে আসার জন্য বাসের টিকিট কিনতে যান। সেখান থেকে কলাবাগানে তাঁর চাচার বাসায় ফেরার পথে গ্রিনরোড এলাকা থেকে তাঁকে তুলে নিয়ে যাওয়া হয়। এ ঘটনায় তাঁরা কলাবাগান থানায় নিখোঁজের একটি সাধারণ ডায়েরিও (জিডি) করেছেন। মর্তুজাকে তুলে নিয়ে যাওয়ার এক দিন পর ৩১ জুলাই মাশরিককে তাঁর বাড়ি থেকে তুলে নিয়ে যাওয়া হয়। হোসনে আরার দাবি, তাঁর ছেলে পড়ুয়া এবং নিয়মিত ধর্মকর্ম করতেন। পুলিশের ওপর হামলার যে কথা বলা হচ্ছে, তা তিনি কোনোভাবেই বিশ্বাস করেন না।