ঢাকা উত্তর ও দক্ষিণ সিটির অর্ধেকের বেশি কোরবানি বর্জ্য অপসারণ

কোরবানি বর্জ্য অপসারণে কাজ করছেন সিটি করপোরেশনের কর্মীরা। মহাখালী, ঢাকা,  ১২ আগস্ট। ছবি: প্রথম আলো
কোরবানি বর্জ্য অপসারণে কাজ করছেন সিটি করপোরেশনের কর্মীরা। মহাখালী, ঢাকা, ১২ আগস্ট। ছবি: প্রথম আলো

কোরবানির বর্জ্য অপসারণে সকাল থেকেই মাঠে নেমেছেন ঢাকার দুই সিটি করপোরেশনের পরিচ্ছন্নতাকর্মীরা। দুই সিটির কর্তৃপক্ষ বলছে, যে গতিতে পরিচ্ছন্নতা অভিযান চলছে, তাতে নির্দিষ্ট সময়েই বর্জ্য অপসারণ করা সম্ভব হবে। ইতিমধ্যে দুই সিটির অর্ধেকের বেশি কোরবানির বর্জ্য অপসারণ করা হয়েছে।

আজ সোমবার রাজধানীর বিভিন্ন এলাকা ঘুরে দেখা গেছে, সিটি করপোরেশনের নির্ধারিত জায়গায় কোরবানি হয়নি বললেই চলে। বেশির ভাগ ক্ষেত্রেই কোরবানি হয়েছে বাসাবাড়ির সামনে, রাস্তার ওপরে। অনেক এলাকাতেই এর কারণে ভোগান্তিতে পড়তে হয়েছে অনেককে। আবার অনেকেই নিজ দায়িত্বে পানি ছিটিয়ে পশুর রক্ত পরিষ্কার করেছেন। বর্জ্যগুলো প্যাকেটে ভরে রেখেছেন, যা পরিচ্ছন্নতাকর্মীরা পরে এসে নিয়ে গেছেন।
মোহাম্মদপুর তাজমহল রোডের বাসিন্দা হাসিবুর রশীদ বললেন, আগের দিন রাতে সিটি করপোরেশনের পক্ষ থেকে বর্জ্য রাখার জন্য প্লাস্টিকের বস্তা প্রতিটি বাড়িতে দেওয়া হয়েছে। সকালে কোরবানির পর সেই বস্তায় পশুর বর্জ্য ভরে রাখা হয়েছে। পরিচ্ছন্নতাকর্মীরা পরে এসে সেগুলো নিয়ে গেছেন।

মনসুরাবাদ হাউজিংয়ের মামুন চৌধুরী বলেন, তাঁদের এলাকায় সিটি করপোরেশনের পক্ষ থেকে কোরবানির জন্য স্থান নির্দিষ্ট করে দিলেও সেখানে কেউ কোরবানি দিতে যাননি। নিজেদের বাড়ির সামনেই বা গ্যারেজে কোরবানি করেছেন।
রাজধানীর গ্রিন রোড এলাকায় গিয়ে দেখা গেল, কোরবানির শেষে ব্যক্তিগতভাবে বর্জ্য পরিষ্কার করছেন ভবনের বাসিন্দারা। পানি ছিটিয়ে রক্ত পরিষ্কার করে সেখানে ব্লিচিং পাউডার ছিটিয়ে দেওয়া হচ্ছে। রাভিন আলম নামের এক ব্যক্তি বললেন, ‘পরিষ্কার-পরিচ্ছন্ন নিজেদের তাগিদেই করতে হচ্ছে। এমনিতেই ডেঙ্গুর মৌসুম। তাই অন্যের অপেক্ষায় না থেকে নিজেরাই কাজ করছি।’

একই অবস্থা দেখা গেছে মহাখালী, তেজগাঁও, জিগাতলা, শ্যামলী, কল্যাণপুরসহ অন্য কয়েকটি এলাকায়।

ঢাকা উত্তর সিটি করপোরেশনের (ডিএনসিসি) প্রধান বর্জ্য ব্যবস্থাপনা কর্মকর্তা মো. মঞ্জুর হোসেন জানালেন, নিজেদের পরিচ্ছন্নতাকর্মী, স্বেচ্ছাসেবী সংস্থা ও আউটসোর্সিংয়ের মাধ্যমে নেওয়া—সব মিলিয়ে নয় হাজারের বেশি পরিচ্ছন্নতাকর্মী বর্জ্য অপসারণে কাজ করছেন। তাঁর প্রত্যাশা, প্রতিশ্রুতি অনুযায়ী কাজ শেষ করা সম্ভব হবে। তিনি আরও বলেন, বর্জ্য অপসারণের কাজ নিবিড় মনিটরিং করা হচ্ছে। কোথাও কোনো গাফিলতি বা দায়িত্বে অবহেলার খবর পাওয়া গেলে সঙ্গে সঙ্গেই ব্যবস্থা নেওয়া হচ্ছে। সকাল থেকেই কর্মীরা কাজ করছেন জানিয়ে তিনি বলেন, রাতভর কাজ চলবে।

সড়কজুড়ে ফেলে রাখা হয়েছে কোরবানি বর্জ্য। ফার্মগেট, ঢাকা, ১২ আগস্ট। ছবি: প্রথম আলো
সড়কজুড়ে ফেলে রাখা হয়েছে কোরবানি বর্জ্য। ফার্মগেট, ঢাকা, ১২ আগস্ট। ছবি: প্রথম আলো

একই ধরনের কথা বললেন ঢাকা দক্ষিণ সিটি করপোরেশনের (ডিএসসিসি) প্রধান বর্জ্য ব্যবস্থাপনা কর্মকর্তা এয়ার কমোডর মো. জাহিদ হোসেন। ডিএসসিসির প্রায় সাড়ে ৯ হাজার কর্মী বর্জ্য অপসারণে কাজ করছেন। তাঁর প্রত্যাশা, মঙ্গলবার দুপুরের ভেতরেই আজকের কোরবানির বর্জ্য অপসারণ সম্ভব হবে।

জাহিদ হোসেন জানালেন, রাজধানীর পুরান ঢাকায় ঐতিহ্য অনুসারে কালও অনেকেই কোরবানি দেবেন। ডিএসসিসি সব সময়ই সতর্ক থাকবে বর্জ্য অপসারণে। বর্জ্য অপসারণে বড় একটি জটিলতার কথা জানালেন এই কর্মকর্তা। পশুর হাটের বর্জ্য অপসারণে হিমশিম খাওয়ার কথা জানালেন তিনি। তাঁর মতে, ইজারার শর্ত অনুসারে গত রাত ১২টার মধ্যে ইজাদারকেই হাটের পরিচ্ছন্নতা কার্যক্রম শেষ করে মাঠ বুঝিয়ে দেওয়ার কথা। কিন্তু কোনো ক্ষেত্রেই তা হয়নি। সিটি করপোরেশনকেই তা করতে হচ্ছে।

রাজধানীর দুই সিটির কর্মকর্তারাই বললেন, স্থানীয় সরকারের এই প্রতিষ্ঠানটির শীর্ষ ব্যক্তিরাই বর্জ্য অপসারণের বিষয়টি তদারক করছেন। কর্মীদের ছুটি বাতিল করা হয়েছে। তাঁদের আশা, প্রত্যাশামতোই যথাসময়ে কোরবানির বর্জ্য অপসারণ করা সম্ভব হবে।