ঈদের জামা পরা হলো না ছোট্ট মেহরিমার

বাবার সঙ্গে হাটে গিয়ে কোরবানির জন্য একটা লাল গরু কেনার বায়না ছিল মেহরিমার। নতুন জামা পরে বাড়ির সবার সঙ্গে আনন্দ করতেও চেয়েছিল সে। কিন্তু শিশুটির কোনো আবদারই পূরণ হলো না। ডেঙ্গু জ্বরে আক্রান্ত হয়ে মারা গেছে সে।

রাজধানীর ধানমন্ডি এলাকার একটি বেসরকারি হাসপাতালে শুক্রবার রাত সাড়ে নয়টার দিকে চিকিৎসাধীন অবস্থায় মারা যায় সাড়ে তিন বছরের মেহরিমা। তার বাবা নারায়ণগঞ্জের রূপগঞ্জের ভাওয়ালিয়া এলাকার ব্যবসায়ী মোজাম্মেল ব্যাপারী।

ডেঙ্গু-আক্রান্ত হয়ে চিকিৎসাধীন চারজনের মৃত্যুর খবর পাওয়া গেছে শনিবার। এ নিয়ে ডেঙ্গুতে শনিবার পর্যন্ত ১২৬ জন মারা গেছেন। সরকারি-বেসরকারি হাসপাতালের দায়িত্বশীল কর্মকর্তা, সংশ্লিষ্ট জেলার সিভিল সার্জন ও রোগীর স্বজনদের সঙ্গে কথা বলে এবং স্বাস্থ্য অধিদপ্তরের তথ্য সমন্বয় করে প্রথম আলো মৃত্যুর এই হিসাব পেয়েছে। তবে মৃত্যু পর্যালোচনা কমিটির মাধ্যমে যাচাই-বাছাই করে ২৯ জনের ডেঙ্গুজনিত মৃত্যুর তথ্য নিশ্চিত করেছে স্বাস্থ্য অধিদপ্তর।

মেহরিমার বাবা মোজাম্মেল ব্যাপারী জানান, চার দিন আগে তাঁর একমাত্র মেয়ে মেহরিমা জ্বরে আক্রান্ত হয়। শারীরিক অবস্থার অবনতি হলে ধানমন্ডির বেসরকারি হাসপাতালে নিয়ে যাওয়া হয়। পরীক্ষা-নিরীক্ষার পর চিকিৎসকেরা জানান, মেহরিমা ডেঙ্গুতে আক্রান্ত হয়েছে। বুধবার রাতে শিশুটির শারীরিক অবস্থার আরও অবনতি হলে তাকে নিবিড় পরিচর্যা কেন্দ্রে (আইসিইউ) নেওয়া হয়। শুক্রবার রাতে চিকিৎসাধীন অবস্থায় মৃত্যু হয় মেহরিমার।

একমাত্র মেয়েকে হারিয়ে হতবিহ্বল হয়ে পড়েছেন মেহরিমার মা মাছুমা আক্তার। মেয়ের জন্য বিলাপ করতে করতে তিনি বলছিলেন, ‘আমাকে বলেছিল, বাবার সঙ্গে হাটে গিয়ে একটি লাল গরু কিনে আনবে। নতুন জামা পরে অন্য সব শিশুদের সঙ্গে আনন্দ করবে। আমার মেয়েকে ছাড়া আমি এখন কীভাবে বাঁচব?’

মেহরিমার মৃত্যুর বিষয়টি নিশ্চিত করে নারায়ণগঞ্জের সিভিল সার্জন মোহাম্মদ ইমতিয়াজ শনিবার রাতে প্রথম আলোকে বলেন, ডেঙ্গুতে আক্রান্ত হয়ে সাড়ে তিন বছরের একটি শিশুর মৃত্যুর খবর তিনি জেনেছেন। এই নিয়ে নারায়ণগঞ্জে ডেঙ্গু আক্রান্ত হয়ে চারজনের মৃত্যু হলো।

এদিকে সরকারি হিসাবে জুলাইয়ের প্রথম ১০ দিনের তুলনায় আগস্টের প্রথম ১০ দিনে ডেঙ্গু-আক্রান্ত রোগীর হাসপাতালে ভর্তি বেড়েছে ১০ গুণের বেশি। জুলাইয়ের ওই সময়ে ভর্তি হয়েছিল ১ হাজার ৯২২ জন। আর আগস্টে এটি বেড়ে দাঁড়িয়েছে ২০ হাজার ৩৮৩ জনে। প্রতিদিন নতুন করে ভর্তি হচ্ছে প্রায় ২ হাজার রোগী।

স্বাস্থ্য অধিদপ্তরের হেলথ ইমার্জেন্সি অপারেশনস সেন্টার ও কন্ট্রোল রুমের তথ্য বলছে, ডেঙ্গু-আক্রান্ত হয়ে সর্বশেষ ২৪ ঘণ্টায় নতুন করে ভর্তি হয়েছে ২ হাজার ১৭৬ জন।

সরকারি হিসাবে দেখা যাচ্ছে, আগস্টের শুরু থেকে প্রতিদিনই বাড়ছিল ডেঙ্গু-আক্রান্তের সংখ্যা। গত বৃহস্পতিবার ও শুক্রবার এটি আগের দিনের তুলনায় কমতে থাকে। বুধবার নতুন করে ভর্তি হয়েছিল ২ হাজার ৪২৮ জন। বৃহস্পতিবার কমে ২ হাজার ৩২৬ এবং শুক্রবার এটি দাঁড়ায় ২ হাজার ২ জনে। শনিবার তা আবার বেড়ে যায়। প্রতিদিনই আনুপাতিক হারে ঢাকার তুলনায় ঢাকার বাইরে আক্রান্তের সংখ্যা বেড়ে চলছে। আগের দিনের তুলনায় শনিবার ঢাকার বাইরে ভর্তি বেড়েছে ১১৮ জন, আর ঢাকায় বেড়েছে ৫৬ জন।