গরু মোটাতাজা করে ধরা খেয়েছেন খামারিরা

মোটাতাজা করা এসব গরু বিক্রি হয়নি। গতকাল রংপুরের তারাগঞ্জ পশুর হাটে।  ছবি: প্রথম আলো
মোটাতাজা করা এসব গরু বিক্রি হয়নি। গতকাল রংপুরের তারাগঞ্জ পশুর হাটে। ছবি: প্রথম আলো

আগামীকাল সোমবার পবিত্র ঈদুল আজহা। আজ রোববারই কোরবানির পশু কেনাবেচার শেষ দিন। রংপুরের বদরগঞ্জ ও তারাগঞ্জ উপজেলায় কৃত্রিম উপায়ে গরু মোটাতাজাকারী শতাধিক খামারি ও ব্যবসায়ী লোকসানের মুখে পড়েছেন। কারণ, এসব গরুর অধিকাংশই বিক্রি হয়নি।

পাঁচজন খামারি বলেন, তাঁরা তিন–চার মাস আগে বিভিন্ন হাটবাজার থেকে রোগা–পাতলা এঁড়ে গরু কিনে এনে মোটাতাজা করেন। এ জন্য গরুকে তাঁরা বিভিন্ন বড়ি সেবন করান এবং স্টেরয়েড–জাতীয় ইনজেকশন পুশ করেন। তা ছাড়া কৃত্রিম খাদ্য খাওয়ান। এতে তিন মাসেই গরু ফুলে–ফেঁপে ওঠে। কোরবানির ঈদে সাধারণত ক্রেতাদের সব সময় দৃষ্টি থাকে মোটাতাজা গরুর দিকে। কিন্তু এবার এর ব্যতিক্রম ঘটেছে। ক্রেতাদের মোটাতাজা গরু কেনার প্রতি তেমন আগ্রহ ছিল না।

বদরগঞ্জের গরু ব্যবসায়ী হায়দার আলী বলেন, অতীতে কোরবানির ঈদে মোটাতাজা এঁড়ে গরুর চাহিদা ছিল বেশি। এবার চার ভাগের এক ভাগ ওই গরু বিক্রি হয়নি। কারণ, ক্রেতাদের ধারণা, মোটাতাজা করা গরু মানেই ক্ষতিকর ইনজেকশন দেওয়া। ধারণাটা একেবারেই যে অমূলক, তা–ও নয়। তবে ক্ষতিকর ইনজেকশন দিয়ে যে সব গরু মোটাতাজা করা হয়েছে, সেটাও নয়। তিনি আরও বলেন, ‘এবার লাভের আশায় আমি মোটাতাজা শতাধিক এঁড়ে গরু কিনে ধরা খেয়েছি। ১০টি গরুও বিক্রি করতে পারিনি। এ অবস্থায় বিপুল পরিমাণ লোকসানের মুখে পড়েছি।’

বদরগঞ্জ ও তারাগঞ্জে অর্ধশতাধিক পশুর হাট ঘুরে দেখা গেছে, বিভিন্ন খামারে কৃত্রিম উপায়ে মোটাতাজা করা এঁড়ে গরুর আমদানি ছিল সবচেয়ে বেশি। কৃষকের বাসাবাড়িতে প্রাকৃতিক খাদ্য খাইয়ে পালন করা গরুর আমদানি ছিল খুবই কম। কিন্তু ক্রেতাদের মোটাতাজা গরু কেনার প্রতি আগ্রহ দেখা যায়নি। এসব গরুর অধিকাংশই শেষ পর্যন্ত বিক্রি না হওয়ায় হতাশা প্রকাশ করেন খামারি ও ব্যবসায়ীরা।

>অধিকাংশ গরু বিক্রি হয়নি। শতাধিক খামারি ও ব্যবসায়ী লোকসানের মুখে পড়েছেন। এসব গরু তিন–চার মাসের মধ্যে মারা যেতে পারে বলে আশঙ্কা।


উপজেলা প্রাণিসম্পদ কার্যালয়ের দেওয়া তথ্যানুযায়ী, বদরগঞ্জ ও তারাগঞ্জ উপজেলায় গরু মোটাতাজাকারী খামারির সংখ্যা শতাধিক।

নাম প্রকাশ না করার শর্তে তারাগঞ্জের গরু মোটাতাজাকারী দুজন খামারি বলেন, তাঁরা মাস তিনেক আগে ১৪০টি এঁড়ে গরু প্রায় ৩০ লাখ টাকায় কেনেন। এসব গরু মোটাতাজা করার পেছনে ইনজেকশন পুশ করাসহ বড়ি ও কৃত্রিম খাদ্য খাওয়াতে খরচ হয়েছে আরও অন্তত তিন লাখ টাকা। কিন্তু এখন পর্যন্ত বিক্রি করতে পেরেছেন মাত্র ২০টি গরু। বাকি ১২০টি মোটাতাজা করা গরু শেষ পর্যন্ত বিক্রি করতে পারেননি। তাই তাঁরা চরম বিপদে পড়েছেন। তাঁদের মতে, কৃত্রিম উপায়ে মোটাতাজা করা গরু বেশি দিন টেকে না। তিন–চার মাসের মাথায় হঠাৎ মরে যায়। তাঁরা এখন এসব গরু নিয়ে কী করবেন, ভেবে পাচ্ছেন না। তাঁরা ভয়াবহ ক্ষতির মুখে পড়েছেন।

বদরগঞ্জ হাটে গরু কিনতে আসা আমরুলবাড়ি গ্রামের কৃষক মোক্তারুজ্জামান বলেন, ‘মোটাতাজা গরু মুই কিনবার নেও। খালি এনজেকশন মারিয়া গরু মোটা বানাইচে।’

তারাগঞ্জ হাটের ইজারাদার আতিকুর রহমান শাহ বলেন, বেশি মোটাতাজা গরু এবারে কোরবানির পশুর হাটে বিক্রি হয়নি। এতে গরু মোটাতাজা করে খামারি ও ব্যবসায়ীরা ধরা খেয়েছেন।

তারাগঞ্জ উপজেলা প্রাণিসম্পদ কর্মকর্তা সিরাজুল ইসলাম বলেন, ‘একশ্রেণির অধিক মুনাফালোভী অসাধু খামারি স্টেরয়েড–জাতীয় ক্ষতিকর ইনজেকশন দিয়ে কৃত্রিম উপায়ে গরু মোটাতাজা করেন। এসব গরুর মাংস মানবদেহের জন্য ক্ষতিকর। কিন্তু মোটাতাজা গরু মানেই যে ইনজেকশন দেওয়া, এমন ধারণাও সঠিক নয়। মানুষের মধ্যে ক্রমান্বয়ে ওই নেতিবাচক ধারণা তৈরি হওয়ায় কোরবানির পশুর হাটে এবার মোটাতাজা করা গরু তেমন বিক্রি হয়নি বলে জানতে পেরেছি।’