ট্রেনে ১২-১৬ ঘণ্টা পর্যন্ত বিলম্ব

স্বজনদের সঙ্গে ঈদ করতে ঝুঁকি উপেক্ষা করে ট্রেনের ছাদে চড়ছে মানুষ। গতকাল বিকেলে রাজধানীর বিমানবন্দর স্টেশনে।  ছবি: সাজিদ হোসেন
স্বজনদের সঙ্গে ঈদ করতে ঝুঁকি উপেক্ষা করে ট্রেনের ছাদে চড়ছে মানুষ। গতকাল বিকেলে রাজধানীর বিমানবন্দর স্টেশনে। ছবি: সাজিদ হোসেন

ট্রেনে আনন্দের ঈদযাত্রা দুর্ভোগে পরিণত হয়েছে। রেলের পশ্চিমাঞ্চলে ট্রেনের সময়সূচি ভেঙে পড়েছে। রেল কর্তৃপক্ষ বলছে, এসব ট্রেনে সর্বোচ্চ ১২ থেকে ১৬ ঘণ্টা পর্যন্ত বিলম্ব হবে। এ পরিস্থিতিতে ঈদের আগে দেশের উত্তর ও দক্ষিণ-পশ্চিমাঞ্চলের পথে ট্রেন চলাচল স্বাভাবিক হওয়ার সম্ভাবনা কম বলে রেলের কর্মকর্তারা মনে করছেন।

গতকাল শুক্রবার সন্ধ্যা পর্যন্ত খুলনা, রাজশাহী, রংপুর বিভাগে ট্রেন সর্বোচ্চ সাড়ে নয় ঘণ্টা পর্যন্ত বিলম্বে ছেড়েছে। গতকাল থেকে এখন পর্যন্ত পশ্চিমাঞ্চলগামী যমুনা সেতু পার হয়ে যেসব ট্রেন ঢাকা ছাড়ে, আজ শনিবার বেলা ১১টা পর্যন্ত সেসব ট্রেনের কোনোটি স্টেশনে এসেই পৌঁছায়নি। কমলাপুর রেলওয়ে স্টেশনের পুরো প্ল্যাটফর্মে মানুষ শুয়ে–বসে অবস্থান করছেন। ট্রেন আসার কোনো নির্দিষ্ট সময় না থাকায় সবাই এখন অধীর আগ্রহে ট্রেনের অপেক্ষা করছে।

সাধারণত রেল কর্তৃপক্ষ ট্রেনের দেরি হওয়ার বিষয়টি প্রকাশ করতে চায় না। পশ্চিমাঞ্চলের কোন কোন ট্রেন কত সময় পর্যন্ত দেরি করতে পারে, আজ সকালে এর একটা ধারণা প্রকাশ করে কর্তৃপক্ষ। এতে দেখা যায়, সকাল ছয়টার ধূমকেতু এক্সপ্রেস ছেড়ে যাওয়ার সম্ভাব্য সময় বেলা আড়াইটা। সকাল ৬টা ২০ মিনিটের সুন্দরবন এক্সপ্রেস দুপুর সাড়ে ১২টায়, সকাল আটটার নীলসাগর এক্সপ্রেস বিকেল সাড়ে চারটায় ছাড়তে পারে।

সবচেয়ে দেরিতে ছাড়বে লালমণি ঈদ স্পেশাল (৫)। এটি সকাল সোয়া নয়টায় ছাড়ার কথা থাকলেও প্রায় ১৩ ঘণ্টা দেরিতে রাত সাড়ে ১০টায় তা ছাড়তে পারে। এরপরই আছে রংপুর এক্সপ্রেস। সকাল নয়টার ট্রেনটি ১২ ঘণ্টা দেরিতে ছাড়বে রাত নয়টায়। এখন পর্যন্ত ঈশা খাঁ, জয়ন্তিকা, রাজশাহী এক্সপ্রেসের সম্ভাব্য সময় নির্ধারণ করতে পারেনি রেল কর্তৃপক্ষ।

