রাবেয়ার জ্ঞান ফিরেছে রোকাইয়ার জন্য অপেক্ষা

রাবেয়া ও রোকাইয়া।  ফাইল ছবি
রাবেয়া ও রোকাইয়া। ফাইল ছবি

‘“আম্মু, আমি কোলে উঠব”—রাবেয়ার মুখে এই শব্দ কটি শোনার পরে যে আনন্দ হয়েছে, তার কোনো সীমা নেই। আমি এখন রোকাইয়ার জেগে ওঠার অপেক্ষায় আছি। আমি দুই মেয়েকে একসঙ্গে কোলে নিতে চাই।’ অশ্রুসিক্ত হয়ে কথাগুলো বললেন জোড়া মাথার শিশু রাবেয়া-রোকাইয়ার মা তাসলিমা খাতুন।

‘সংযুক্ত যমজ রোগী রাবেয়া ইসলাম ও রোকাইয়া ইসলামের পৃথক্‌করণ (অপারেশন ফ্রিডম)’ শীর্ষক সংবাদ সম্মেলনে এভাবেই নিজের অনুভূতি জানালেন শিশু দুটির মা। গতকাল শনিবার রাজধানীর সম্মিলিত সামরিক হাসপাতালে (সিএমএইচ) সংবাদ সম্মেলনের আয়োজন করে প্রতিরক্ষা মন্ত্রণালয়ের আন্তবাহিনী জনসংযোগ পরিদপ্তর।

সংবাদ সম্মেলনে জানানো হয়, এ ধরনের অস্ত্রোপচার সারা বিশ্বেই বিরল ঘটনা। উপমহাদেশে এ রকম অস্ত্রোপচার এটিই প্রথম। ২ আগস্ট ৩৩ ঘণ্টার অস্ত্রোপচারে মাথা জোড়া লাগানো যমজ শিশু রাবেয়া-রোকাইয়াকে সফলভাবে পৃথক করা হয়েছে। সিএমএইচ হাসপাতালে মস্তিষ্কের এই জটিল অস্ত্রোপচারে যুক্ত ছিলেন হাঙ্গেরির ৩৫ জন বিশেষজ্ঞ চিকিৎসক। সঙ্গে ছিলেন দেশের শতাধিক চিকিৎসক। দু-তিন মাস পরে রাবেয়া ও রোকেয়ার পরবর্তী অস্ত্রোপচার করা হবে।

সংবাদ সম্মেলনে হাঙ্গেরির নিউরোসার্জন এন্ড্রু চোকে বলেন, শিশু দুটি হাসপাতালের পোস্ট অ্যানেসথেটিক কেয়ার ইউনিটে নিবিড় তত্ত্বাবধানে রয়েছে। গত শুক্রবার রাবেয়ার জ্ঞান ফিরেছে। শিশু দুটির অবস্থা স্থিতিশীল থাকলেও ঝুঁকিমুক্ত নয়। এ ধরনের রোগীদের অস্ত্রোপচারপরবর্তী সংক্রমণের ঝুঁকি ও জটিলতা অত্যন্ত বেশি। পাশাপাশি স্নায়ু ও হৃদ্‌রোগের সমস্যা ও শারীরিক প্রতিবন্ধী হওয়ার উচ্চ ঝুঁকি থাকে বলেও জানান তিনি।

অনুষ্ঠানে আলোচকেরা জানান, পাবনার চাটমোহরে ২০১৬ সালের ১৬ জুলাই রফিকুল ইসলাম ও তাসলিমা খাতুন দম্পতির ঘরে মাথা জোড়া লাগানো যমজ শিশু রাবেয়া-রোকাইয়ার জন্ম। চিকিৎসকদের ভাষায়, কনজয়েন্ট টুইন অথবা মাথা জোড়া লাগানো যমজ শিশু একটি বিরল সমস্যা। ২৫ লাখ জীবিত যমজ বাচ্চার মধ্যে এমন এক শিশুর জন্ম হয়।

সম্মেলনে সামরিক চিকিৎসা সার্ভিস মহাপরিদপ্তরের মহাপরিচালক মেজর জেনারেল মো. ফসিউর রহমান বলেন, বিশ্বের ১৭ নম্বর অস্ত্রোপচার হচ্ছে রাবেয়া-রোকাইয়ার অস্ত্রোপচার। আশার কথা হচ্ছে, ১২ নম্বর অস্ত্রোপচার থেকে ধারাবাহিকভাবে সফলতা আসছে। দেশে এ ধরনের জটিল সমস্যায় আক্রান্ত রোগী পাওয়া গেলে তাদের চিকিৎসা দেওয়ার ব্যবস্থা করা হবে বলে জানান তিনি।

বাংলাদেশের চিকিৎসাসেবায় এই অস্ত্রোপচার মাইলফলক উল্লেখ করে শেখ হাসিনা বার্ন অ্যান্ড প্লাস্টিক সার্জারি ইনস্টিটিউটের অধ্যাপক সামন্ত লাল সেন বলেন, এই অস্ত্রোপচারের অভিজ্ঞতা দেশের চিকিৎসকেরা ভবিষ্যতে কাজে লাগাতে পারবেন।

২০১৭ সাল থেকে এ শিশু দুটির চিকিৎসার দায়িত্ব নিয়েছিলেন প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা। হাঙ্গেরি সরকারের মাধ্যমে হাঙ্গেরিয়ান দাতব্য সংস্থা অ্যাকশন ফর ডিফেন্সলেন্স পিপল ফাউন্ডেশন (এডিপিএফ) চিকিৎসায় সক্রিয় সহায়তা করেছে।

সম্মেলনে আরও বক্তব্য দেন সাংসদ হাবিবে মিল্লাত, সিএমএইচের (ঢাকা) কমান্ড্যান্ট ব্রিগেডিয়ার জেনারেল তৌফিকুল হাসান সিদ্দিকী, হাঙ্গেরির প্লাস্টিক সার্জন গ্রেগ পাটাকি, পেডিয়াট্রিকস ইনটেন্সিভিস্ট মার্সেল, শিশুদের বাবা মো. রফিকুল ইসলাম।