ঈদের ছুটিতেও পর্যটক নেই কুয়াকাটা সমুদ্রসৈকতে, ক্ষতির আশঙ্কা ব্যবসায়ীদের

ঈদের ছুটিতে পর্যটকের সমাগম নেই, ফাঁকা কুয়াকাটা সমুদ্রসৈকত। ছবি: প্রথম আলো
ঈদের ছুটিতে পর্যটকের সমাগম নেই, ফাঁকা কুয়াকাটা সমুদ্রসৈকত। ছবি: প্রথম আলো

ঈদুল আজহার ছুটিতে প্রতিবারই পর্যটকদের পদচারণে মুখর হয়ে ওঠে পটুয়াখালীর কুয়াকাটা সমুদ্রসৈকত। তবে এবার প্রত্যাশামাফিক পর্যটক আসেননি এই সৈকতে। গত দুদিনের বৈরী আবহাওয়ার কারণে পর্যটকদের আনাগোনা কমে গেছে, এমনটাই মনে করছেন পর্যটনকেন্দ্রিক ব্যবসার সঙ্গে জড়িত ব্যক্তিরা।

আজ মঙ্গলবার কুয়াকাটা সমুদ্রসৈকতে সরেজমিনে দেখা যায়, সৈকতে নেই খুব বেশি পর্যটক। সৈকত ও আশপাশের ব্যবসায়ীরা দোকান সাজিয়ে বসলেও ক্রেতার সংখ্যা একেবারেই হাতে গোনা। ঈদের দিনের মতো আজ দ্বিতীয় দিনেও আশানুরূপ বিক্রি না হওয়ায় হতাশ বিক্রেতারা।

ঝিনুক ব্যবসায়ী মো. শাহিন আলম ও এইচ এম গাফফার বলেন, ‘ভেবেছিলাম ঈদের ছুটিতে পর্যটক আসবেন, ভালো বিক্রি হবে। কিন্তু এবার বিক্রি এতটাই কম যে দোকান খুলে বসে থাকার খরচও ওঠানো যাচ্ছে না। গত বছর কোরবানির ঈদেও দৈনিক ২০-২৫ হাজার টাকার ব্যবসা করেছিলাম। এবার ব্যবসার অবস্থা একেবারেই খারাপ।’

কুয়াকাটা রাখাইন মার্কেটের ব্যবসায়ী সমিতির সভাপতি মো. নিজাম উদ্দিন হাওলাদার বলেন, ‘বছরের দুটি ঈদ এবং শীত মৌসুমে পর্যটকদের আগমনের ওপর কুয়াকাটার পর্যটননির্ভর ব্যবসা-বাণিজ্য নির্ভর করে। এসব উৎসবেও যদি পর্যটক না আসেন, তখন ব্যবসায়ীদের হতাশ হওয়া ছাড়া আর কিছু করার থাকে না। এবারের ঈদে বিক্রি হয়নি বললেই চলে। এতে প্রত্যেক ব্যবসায়ী আর্থিকভাবে ক্ষতির মুখে পড়বেন।’

শুধু ক্ষুদ্র ব্যবসায়ীরা নন, পর্যটকের সংখ্যা কমে যাওয়ায় চিন্তিত হোটেল ব্যবসায়ীরাও। কুয়াকাটার হোটেল-মোটেল ওনার্স অ্যাসোসিয়েশনের সাধারণ সম্পাদক মোতালেব শরীফ প্রথম আলোকে বলেন, কুয়াকাটায় ছোট-বড় মিলিয়ে ৭০টির মতো আবাসিক হোটেল-মোটেল আছে। এবারের ঈদে পর্যটকদের সেবা দেওয়ার জন্য প্রতিটি হোটেলই প্রস্তুতি নিয়ে রেখেছিল। হোটেলগুলোর অর্ধেকের বেশি রুম বুকিং হয়েছিল। কিন্তু শেষ মুহূর্তে বৈরী আবহাওয়ার কারণে পর্যটকদের সংখ্যা কমে গেছে।

আশানুরূপ পর্যটক না থাকায় লোকসানের আশঙ্কা করছেন সৈকতের ক্ষুদ্র ব্যবসায়ীরা। ছবি: প্রথম আলো
আশানুরূপ পর্যটক না থাকায় লোকসানের আশঙ্কা করছেন সৈকতের ক্ষুদ্র ব্যবসায়ীরা। ছবি: প্রথম আলো

কুয়াকাটা গ্র্যান্ড হোটেল অ্যান্ড সি রিসোর্টের ফ্রন্ট অফিস এক্সিকিউটিভ মো. শাওজিদ ইসলাম বলেন, আজ মঙ্গলবার ৪২টি কক্ষের মধ্যে মাত্র ১২টি কক্ষ ভাড়া হয়েছে। তবে আগামীকাল ২৫টির মতো কক্ষ বুকিং হয়েছে। পর্যটকদের আকৃষ্ট করতে প্রতিটি কক্ষের ভাড়ায় ২৫ শতাংশ ছাড় দিচ্ছেন তাঁরা। এ ছাড়া পর্যটকদের বিনা মূল্যে সকালের নাশতাও দিচ্ছেন তাঁরা।

কুয়াকাটার একাধিক আবাসিক হোটেলের ব্যবস্থাপক বলছেন, এরই মধ্যে ঈদের ছুটির তিন দিন চলে গেছে। আগামী রোববার থেকে সব অফিস খুলে যাবে। সামনের চার দিন যদি কিছু পর্যটক আসেন, তাহলেও কিছুটা লাভবান হওয়া যাবে।

কুয়াকাটা পৌরসভার প্যানেল মেয়র মো. শাহ আলম হাওলাদার প্রথম আলোকে বলেন, ‘কুয়াকাটায় জনস্বাস্থ্য, পানি বিশুদ্ধকরণ, ড্রেনেজ ব্যবস্থার উন্নয়নের কাজ চলছে। এ ছাড়া কুয়াকাটায় বেড়াতে আসা পর্যটকদের জন্য পার্ক নির্মাণ, আকর্ষণীয় স্থানের শোভা বর্ধন, সৈকত এলাকাসহ বিভিন্ন সড়কে বৈদ্যুতিক বাতি লাগানোসহ বিদ্যুৎ ব্যবস্থার উন্নয়ন করা হবে। এর ফলে কুয়াকাটা দেশি-বিদেশি পর্যটকদের কাছে একটি আকর্ষণীয় ও বিনোদনের জায়গা হিসেবে চিহ্নিত হবে।’