ইজারা ছাড়াই মাঠে বসেছে পশুর হাট

একবার গুঁড়িয়ে দেওয়ার পরও ‘জল সবুজের ঢাকা’ প্রকল্পের আওতায় থাকা গোলাপবাগ মাঠে অবৈধভাবে বসেছে পশুর হাট। ছবি: প্রথম আলো
একবার গুঁড়িয়ে দেওয়ার পরও ‘জল সবুজের ঢাকা’ প্রকল্পের আওতায় থাকা গোলাপবাগ মাঠে অবৈধভাবে বসেছে পশুর হাট। ছবি: প্রথম আলো

ইজারা ছাড়াই রাজধানীর গোলাপবাগ মাঠে বসেছে কোরবানির পশুর হাট। গত সোমবার অবৈধভাবে বসা সেই হাট উচ্ছেদ করা হলেও আজ শনিবার মাঠের অর্ধেকজুড়ে আবার বসে পশুর হাট। এলাকাবাসীর দাবি, যদিও ইজারা দেওয়া হয়নি তবুও হাট বসানোর প্রস্তুতিই ছিল ঠিকাদারি প্রতিষ্ঠান ও সংশ্লিষ্টদের। উচ্ছেদের পরই সেখানে হাট বসে যায়।

গোলাপবাগ মাঠ দীর্ঘ এক দশক ধরে মেয়র হানিফ ফ্লাইওভারের নির্মাণসামগ্রী রাখার কাজে ব্যবহৃত হয়েছে, যা পরে দখলমুক্ত করে ২০১৭ সালের ১৮ অক্টোবর অত্যাধুনিক সুবিধাসহ বিনোদনকেন্দ্র করার উদ্যোগ নেওয়া হয়। ১৪ কোটি টাকা প্রাক্কলিত ব্যয় ধরে এই মাঠের নির্মাণকাজ শেষ হওয়ার কথা ছিল ২০১৮ সালের সেপ্টেম্বরে। কিন্তু দফায় দফায় এই মাঠের প্রাক্কলিত ব্যয় বেড়ে যায়, বাড়ানো হয় নির্মাণ বরাদ্দ। সর্বশেষ চলতি বছরের এপ্রিলে জানানো হয়, মাঠটির কাজ শেষ হবে এ বছরের জুনে। কিন্তু এখনো মাঠের কাজ বাকি আছে অনেকটাই। এরই মধ্যে গত দুই বছরের ধারাবাহিকতায় চলতি বছরও মাঠে অবৈধভাবে বসেছে কোরবানির পশুর হাট।

শনিবার সরেজমিনে দেখা যায়, মাঠের প্রবেশমুখেই একটি তোরণে হাটের ব্যানার। মাঠ এলাকার প্রায় অর্ধেকজুড়ে ত্রিপোল টানানো এবং তাতে জমে উঠেছে পশুর হাট। ব্যানারে লেখা আছে, ইজারাদার হলেন হামিদ উল্লাহ। এই হাট আয়োজন নিয়ে স্থানীয়ভাবে বিলি করা প্রচারপত্র অনুযায়ী, হাটের পরিচালনায় আছেন ৪৯ নম্বর ওয়ার্ড আওয়ামী লীগের বর্তমান সভাপতি এম এ মান্নান, সাধারণ সম্পাদক শামীম আহমেদ ও আবুল কালাম।

অভিযোগ আছে ঠিকাদারি প্রতিষ্ঠান ইউডিসি কনস্ট্রাকশন আগেই বাউন্ডারি দেয়াল তুলে প্রস্তুতি নিয়েছে হাটের। ছবি: প্রথম আলো
অভিযোগ আছে ঠিকাদারি প্রতিষ্ঠান ইউডিসি কনস্ট্রাকশন আগেই বাউন্ডারি দেয়াল তুলে প্রস্তুতি নিয়েছে হাটের। ছবি: প্রথম আলো

