উত্তর-পশ্চিমের বাসেও শিডিউল বিপর্যয়

প্রথম আলো ফাইল ছবি
প্রথম আলো ফাইল ছবি

ঈদযাত্রায় উত্তর ও পশ্চিমাঞ্চলের বাসেও শিডিউল বিপর্যয় ঘটেছে। আর তাতে ভোগান্তিতে পড়েছেন যাত্রীরা। পরিবহন–সংশ্লিষ্ট ব্যক্তিরা বলছেন, সময়মতো বাসগুলো ফিরে আসতে না পারায় ঢাকা থেকে সেগুলো ছাড়া যাচ্ছে না।

আজ শনিবার রাজধানীর গাবতলী ও কল্যাণপুর বাস টার্মিনালে গিয়ে যাত্রীদের ভোগান্তির এ চিত্র দেখা গেছে। গাবতলী ও কল্যাণপুরের বাস কাউন্টারগুলোয় তিল ধারণের জায়গা নেই। কাউন্টারের সামনে ফুটপাত আর সড়কে অপেক্ষা করছেন। সেখানে বেশি কষ্ট পাচ্ছেন নারী ও শিশুরা।

ঘণ্টার পর ঘণ্টা বাসের অপেক্ষায় থেকে কষ্ট পেলেও আপনজনদের সঙ্গে ঈদের আনন্দ ভাগ করে নিতে পারার তীব্র আগ্রহে সব কষ্ট সয়ে যাচ্ছেন তাঁরা।

বেলা সাড়ে ১১টায় কল্যাণপুরে গিয়ে দেখা গেল, গ্রামীণ পরিবহনের একটি বাস ছেড়ে যাচ্ছে। যাত্রীদের সঙ্গে কথা বলে জানা গেল, গত রাত পৌনে ১২টায় গাড়িটি ছাড়ার সময় নির্ধারিত ছিল। গাড়ির যাত্রী সাফায়েত হোসেন পরিবারের চার সদস্যকে নিয়ে নাটোর যাচ্ছিলেন। তিনি বলেন, ছোট দুই শিশুসন্তানকে নিয়ে ১২ ঘণ্টারও বেশি সময় তাঁকে অপেক্ষা করতে হয়েছে। অবর্ণনীয় কষ্ট পেলেও বাড়ি পৌঁছতে পারলে সব কষ্ট লাঘব হয়ে যাবে বলে জানালেন তিনি।

হানিফ পরিবহনের যাত্রী সাহাবুদ্দিন মজুমদার জানালেন, সকাল আটটায় বাস ছাড়ার কথা। কিন্তু তখনো বাস আসেনি কাউন্টারের সামনে। কখন আসবে তাও জানা নেই। টিকিট আগে কাটা, তাই ফেরত দেওয়ার উপায়ও নেই। আবার ফেরত দিলে অন্য গাড়ি পাওয়ার সম্ভাবনা নেই। তাই অপেক্ষা অপেক্ষা করা ছাড়া উপায়ও নেই।

জানতে চাইলে হানিফ পরিবহনের একজন ব্যবস্থাপক জানালেন, সকাল সোয়া ছয়টার একটি বাস ছেড়ে গেছে দুপুর ১২টায়।

গাড়ি ছাড়তে দেরি হওয়ার কারণ জানতে চাইলে সাকুরা পরিবহনের ব্যবস্থাপক রাজু জানালেন, আবহাওয়া খারাপ থাকার কারণে ফেরি ঠিকমতো চলাচল করতে পারছে না। নদীর প্রচণ্ড স্রোতের কারণে ফেরি বন্ধ ছিল। আরিচার ওপারে আট থেকে নয় কিলোমিটার যানজট তৈরি হয়েছে। এ কারণে ওদিক থেকে গাড়ি আসতে সময় লাগছে।

গাইবান্ধা যেতে আল হামরা পরিবহনে আজ সকাল ১০টা টিকিট নিয়েছিলেন কলেজশিক্ষক মোস্তাফিজ। সাড়ে ১১টায় ওই কাউন্টারের সামনে তাঁর সঙ্গে কথা হয়। তিনি বলেন, কাউন্টারের লোকজন জানিয়েছেন, ওই বাস সকাল ১০টায় গাইবান্ধা থেকে ছেড়েছে। সেটি ঢাকা আসার পর গাইবান্ধার উদ্দেশে ছেড়ে যাবে।

ওই পরিবহনের ব্যবস্থাপক দেলোয়ার হোসেন বলেন, রাস্তায় যানজটের কারণে গাড়ি আসতে পারছে না। যথাসময়ে ছাড়া যাচ্ছে না। এ অবস্থায় যাঁরা টিকিট ফেরত দিতে চাইছেন, তাঁদের টিকিটের টাকা ফেরত দেওয়া হচ্ছে।

এই অবস্থায় বিপদে আছেন যাঁরা পরিবার-পরিজন নিয়ে যাচ্ছেন তাঁরা। টিকিটের টাকা ফেরত নিলে আবার টিকিট পাওয়া যাবে না, সে আশঙ্কায় টিকিট ফিরিয়ে না দিয়ে অপেক্ষা করছেন। তবে কেউ কেউ টিকিটের টাকা ফেরত নিয়ে নিচ্ছেন। কোনো গাড়ি ছাড়তে দেখলে অতিরিক্ত আসনের টিকিট কেটে রওনা হয়ে যাচ্ছেন।

ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের দুই শিক্ষার্থী আরিফ ও তানিম। তাঁরা টিকিট কিনেছিলেন সকাল সাড়ে ছয়টার। বাসের দেরি হওয়ার তথ্য পেয়ে ফেরত নেন টিকিটের টাকা। দুপুর ১২টার দিকে একটি বাস ছেড়ে যাওয়ার সময় বাসের সহকারীকে অনুরোধ করে অতিরিক্ত আসনে উঠে পড়লেন। কথা হলো তাঁদের সঙ্গে। বললেন, ‘এই বাসে উঠে অন্তত ছয় থেকে সাত ঘণ্টা এগিয়ে গেলাম। কারণ, আমরা যে বাসে টিকিট করেছিলাম, সেটা ছয় থেকে সাত ঘণ্টার আগে আসার সম্ভাবনা নেই। এখন রাস্তায় কত সময় লাগে সেটার অপেক্ষা। রাস্তায় কী ভোগান্তি হয় সেটার অপেক্ষা করা ছাড়া উপায়ও নেই। তারপরও বাড়ির পথে রওনা হওয়াতেই আনন্দ।’

আরও পড়ুন: