ধর্ষণের মামলা নিতে পুলিশের গড়িমসি

ধর্ষণের ঘটনায় আটক এক তরুণকে থানাহাজতে রেখে তাঁর পরিবারের সঙ্গে দুই পুলিশ কর্মকর্তার মীমাংসার চেষ্টার অভিযোগ উঠেছে। দীর্ঘ সময় ধরে তরুণকে থানাহাজতে আটকে রাখা হলেও থানার ওসি তা জানতেন না।

ঘটনাটি ঘটেছে টাঙ্গাইলের মির্জাপুর থানায়। ওই দুই পুলিশ কর্মকর্তা হলেন উপপরিদর্শক (এসআই) বিজয় দেবনাথ ও পরিদর্শক (তদন্ত) মো. মোশারফ হোসেন।

তরুণ থানাহাজতে অবস্থানকালে ভুক্তভোগী নারী, তাঁর ভাই ও বাবা থানায় মামলা করতে গেলে ওই দুই পুলিশ কর্মকর্তা মামলা না নিয়ে উল্টো তাঁদের নানা হুমকি দেন। কেড়ে নেওয়া হয় ভুক্তভোগী নারীর ভাইয়ের মুঠোফোন।

বিষয়টি থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা (ওসি) মো. সায়েদুর রহমান জানান, তাঁর নির্দেশে মামলা নেওয়া হয়। মামলার বাদী হন নারী নিজেই। আটক তরুণ আজিম মিয়া ওরফে শিমুলকে (২৮) ওই মামলায় গ্রেপ্তার দেখিয়ে গতকাল শনিবার সকালে টাঙ্গাইলের আদালতের মাধ্যমে জেলহাজতে পাঠানো হয়েছে। ডাক্তারি পরীক্ষার জন্য নারীকে পাঠানো হয়েছে টাঙ্গাইলের ২৫০ শয্যাবিশিষ্ট মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে।

মামলা থেকে জানা যায়, উপজেলা সদরের পাহাড়পুর গ্রামের হারুন মিয়ার ছেলে ও একটি বেসরকারি সংস্থার কর্মকর্তা আজিমের সঙ্গে একই গ্রামের কলেজপড়ুয়া এক শিক্ষার্থীর প্রেমের সম্পর্ক গড়ে ওঠে। বিয়ের কথা বলে তিনি মাঝেমধ্যেই তাঁকে ধর্ষণ করতেন। কিন্তু এক সপ্তাহ আগে তাঁর অজান্তে আজিম অন্যত্র বিয়ের চেষ্টা করেন। এরই মধ্যে গত বৃহস্পতিবার রাতে আজিম কৌশলে আবার কলেজছাত্রীর ঘরে ঢুকে তাঁকে ধর্ষণের চেষ্টা করেন। এ সময় তাঁর চিৎকারে আশপাশের লোকজন ছুটে এসে আজিমকে ধরে ফেলেন। খবর পেয়ে ভোর ছয়টার দিকে এসআই বিজয় দেবনাথ গিয়ে আজিমকে আটক করে থানায় নিয়ে আসেন।

এ ঘটনায় কলেজছাত্রীর পরিবার থানায় মামলা করতে গেলে পরিদর্শক মোশারফ হোসেন ও এসআই বিজয় দেবনাথ নানাভাবে টালবাহানা করতে থাকেন। শুক্রবার রাত সাড়ে সাতটার দিকে মির্জাপুর প্রেসক্লাবে এসে বিষয়টি গণমাধ্যমকর্মীদের জানান ভুক্তভোগী কলেজছাত্রী, তাঁর ভাই ও বাবা। ছাত্রীর ভাইয়ের অভিযোগ, এসআই বিজয় দেবনাথ তাঁদের সঙ্গে খুবই খারাপ আচরণ করেছেন। তাঁদের নামে মামলার হুমকি দিয়ে জেল খাটানোর কথা বলেছেন। গণমাধ্যমকর্মীদের সঙ্গে কথা বলার পর তাঁরা পুনরায় থানায় যান। সেখানে পুলিশের কাছে আজিমের বিরুদ্ধে পুনরায় মামলা নেওয়ার অনুরোধ করেন তাঁরা। তখন পরিদর্শক মোশারফ হোসেন ছাত্রীটির ভাইয়ের শার্টের কলার ধরে টেনে তাঁর কক্ষে নিয়ে মুঠোফোন কেড়ে নিয়ে তাঁকে বের করে দেন।

>ভুক্তভোগী নারী, তাঁর ভাই ও বাবা থানায় মামলা করতে গেলে দুই পুলিশ কর্মকর্তা মামলা না নিয়ে উল্টো নানা রকমের হুমকি দেন।


এ ঘটনার পর রাত সাড়ে আটটার দিকে থানার ওসি ঢাকা-টাঙ্গাইল মহাসড়কে ঈদের দায়িত্ব পালন শেষে থানায় আসেন। তিনি গণমাধ্যমকর্মীদের সঙ্গে আলাপকালে কলেজছাত্রীকে ধর্ষণ ও এ ঘটনায় মামলা নিয়ে পুলিশের গড়িমসির কথা জানতে পেরে হতবাক হন। পুরো ঘটনা জানার পর তিনি মামলা নেওয়ার নির্দেশ দেন।

কলেজছাত্রীর ভাইয়ের মুঠোফোন কেড়ে নেওয়ার সময় উপস্থিত ছিলেন থানার ওয়্যারলেস অপারেট মাহামুদুল হাসান। তিনি বলেন, ধর্ষণের শিকার নারীর ভাইয়ের মুঠোফোন পরিদর্শক নিয়েছিলেন, এটা ঠিক। তবে তিনি তাঁর কলার ধরেননি।

এ বিষয়ে এসআই বিজয় দেবনাথ বলেন, ‘আমি নাইট কইরা ঘুমিয়েছিলাম। বিষয়টি তদন্ত স্যার জানতেন। ওকে (আজিম) আটকের পর এক ঘণ্টা সময় চেয়েছিল বিষয়টি মীমাংসার জন্য। এ জন্য মামলা রেকর্ড করতে দেরি হয়েছে। ওসি স্যার আমার ওপর রেগেছেন। একটু লেট হইছিল জানাতে। এটা ইন্টারনাল ব্যাপার।’

পরিদর্শক মোশারফ হোসেন বলেন, ‘বিষয়টি আমি পরে জেনেছি। যে নিয়ে এসেছিল সে ওসি স্যারকে জানায়নি। এ জন্য স্যার রেগেছিলেন। এ ঘটনায় থানায় মামলা হয়েছে।’

ওসি সায়েদুর রহমান বলেন, ‘ওরা (এসআই ও পরিদর্শক) ভুলের জন্য ক্ষমা চেয়েছে।’