উত্তরবঙ্গগামী ট্রেনগুলোর মধ্যে সবচেয়ে কম দেরিতে ছাড়ছে একতা এক্সপ্রেস। সকাল ১০টার একতা এক্সপ্রেস বেলা সাড়ে ১১টার দিকে ছাড়তে পারে, ইতিমধ্যে তা কমলাপুর রেলওয়ে স্টেশনের প্ল্যাটফর্মে পৌঁছেছে। রংপুর, গাইবান্ধা, দিনাজপুরগামী যাত্রীদের সবাই এখন একতা এক্সপ্রেসের ওপর নির্ভর করছেন।

আবু নাসের সাদ্দাম নামে নারায়ণগঞ্জের এক যাত্রী টাঙ্গাইলে যাবেন। রংপুর এক্সপ্রেসে তাঁর টিকিট কাটা ছিল। ওই ট্রেন ১২ ঘণ্টা দেরিতে ছাড়বে বলে একতা এক্সপ্রেসেই যাত্রা করার সিদ্ধান্ত নেন তিনি। উত্তরবঙ্গগামী বেশির ভাগ যাত্রী একতা এক্সপ্রেস ট্রেনের ছাদে বা বগির ভেতরে যেকোনোভাবে যাওয়ার ব্যবস্থা করছেন। ট্রেনের বগির ভেতরে মানুষের অতিরিক্ত ভিড় এবং গরম থাকার কারণে সাদ্দাম বের হয়ে আসতে বাধ্য হন।

এখন পর্যন্ত পূর্বাঞ্চলগামী ১৩টি ট্রেন কমলাপুর ছেড়ে গেছে। এই ট্রেনগুলো বেশ কাছাকাছি সময়েই ছাড়ছে, এতে তেমন বিলম্ব চোখে পড়ছে না।

বাংলাদেশ রেলওয়ে স্টেশন ব্যবস্থাপক আমিনুল হক বলছেন, গতকাল শুক্রবার টাঙ্গাইলে বঙ্গবন্ধু সেতুর পূর্ব প্রান্তে সুন্দরবন এক্সপ্রেস ট্রেনের বগি লাইনচ্যুত হওয়া ও অতিরিক্ত যাত্রীর চাপই ট্রেন বিলম্বিত হওয়ার কারণ। তিনি বলেন, বিলম্বের কারণে কোনো যাত্রী যদি ট্রেনে ঈদযাত্রা বাতিল করতে চান, তাহলে কমলাপুর স্টেশনে ১-৫ নম্বর কাউন্টারে গিয়ে টিকিট ফেরত দিতে পারবেন। সে ক্ষেত্রে টিকিটের মূল্যের পুরোটাই ফেরত দেওয়া হবে।

অগ্রিম টিকিটে ট্রেনে ঈদযাত্রা শুরু হয়েছে বুধবার থেকে। প্রথম দিন থেকেই উত্তরের পথে কিছু ট্রেন দেরিতে চলেছে। গতকাল টাঙ্গাইলে সুন্দরবন এক্সপ্রেস ট্রেনের বগি লাইনচ্যুত হওয়ায় ওই পথ ধরে চলা সব ট্রেনের সূচিই এলোমেলো হয়ে পড়ে।

রেলওয়ে সূত্র বলছে, কমলাপুর রেলস্টেশন থেকে দিনে ৭৩টি আন্তনগর ট্রেন বিভিন্ন গন্তব্যে ছেড়ে যায়। গতকাল সন্ধ্যা পর্যন্ত ২৮টি ট্রেন দেরিতে ঢাকা ছাড়ে। এর মধ্যে লালমনিরহাট স্পেশাল সর্বোচ্চ ৯ ঘণ্টা ২৫ মিনিট দেরি হয়। রংপুর এক্সপ্রেস ট্রেন সাত ঘণ্টা দেরিতে ছাড়ে। বাকি সব ট্রেনই পাঁচ থেকে ছয় ঘণ্টা করে দেরিতে ছাড়ে। ২৪টি ট্রেন ঢাকা থেকে সময়মতো ছেড়ে যায়। এর বেশ কয়েকটি পথে আটকা পড়ে কয়েক ঘণ্টা দেরিতে গন্তব্যে পৌঁছায়।