হাসপাতালে বেশি মগবাজারের ডেঙ্গু রোগী

ঢাকা শহরের হাসপাতালে ভর্তি হওয়া ডেঙ্গু রোগীদের মধ্যে সবচেয়ে বেশি মগবাজার এলাকার। এই তথ্য সরকারের রোগতত্ত্ব, রোগনিয়ন্ত্রণ ও গবেষণা প্রতিষ্ঠানের (আইইডিসিআর)। মগবাজারের একটি অংশ উত্তর সিটি করপোরেশনে, বাকি অংশ দক্ষিণ সিটি করপোরেশনে।

ঢাকার সরকারি ও স্বায়ত্তশাসিত ১০টি এবং বেসরকারি ৩০টি হাসপাতালে ভর্তি হওয়া ৪ হাজার ৮৭৪ জন রোগীর তথ্য বিশ্লেষণ করে আইইডিসিআর এই তথ্য দিয়েছে। মগবাজারের পর সবচেয়ে বেশি রোগী রামপুরা এলাকার।

আইইডিসিআরের পরিচালক অধ্যাপক মীরজাদী সেব্রিনা প্রথম আলোকে বলেন, ‘কোনো এলাকার সবচেয়ে রোগী বেশি হওয়ার অর্থ এই নয় যে সেই এলাকায় ডেঙ্গু ভাইরাস সংক্রমণের প্রবণতা বেশি। কারণ, মানুষ কর্মস্থলে, শিক্ষার্থীরা শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানেও আক্রান্ত হতে পারে। মানুষের চলাচলের ওপর পৃথক তথ্য থাকলে পূর্ণাঙ্গ ব্যাখ্যা করা সম্ভব কোন এলাকার মানুষ বেশি আক্রান্ত হচ্ছে।’

কোন এলাকার রোগী বেশি

হাসপাতালে ভর্তি ডেঙ্গু রোগীদের বাড়ির ঠিকানার ভিত্তিতে আইইডিসিআর বলছে কোন এলাকার রোগী বেশি। তাতে দেখা গেছে, ঢাকার বিভিন্ন হাসপাতালে মগবাজার এলাকার রোগী পাওয়া গিয়েছিল ২৫০ জনের বেশি। আর রামপুরার রোগী ছিল ২০০ জনের বেশি। বনানী, গুলশান, মোহাম্মদপুর, জাফরাবাদ, খিলগাঁও, মালিবাগ—এসব এলাকার দেড় থেকে দুই শ জন করে রোগী হাসপাতালে ছিল। সায়েদাবাদ ও মুরাদপুরের কোনো রোগী হাসপাতালে ছিল না।

দুই সিটি করপোরেশনের বাকি এলাকাগুলোর এক থেকে দেড় শ জন করে ডেঙ্গু রোগী হাসপাতালে ভর্তি হয়।

মশা বেশি

স্বাস্থ্য অধিদপ্তরের রোগনিয়ন্ত্রণ শাখা ঢাকার দুই সিটি করপোরেশনে বছরে তিনবার মশা জরিপ করে। এ বছর প্রথম মার্চ মাসে তারা ১০০টি এলাকায় জরিপ করেছিল। এরপর জুলাইয়ের ১৭ থেকে ২৭ পর্যন্ত আবার জরিপ করে। তাতে দেখা গেছে, উত্তর সিটি করপোরেশনে সবচেয়ে বেশি মশা ১৮ নম্বর ওয়ার্ড (বারিধারা, কালাচাঁদপুর, নর্দ্দা, শাহজাদপুর) ও ১৯ নম্বর ওয়ার্ডে (বনানী, গুলশান, কড়াইল, মহাখালী)। ১ (উত্তরা), ২১ (বাড্ডা), ২৩ (খিলগাও, পূর্ব হাজীপাড়া, মালিবাগ, মালিবাগ চৌধুরীপাড়া) ও ৩২ নম্বর ওয়ার্ডে (লালমাটিয়া, মোহাম্মদপুর) বেশি মশা পাওয়া যায়।

