রোহিঙ্গা শিবিরে মলিন ঈদ উৎসব

ঈদের নামাজ আদায় করছেন রোহিঙ্গারা। কুতুপালং রোহিঙ্গা শিবির, উখিয়া, ১২ আগস্ট। ছবি: গিয়াস উদ্দিন
ঈদের নামাজ আদায় করছেন রোহিঙ্গারা। কুতুপালং রোহিঙ্গা শিবির, উখিয়া, ১২ আগস্ট। ছবি: গিয়াস উদ্দিন

প্রতিবছর লাখ টাকার গরু কিনে কোরবানি দিতেন মিয়ানমারের মংডু শহরের বলিবাজারের বাসিন্দা আলী হোসেন (৭২)। কিন্তু দুই বছর ধরে তাঁর ঈদ কাটছে কক্সবাজারের টেকনাফের রোহিঙ্গা শিবিরে

জীবন বাঁচানোর তাগিদে রাখাইন থেকে টেকনাফে চলে আসা আলী হোসেনকে এখন ঈদের খুশি ভাগ করে নিতে হচ্ছে তাঁর মতোই আরও অনেক রোহিঙ্গা শরণার্থীর সঙ্গে। অবশ্য ঈদের খুশি এখন তাঁদের অতীত জীবনের স্মৃতি। নিজ দেশ ছেড়ে শরণার্থীশিবিরে এসে তাঁদের ঈদ উৎসব মলিন হয়ে গেছে বলে মনে করেন আলী হোসেন। তাঁর মতো একই অবস্থা অন্যান্য রোহিঙ্গা শিবিরের অসংখ্য শরণার্থীর।

সরেজমিনে টেকনাফের লেদা, উখিয়ার কুতুপালং, লম্বাশিয়া, বালুখালী ও হাকিমপাড়া রোহিঙ্গা শিবিরে দেখা গেছে, শিশুরা সকাল থেকেই মেতেছে ঈদের আনন্দে। তরুণেরা নতুন পাঞ্জাবি, লুঙ্গি, টুপি পরে মসজিদের উদ্দেশে রওনা হয়েছেন। অতিথি আপ্যায়নে কিছু কিছু পরিবারে সেমাই, পিঠার আয়োজন দেখা গেছে।

সোমবার কক্সবাজারের উখিয়া-টেকনাফের ৩৪টি আশ্রয়শিবিরের রোহিঙ্গারা ঈদের নামাজ আদায় করেন। সকাল আটটায় রোহিঙ্গা শিবিরে সবচেয়ে বড় ঈদের নামাজ অনুষ্ঠিত হয় কুতুপালং ডি-৪ মারকদ মসজিদে। চার হাজার ধারণক্ষমতা হলেও সাড়ে ছয় হাজারের বেশি রোহিঙ্গা এই মসজিদে একসঙ্গে ঈদের নামাজ আদায় করেছেন। ঈদের নামাজে আল্লাহর কাছে তাঁদের প্রার্থনা, রোহিঙ্গা শিবিরের এই জীবন ছেড়ে তাঁরা যেন শিগগিরই রাখাইনে ফিরে যেতে পারেন। বিপদের সময় আশ্রয় দেওয়ায় বাংলাদেশের সরকার ও সাধারণ জনগণের জন্য দোয়া করেছেন বলেও জানান তাঁরা।

কুতুপালং শিবিরের দলনেতা নুর মোহাম্মদ প্রথম আলোকে বলেন, ‘আমরা নিরাপদে রাখাইনে ফিরতে চাই। আল্লাহর কাছে এই প্রার্থনাই করেছি আমরা। বাংলাদেশের মানুষ আমাদের আশ্রয় দিয়ে মানবিকতার পরিচয় দিয়েছে।’

কুতুপালং শিবিরের বাসিন্দা আরিজা বেগম বললেন, ‘ঈদের দিন কপালে ভালো কোনো খাবার জোটেনি। ছোট তিনটি বাচ্চাকে কোনো নতুন কাপড় দিতে পারিনি। ঈদ উপলক্ষে কোনো এনজিও বিশেষ খাবারও দেয়নি।’

কোরবানির মাংস না পাওয়ার আক্ষেপ শোনা গেছে আরও অনেক রোহিঙ্গার কণ্ঠে। এ বিষয়ে জানতে চাইলে শরণার্থী ত্রাণ ও প্রত্যাবাসন কমিশনার (আরআরআরসি) মোহাম্মদ আবুল কালাম প্রথম আলোকে জানান, এবার ১ লাখ ২০ হাজার রোহিঙ্গা পরিবারের মধ্যে কোরবানির মাংস বিতরণ করা হয়েছে। প্রতিটি পরিবারকে দুই কেজি করে মাংস দেওয়া হয়েছে। অন্তত পাঁচ হাজার পশু কোরবানি করে রোহিঙ্গাদের মধ্যে বণ্টন করা হয়েছে। সরকার ও বেশ কিছু বেসরকারি সংস্থা মিলেই এসব পশু কোরবানি দিয়েছে।

কক্সবাজারের জেলা প্রশাসক মো. কামাল হোসেন প্রথম আলোকে বলেন, এ বছর কোরবানির ঈদে রোহিঙ্গাদের মধ্যে মাংস বিতরণ করা হয়েছে। জেলা প্রশাসন ছাড়াও রোহিঙ্গা শিবিরে অবস্থানরত বিভিন্ন এনজিও, সংগঠন এবং ব্যক্তিগতভাবেও কোরবানির মাংস বিতরণ করা হয়।