ডেঙ্গু: একেক পরিবারে একেক রকম ঈদ

ডেঙ্গু আক্রান্ত শিশু তাসনূভার এক হাতে মেহেদি আরেক হাতে ক্যানোলা। ছবি: ফেসবুক
ডেঙ্গু আক্রান্ত শিশু তাসনূভার এক হাতে মেহেদি আরেক হাতে ক্যানোলা। ছবি: ফেসবুক

আজ ঈদ। মা সুমাইয়া আফরীন হাসপাতালের বিছানায় বসে মেয়ে তাসনূভা আফরীন আরশির হাতে মেহেদি লাগিয়ে দিয়েছেন। সেই ছবি পোস্ট করেছেন ফেসবুকে।

আজ সোমবার সকালে সুমাইয়া আফরীন বললেন, ৩ বছর ২ মাস বয়সী মেয়ে ঈদের আনন্দ সেভাবে না বুঝলেও নতুন জামা, বেড়ানো, অন্যদের নিয়ে মজা করা বোঝে। এবার তো মেয়ে হাসপাতালের চার দেয়ালে ‘বন্দী’।

উত্তরার বেসরকারি একটি হাসপাতালে আট দিন কাটিয়েছেন এই মা ও মেয়ে। আজ দুপুরের দিকে মা ও মেয়ে হাসপাতাল থেকে বাড়ি ফিরেছেন। সকালে মা জানান, এখনো ডেঙ্গু আক্রান্ত শিশুরা হাসপাতালে ভর্তি হচ্ছে। গত পরশু চোখের সামনেই এক শিশু মারা গেল। 

বড্ড একা লাগছে রাইয়ানের বাবার
ডেঙ্গুতে মারা গেছে একমাত্র ছেলে রাইয়ান। ছেলে একটু বুঝতে পারার পর থেকে প্রতি ঈদে বাবার হাত ধরে নামাজ আদায় করতে যেত। একবার অনেক জ্বর ছিল, সেই জ্বর নিয়েই ছেলে নামাজ আদায় করতে গেল। এবার এই বাবা একা নামাজ আদায় করতে গিয়েছেন। বললেন, বড্ড একা একা লাগছে।

এই পরিবারটি রয়েছে মিরপুরে রাইয়ানের মামার বাসায়। সেখানেই রাইয়ানের নামে এক ভাগ কোরবানি দিয়েছেন। এ ভাগের সব মাংস দরিদ্র ব্যক্তিদের মধ্যে বিলিবণ্টন করে দেবেন। আর এক ভাগ রেখেছেন নিজেদের জন্য। ছেলে জীবিত থাকা অবস্থায় ভাগে নয়, এককভাবে কোরবানি দিতেন বলে জানালেন রাইয়ানের বাবা মমিন সরকার।

হাসপাতালের বিছানায় মেয়ের হাতে মেহেদি লাগিয়ে দিচ্ছেন এক মা। ছবি: ফেসবুক
হাসপাতালের বিছানায় মেয়ের হাতে মেহেদি লাগিয়ে দিচ্ছেন এক মা। ছবি: ফেসবুক

ছোট মেয়ে এখনো ভাইয়া আসে না কেন, তা জানতে চায়। সে বলে, ‘ভাইয়া কবর থেকে কবে আসবে?’ এ প্রশ্নের উত্তর দিতে পারেন না বাবা-মা।

মমিন সরকার জানালেন, আজ ঈদের বেড়ানো বলতে মেয়েকে নিয়ে রাইয়ানের কবরের কাছে যাবেন। সারা দিন কাটবে ফেসবুকে ছেলের ছবি দেখে ও আগের দিনগুলোর কথা মনে করে। ছোট এক মশা তাদের ঈদের আনন্দকে মাটি করে দিয়েছে, যা আর কোনো দিন ফিরে পাবেন না।

তাঁদের অন্য রকম ঈদ
ডেঙ্গুতে আক্রান্ত যে পরিবারগুলো হাসপাতাল থেকে ঈদের আগেই ছুটি পেয়েছে, তারা অন্য রকম ভালো লাগায় ঈদ করছে। বাড়ি ফেরা এক মা নাজমা বেগম বললেন, ‘এবার আমাদের আসলেই এক অন্য রকম ঈদ, যা ভাষায় প্রকাশ করা যাবে না। বলতে গেলে মোহাম্মদপুরের এই মা যমের সঙ্গে যুদ্ধ করেই মেয়েকে নিয়ে বাড়ি ফিরতে পেরেছেন।’