'হঠাৎ ঘুম ভেঙে দেখি মেয়ে নাই'

নুসরাতের পড়ার টেবিলে বই-খাতা সবই আছে। শুধু নুসরাত নেই। পড়ার ঘরে দাঁডিয়ে আছেন তাঁর বাবা। গতকাল সোনাগাজীর উত্তর চর চান্দিয়া এলাকায় নিজ বাড়িতে।  ছবি: প্রথম আলো
নুসরাতের পড়ার টেবিলে বই-খাতা সবই আছে। শুধু নুসরাত নেই। পড়ার ঘরে দাঁডিয়ে আছেন তাঁর বাবা। গতকাল সোনাগাজীর উত্তর চর চান্দিয়া এলাকায় নিজ বাড়িতে। ছবি: প্রথম আলো

কোরবানির জন্য গরু কিনে আনার পর বেশ উৎ​সাহ নিয়ে সেটার পরিচর্যা করতেন নুসরাত। মাতিয়ে রাখতেন পুরো বাড়ি। এবার পরিবারের আদরের মেয়েটি নেই। তাই নুসরাতের পরিবারেও আনন্দ নেই। পবিত্র ঈদুল ফিতরের মতো তাঁরা ঈদুল আজহাও পার করছেন শোকে–কান্নায়।

ফেনীর সোনাগাজীর মাদ্রাসাছাত্রী নুসরাত জাহানকে গত ৬ এপ্রিল মাদ্রাসার ছাদে ডেকে নিয়ে হাত–পা বেঁধে গায়ে কেরোসিন ঢেলে আগুন ধরিয়ে দেয় দুর্বৃত্তরা। পরে ঢাকায় চিকিৎ​সাধীন অবস্থায় মারা যান নুসরাত। আলিম পরীক্ষার্থী​ নুসরাত সোনাগাজী ইসলামিয়া ফাজিল মাদ্রাসার অধ্যক্ষের যৌন হয়রানির প্রতিবাদ করতে গিয়ে অধ্যক্ষ ও তাঁর অনুসারীদের এই নৃশংসতার শিকার হন। 

নুসরাত জাহানের বাবা মাওলানা এ কে এম মুসা মিয়া। দুই দশক ধরে তিনি ঈদের নামাজ পড়িয়ে আসছেন। একমাত্র মেয়েকে হারানোর পর তাঁর ও পরিবারের ঈদের আনন্দও হারিয়ে গেছে। তিনি গতকাল শনিবার প্রথম আলোকে বলেন, ‘গত চার মাস একটি রাতও শান্তিতে ঘুমাতে পারিনি। কিছুই ভালো লাগে না। বাসার সবকিছু এলোমেলোভাবে পড়ে আছে। তার (নুসরাতের) মায়ের শরীর ভালো নেই। সব সময় কেবল মেয়ের জন্য কাঁদছে।’ 

এ কে এম মুসা মিয়া বলেন, ‘মাঝেমধ্যে ঘুমের ঘোরে স্বপ্নে দেখি নুসরাত ঘরে হাঁটছে, তার মায়ের সঙ্গে কাজ করছে, হঠাৎ ঘুম ভেঙে দেখি মেয়ে নাই। তখন আর ঘুম আসে না।’ গতকাল নুসরাতের বাড়িতে গেলে তাঁর মা শিরিনা আক্তার মেয়ের কথা বলতে গিয়ে মূর্ছা যান। তার আগে তিনি বলেন, খুনিদের ফাঁসি না হওয়া পর্যন্ত শান্তি পাবেন না তিনি। 

নুসরাতকে হত্যার নির্দেশদাতা মাদ্রাসার অধ্যক্ষ এস এম সিরাজ উদদৌলাসহ ১৬ আসামির বিচার চলছে ফেনীর আদালতে। ৯২ জন সাক্ষীর মধ্যে এ পর্যন্ত ৮৪ জনের সাক্ষ্য ও জেরা শেষ হয়েছে। নুসরাতের পরিবারের আশা হত্যাকারীদের সর্বোচ্চ শাস্তি হবে।

নুসরাতের বড় ভাই মাহমুদুল হাসান বলেন, প্রতি কোরবানির ঈদে বাজার থেকে গরু কিনে বাড়িতে আনার পর নুসরাত খুব আনন্দ করতেন। গরুর যত্ন নিতেন।’