মাঠটি নিয়ে ৫ আগস্ট প্রথম আলোতে একটি প্রতিবেদন প্রকাশিত হয়। সেখানে হামিদ উল্লাহ দাবি করেন, তিনি ওয়ার্ক অর্ডারের জন্য আবেদন করেই প্রস্তুতি শুরু করেন। যদিও ৫ তারিখেই বুলডোজার দিয়ে গুঁড়িয়ে দেওয়া হয় হাটের প্রস্তুতি। এরপর ৮ তারিখেই আবার সেখানে হাট বসে যায়। যদিও সেদিন সিটি করপোরেশনের কর্মকর্তারা দাবি করেন যে এই মাঠে হাটের কোনো ইজারা তাঁরা দেননি।

হামিদ উল্লাহ শনিবার প্রথম আলোকে বলেন, তিন দিন আগে ৩১ লাখ ৮০ হাজার টাকায় তিনি হাটের ইজারা নিয়েছেন। এ–সংক্রান্ত প্রয়োজনীয় নথিও তাঁর কাছে আছে বলে দাবি করেন হামিদ।

শনিবার ডিএসসিসির প্রধান সম্পত্তি কর্মকর্তা রাসেল সাবরিনের সঙ্গে যোগাযোগ করা হলে তিনি আবার নিশ্চিত করেন যে এ মাঠে ইজারা দেওয়া হয়নি। মাঠের আশপাশে দেওয়া হয়েছে। তবে ওই মাঠে এখন আবার হাট বসেছে কি না, সে বিষয়ে তিনি কিছু জানেন না বলে জানান।

ঠিকাদারি প্রতিষ্ঠান ইউডিসি কনস্ট্রাকশনের মালিক জসিম উদ্দিন নিশ্চিত করেন যে মাঠে হাট বসেছে। তিনি বলেন, হাট ঠিক মাঠে যে অংশে কাজ হচ্ছে সেখানে নয়। কারণ যে অংশে কাজ হচ্ছে, সেখানে দেয়াল তুলে মাঠকে আলাদা করা হয়েছে। জসিম উদ্দিনের দাবি, যে অংশে হাট বসেছে, সেই অংশের নকশা এখনো স্থাপত্য প্রতিষ্ঠান তাদের হাতে দেয়নি। ফলে সেখানে হাট হলেও কাজে কোনো সমস্যা হচ্ছে না। তবে হাট বসায় দুই দিন আগেই কাজ বন্ধ রাখতে হয়েছে বলে জানান তিনি।

এলাকাবাসীর দাবি, হাটের কারণে আরও পেছাবে মাঠ প্রকল্প, বাড়বে ব্যয়। ছবি: প্রথম আলো
এলাকাবাসীর দাবি, হাটের কারণে আরও পেছাবে মাঠ প্রকল্প, বাড়বে ব্যয়। ছবি: প্রথম আলো

এই মাঠের স্থাপত্য প্রতিষ্ঠান ভিত্তি স্থপতিবৃন্দ লিমিটেডের প্রধান স্থপতি ইকবাল হাবিব ঠিকাদারি প্রতিষ্ঠানের বিরুদ্ধে অভিযোগ করে বলেন, ইউডিসি কনস্ট্রাকশন যে দুটি মাঠের কাজ পেয়েছে তার অগ্রগতি খুব ধীর। ওই প্রতিষ্ঠানকে ১১টি তাগাদা চিঠি দেওয়া হয়েছে। ইকবাল হাবিব বলেন, মাঠের কোনো অংশের নকশা দেওয়াই বাকি নেই। এক বছর আগেই সব নিশ্চিত করা হয়েছে। যেখানে হাট বসেছে, সেটি খেলার মাঠ। এটি সংস্কারে কয়েক কোটি টাকা ইতিমধ্যে ব্যয় করা হয়েছে। হাট বসার ফলে এর পুরোটাই নষ্ট হবে। হাট বসানোর পেছনে ঠিকাদারি প্রতিষ্ঠানের স্বার্থ আছে বলেও দাবি করেন তিনি।

ওদিকে এলাকাবাসীর দাবি, হাট বসানোর সার্বিক প্রস্তুতি ছিল ঠিকাদারি প্রতিষ্ঠানের। ফলে তারা আগেই মাঠে বাউন্ডারি তুলেছে। ঈদের আগে বাণিজ্যিক ভবনের ছাদ ঢালাই হওয়ার কথা থাকলেও দুই দিন আগেই তারা কাজ গুটিয়ে চলে যায়।