কিশোরীকে ওষুধ খাইয়ে গর্ভপাতের অভিযোগ

নান্দাইলে খাবারের সঙ্গে ওষুধ মিশিয়ে এক অন্তঃসত্ত্বা কিশোরীর গর্ভপাত ঘটানোর চেষ্টার অভিযোগ পাওয়া গেছে। এতে মেয়েটির জীবন সংকটাপন্ন হয়ে পড়ে। কিন্তু কোনো রকমের চিকিৎসা না দিয়ে মেয়েটিকে একটি ঘরে আটকে রাখা হয়। খবর পেয়ে পুলিশ গত শুক্রবার রাতে মেয়েটিকে উদ্ধার করে উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সে ভর্তি করে। এ ঘটনায় মেয়েটির স্বামীকে গ্রেপ্তার করেছে পুলিশ।

গতকাল শনিবার সকাল সাড়ে ৯টার দিকে উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সে গিয়ে দেখা যায়, প্রসূতি ওয়ার্ডের একটি শয্যায় ভর্তি রয়েছে মেয়েটি। কর্তব্যরত চিকিৎসক জানান, গর্ভপাতের কারণে মেয়েটির অতিরিক্ত রক্তক্ষরণ হয়েছে। ফলে তার শরীরে রক্তশূন্যতা দেখা দিয়েছে। মেয়েটির উন্নত চিকিৎসার প্রয়োজন। তাই তাকে জেলা পর্যায়ের হাসপাতালে নিয়ে যাওয়ার পরামর্শ দেওয়া হয়েছে।

স্বজনেরা সংকটাপন্ন অবস্থায় গতকাল দুপুরে কিশোরীকে ময়মনসিংহ মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে নিয়ে গেছেন। তার বাড়ি উপজেলার জাহাঙ্গীরপুর ইউনিয়নের একটি গ্রামে।

কিশোরী উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সে বসে জানায়, সে একটি মাদ্রাসায় অষ্টম শ্রেণিতে পড়ছে। তাদের আত্মীয় হুমায়ুন কবীরের (২২) সঙ্গে তার প্রেমের সম্পর্ক গড়ে ওঠে। হুমায়ুন তাকে বিয়ে করার কথা বলে তার সঙ্গে শারীরিক সম্পর্ক গড়ে তোলেন। একপর্যায়ে সে অন্তঃসত্ত্বা হয়ে পড়ে। কিন্তু হুমায়ুন তাকে বিয়ে করতে অস্বীকৃতি জানান। পরে গ্রাম্য সালিস ডাকার পর হুমায়ুন তাকে বাধ্য হয়ে স্ত্রীর মর্যাদা দিয়ে ঘরে তোলেন।

>মেয়েটির জীবন সংকটাপন্ন হয়ে পড়ে। কিন্তু কোনো চিকিৎসা না দিয়ে মেয়েটিকে একটি ঘরে আটকে রাখা হয়।


কিশোরীর ভাষ্য, বিয়ের পর থেকে শ্বশুরবাড়ির লোকজন তাকে নষ্টা বলে অপবাদ দিয়ে গর্ভের সন্তান নষ্ট করার জন্য চাপ দিতে শুরু করেন। এতে রাজি না হলে স্বামীর পরিবারের লোকজন তাকে মারধর করেন। ৩ আগস্ট তার ননাস (স্বামীর বড় বোন) পারভীন আক্তার শারীরিক দুর্বলতা কাটানোর কথা বলে তাকে এক গ্লাস দুধ খেতে দেন। দুধ খাওয়ার কিছুক্ষণ পর থেকে তার রক্তক্ষরণ শুরু হয়। এতে সে দুর্বল হয়ে পড়ে। এ অবস্থায় বাবার বাড়ির কাউকে খবর না দিয়ে তাকে ঘরবন্দী করে রাখা হয়।

নান্দাইল মডেল থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা (ওসি) মো. মনসুর আহাম্মাদ জানান, গভীর রাতে পুলিশ পাঠিয়ে কিশোরীকে উদ্ধার করে হাসপাতালে ভর্তি করা হয়। আটক করা হয় কিশোরীর স্বামীকে। এ ঘটনায় কিশোরীর বাবা বাদী হয়ে মেয়ের স্বামী, শাশুড়ি, দুই ননদসহ ছয়জনকে আসামি করে নারী ও শিশু নির্যাতন দমন আইনে মামলা করেছেন। গতকাল সকালে কিশোরীর স্বামীকে আদালতে সোপর্দ করা হয়। কিশোরী সুস্থ হলে জবানবন্দি দেওয়ার জন্য আদালতে পাঠানো হবে।

ওসি জানান, মেয়েটির শ্বশুরবাড়ির সবাই পলাতক। তাঁদের গ্রেপ্তারে অভিযান চলছে।