সড়ক মেরামত করলেন রিকশা-ভ্যানশ্রমিকেরা

পাবনার বেড়া পৌর এলাকার প্রধান সড়কের চৌধুরী ক্লিনিকের সামনের অংশটি দীর্ঘদিন ধরেই চলাচলের অনুপযোগী। এর মধ্যে গত দুই দিনের বৃষ্টিতে ওই স্থানে সড়কের অর্ধেক অংশ পানির তোড়ে ভেঙে গিয়ে অনেকটা খালের মতো হয়ে যায়। এর পাশে ছোট-বড় গর্ত তো রয়েছেই। গতকাল শুক্রবার এই অংশ দিয়ে চলাচল যখন প্রায় বন্ধ হওয়ার উপক্রম, তখনো সড়কটির রক্ষণাবেক্ষণের দায়িত্বে থাকা সড়ক ও জনপথ (সওজ) বিভাগ এগিয়ে আসেনি। বেড়া পৌরসভা কর্তৃপক্ষও এগিয়ে আসেনি।
শেষ পর্যন্ত সড়কটি চলাচলের উপযোগী করতে এগিয়ে আসেন বেড়া রিকশা-ভ্যানচালক সমবায় সমিতির সদস্যরা। গতকাল দুপুরের দিকে তাঁরা রাস্তায় তৈরি হওয়া বিরাট গর্তে ইট-সুরকি ফেলে চলাচলের কিছুটা উপযোগী করেছেন। তবে রাস্তায় ফেলা ইট-সুরকির খরচ পৌরসভার পক্ষ থেকে তাঁদের দেওয়া হবে বলে জানানো হয়েছে। বেড়া পৌর এলাকার অনেকেই রিকশাশ্রমিকদের এমন কর্মকাণ্ডের প্রশংসা করেন।
পৌরবাসী জানান, প্রথম শ্রেণির বেড়া পৌরসভার প্রধান সড়ক এটি। এ সড়কটি বেড়া বাসস্ট্যান্ড থেকে কানাইবাড়ী ও কাদের ডাক্তারের মোড় হয়ে ডাকবাংলোয় গিয়ে শেষ হয়েছে। বেড়া পৌর শহরসহ বিভিন্ন এলাকায় যাতায়াতের জন্য এটিই একমাত্র ভরসা। দীর্ঘদিনেও এ সড়কের বিকল্প সড়ক নির্মাণ করা হয়নি।
রিকশাশ্রমিকদের মেরামতের আগে সড়কের ওই স্থানে গিয়ে দেখা গেছে, প্রধান এই সড়কের চৌধুরী ক্লিনিকের সামনের অংশ থেকে বিটুমিনসহ ইট-খোয়া উঠে যাওয়ায় বিপজ্জনক গর্তের সৃষ্টি হয়েছে। সামান্য বৃষ্টি হলেই এই গর্তে পানি জমে থাকে। এই অংশ দিয়ে যানবাহন চলাচলের সময় প্রায় প্রতিদিনই দুর্ঘটনা ঘটছে বলে স্থানীয়রা জানান। সড়কের এই অংশের দক্ষিণ দিকে বৃষ্টির পানি গড়ানোর ফলে বড় ধরনের ভাঙনের সৃষ্টি হয়ে খালের মতো আকার ধারণ করেছে। যানবাহনগুলোকে মারাত্মক ঝুঁকি নিয়ে থেমে থেমে এই অংশ পার হতে হচ্ছে। ফলে সৃষ্টি হয়েছে তীব্র যানজটের।
এরই মধ্যে দুপুরের দিকে রিকশা-ভ্যানচালক সমবায় সমিতির সদস্যরা ইট-সুরকি নিয়ে এসে সড়কটি মেরামতে লেগে পড়েন। বড় গর্ত ও খালের মতো অংশ ইট-সুরকি দিয়ে ভরাট করেন তাঁরা। তবে এতেও যাতায়াতের দুর্ভোগ পুরোপুরি কাটেনি। তবে আগের চেয়ে কিছুটা ভালোভাবে ওই স্থান পার হতে পারছে যানবাহনগুলো।
সওজ ও বেড়া পৌরসভা কার্যালয় সূত্রে জানা গেছে, প্রধান সড়কটির বেড়া বাসস্ট্যান্ড থেকে ডাকবাংলো পর্যন্ত পাঁচ কিলোমিটার অংশ পৌরসভার মধ্যে হলেও এটি সওজের নিয়ন্ত্রণাধীন। এর আগে এই পাঁচ কিলোমিটার অংশ মারাত্মক বেহাল হলে ২০১৬ সালের জুলাই মাসে সওজ তা সংস্কার করে। এরপর গত প্রায় তিন বছরে সওজ কোনো খোঁজখবর না রাখায় আবারও এটি বেহাল হয়ে পড়ে।
রিকশা-ভ্যানচালক সমবায় সমিতির সভাপতি লাল মিয়া বলেন, ‘সড়কের এই জায়গা দিয়া রিকশা-ভ্যান চালানো দুঃসহ হয়া উঠিছে। সড়ক ভাইঙ্গা চলাচল বন্ধ হওয়ার দশা হইছিল। সড়কটা মেরামতের জন্য বিভিন্ন জায়গায় বারবার বইল্যাও কুনু কাজ হতেছিল না। তাই আমরা রিকশা ও ভ্যানশ্রমিকেরা মিল্যা রাস্তাটা আপাতত চলাচলের কিছুটা যোগ্যি করিছি। অবশ্য এ ব্যাপারে পৌরসভা আমাগরে ইট দিয়া সহায়তা করিছে।’
বেড়া পৌরসভার নির্বাহী প্রকৌশলী ফিরোজুল আলম বলেন, ‘প্রধান সড়কটির বেহাল অংশ মেরামতের দায়িত্ব সওজের। এরপরও আমরা সেখানে মাঝেমধ্যে ইট-সুরকি ফেলার ব্যবস্থা করে থাকি। রিকশা-ভ্যানশ্রমিকেরা ওখানে আপৎকালীন চলাচলের জন্য যে ইট-সুরকি ফেলেছেন, তার বিল পৌরসভার পক্ষ থেকে দেওয়া হবে। আর ক্ষতিগ্রস্ত সড়কটির পাশে আমরা দ্রুত নালা নির্মাণ করতে যাচ্ছি, যাতে পানি গড়িয়ে সড়কের ক্ষতি না হয়।’
সওজে পাবনার নির্বাহী প্রকৌশলী সমীরণ রায় বলেন, সড়কের ওই অংশে বৃষ্টির পানি জমে যাওয়ায় দ্রুত ক্ষতিগ্রস্ত হয়ে পড়ছে। বিষয়টি মাথায় রেখে তাঁরা শিগগির সেখানে মেরামতের কাজে হাত দেবেন।