অন্যদিকে দক্ষিণ সিটি করপোরেশনের ৫ (মুগদা, রাজারবাগ, কদমতলা বাসাবো), ১২ (মালিবাগ, গুলবাগ, শান্তিবাগ), ২০ (সেগুনবাগিচা, তোপখানা রোড, ফুলবাড়িয়া, বুয়েট এলাকা), ৩৯ (মানিকনগর, কাজিরবাগ, হাটখোলা রোড, আরকে মিশন রোড), ৪০ (দয়াগঞ্জ, নারিন্দা), ৪৫ (শশীভূষণ চ্যাটার্জি লেন, রজনী চৌধুরী লেন) ও ৪৬ নম্বর ওয়ার্ডে (মিল ব্যারাক, অক্ষয় দাস লেন) মশা বেশি পাওয়া গিয়েছিল।

আইইডিসিআরের পরিচালক বলেন, সম্প্রতি রোগনিয়ন্ত্রণ শাখা ঢাকার মশা জরিপ করেছে। বিশ্লেষণে দেখা গেছে, মশা বেশি এমন এলাকার রোগীও হাসপাতালে বেশি।’ তিনি বলেন, ডেঙ্গু নিয়ন্ত্রণে রোগী ও মশার তথ্য কাজে লাগানোর সুযোগ আছে।

ওই জরিপে দেখা গিয়েছিল, ২২.৯০ শতাংশ মশার জন্মস্থল পরিত্যক্ত টায়ার। জরিপে আরও ৯টি উৎসের কথা বলা হয়। এর মধ্যে আছে পানি আছে, এমন ভবনের এমন মেঝে, প্লাস্টিকের ড্রাম, পানির ট্যাংক, প্লাস্টিকের বালতি, মাটির পাত্র, ফুলের টব বা ট্রে, রঙের পাত্র, টিন বা ধাতব পাত্র, প্লাস্টিকের মগ বা বদনা।

কারা বেশি আক্রান্ত

হাসপাতালে ভর্তি হওয়া ৭ হাজার ৭৭০ জন রোগীর বয়স বিশ্লেষণ করে আইইডিসিআর বলছে, ১৫ থেকে ৩৫ বছর বয়সীরা ডেঙ্গুতে সবচেয়ে বেশি আক্রান্ত হচ্ছে। আক্রান্তদের ৫২ শতাংশ এই বয়সী।

আবার ৮ হাজার ৪৮৮ জনের তথ্যে দেখা যাচ্ছে, আক্রান্তদের ৬৫ শতাংশ পুরুষ ও ৩৫ শতাংশ নারী।

আইইডিসিআর শুধু রোগতত্ত্ব নিয়ে কাজই করে না। তারা স্বাস্থ্য পরীক্ষাও করে। এ বছর ৪৯৯ জন ডেঙ্গু পরীক্ষার জন্য আইইডিসিআরের পরীক্ষাগারে এসেছে। এদের মধ্যে ১৫৫ জনের ডেঙ্গু শনাক্ত হয়েছে। শনাক্ত ব্যক্তিদের ৪২ শতাংশ শিক্ষার্থী।

আইইডিসিআর দেখেছে, পরীক্ষা করতে এসে ডেঙ্গু রোগীরা ১৫টি শারীরিক অসুবিধার কথা বলে। এর মধ্যে আছে জ্বর, মাথাব্যথা, শরীরব্যথা, অসুস্থতা বোধ, বমিভাব, গিরায় ব্যথা, মারাত্মক দুর্বলতা, কাশি, পেটব্যথা।

এ ব্যাপারে ভাইরোলজিস্ট ও বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিব মেডিকেল বিশ্ববিদ্যালয়ের সাবেক উপাচার্য নজরুল ইসলাম প্রথম আলোকে বলেন, পুরুষের ও যুব জনগোষ্ঠীর ঘরে ও কর্মস্থলে, স্কুলে এডিস মশার কামড় খাওয়ার ঝুঁকি বেশি।

তবে সরকারের হিসাবে ও প্রথম আলোর নিজস্ব অনুসন্ধানে দেখা গেছে, ডেঙ্গুতে নারীদের মৃত্যু বেশি হচ্ছে। এ ব্যাপারে অধ্যাপক নজরুল ইসলাম বলেন, এর পেছনে সামাজিক কারণ রয়েছে। নারী অসুস্থ হলে পুরুষের চেয়ে গুরুত্ব কম পায়। নারীকে হাসপাতালে নেওয়া হলেও তা অনেক বিলম্বে হয়।